দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল। খাবার খাওয়ার সময় নেই। একটার পর একটা ক্ষ্যাপ নিয়ে যাচ্ছে দুলাল মিয়া। দুলাল মিয়া একজন অটো চালক। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অটোটা কিনেছিলো। ঋণ এখনো পরিশোধ হয়নি। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয়। কয়েক মাস গেলে কিস্তি শেষ হয়ে যাবে। তখন আর ঝামেলা থাকবে না। কিন্তু দুলাল ও তার পরিবারের জন্য এক ভয়ানক ঝামেলা অপেক্ষা করছে। এ সম্পর্কে দুলালের স্ত্রী ও সন্তানরা কিছুই জানে না। কিন্তু দুলাল জানে। দুলালের শরীরে ভয়ঙ্কর অসুখের বসবাস। অসুখের নাম ক্যান্সার। সকলের অগোচরে দুলাল চোখের জল ফেলে। সুন্দর পৃথিবীর আলো-বাতাস আর বেশি দিন দেখা হবে না। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে। কিছুদিন পরে এরা পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান আশ্রয়টি হারিয়ে ফেলবে। তখন এদের অবস্থা কী হবে। এই ভেবে চোখের জল ফেলে দুলাল। পুরুষ মানুষ বড়ই স্বার্থপর। এদের ভিতরে এক আর বাহিরে অন্য। ভিতরটা বড্ড নরম। আর বাহিরে কেবলই শক্ত যেন একটা পাথর। এরা সকলের অগোচরে কাঁদে। কারো কারো চোখের জলে তৈরি হয় মহাসমুদ্র। কারো কারো কষ্টে ভিতরটা হয় ধূ ধূ মরুভ‚মি। দুলাল মিয়ার যেন দুটিই হয়েছে। ভেতরে মরুভূমি আর বাইরে মহাসমুদ্র। 
জীবনের শেষ দিনগুলো সন্তানদের কাছাকাছি থেকে অতিবাহিত করতে চায় দুলাল। কিন্তু তা হয়ে ওঠে না। সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করতে হয়। সকালে যখন ঘর থেকে বের হয় তখন বাচ্চারা ঘুমিয়ে থাকে। আবার রাতে যখন ঘরে ফেরে তখন বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়ে। একটা সিদ্ধান্ত নিল। আজ বিকেলে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে বের হবে। নিজের গাড়িতে করে পুরো এলাকা ঘুরবে। তাই আজ আর ক্ষ্যাপ নয়। গাড়ি নিয়ে সরাসরি বাড়িতে চলে এলো। দুলাল মিয়ার কোন জমিজমা নেই। শুধু একখানা ঘর। আর ঘরের সামনে এক টুকরো উঠোন। উঠোন এর একপাশে গাড়ি রাখল দুলাল। দুলাল মিয়ার স্ত্রী মাজেদা বেগম উঠোনের একপাশে বেগুন গাছের চারা বুনছে। স্বামীকে দেখে বলল, “আজ এত তাড়াতাড়ি আসলে, শরীর খারাপ না কি?” দুলাল বলল, “শরীর খারাপ না, আজ তোমাদের নিয়ে ঘুরতে যাব।” স্বামীর মুখে এমন কথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না মাজেদা বেগম। তাই একটু মুচকি হাসলেন। স্ত্রীর মুচকি হাসির মুখের দিকে তাকিয়ে দুলাল একটা নিঃশ্বাস ফেলল। কী মায়া ভরা মুখ! অথচ এই মুখ আর বেশি দিন দেখা হবেনা। মাজেদা বলল, “হাত মুখ ধুয়ে আসেন, আমি খাবার দিচ্ছি।” দুলাল ছেলেমেয়েদের খুঁজতে লাগলেন। দুলাল ও মাজেদা দম্পতির দুই সন্তান। এক মেয়ে এক ছেলে। মেয়ের নাম আয়শা। এবার ক্লাস সিক্সে উঠেছে। সংসারে মায়ের কাজে সবসময় সাহায্য করে আয়শা। আর ছেলের নাম সজীব। বয়স দুই বছর। দুলাল মিয়া ছেলেকে কোলে নিয়ে আদর করলেন। সজীব এর মুখে কেবল কথা ফুটেছে। সারাদিন শুধু নানান ঢংঙে কথা বলে। দুলাল মিয়ার চোখে অনেক স্বপ্ন। ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তুলবে। একদিন বড় হয়ে অনেক বড় অফিসার হবে। কিন্তু এ স্বপ্ন যে স্বপ্নই থেকে যাবে তা দুলাল মিয়া টের পাচ্ছেন। 

আয়শা স্কুল থেকে এখনো ফিরেনি। একটু পরেই হয়তো এসে পড়বে। মেয়েটা লেখাপড়ায় বেশ ভালো। মেয়েকে ডাক্তার বানাতে চান দুলাল মিয়া। মাজেদা বেগম ভাত বাড়ছেন। হোগল পাতার চাটাই পেতেছে বারান্দায়। খোলা বাতাসে বসে খাবার খাওয়ার মাঝে যে প্রশান্তি আছে তা শুধু গ্রামের মানুষ অনুভব করতে পারে। শহরের পরিবেশে এটা সম্ভব নয়। খেসারি ডালের ভর্তা ও শিম ভাজি করেছেন মাজেদা বেগম। দুলাল মিয়া ডাল ভর্তা খুব পছন্দ করেন। সজীব এখনো নিজের হাতে খেতে শেখেনি। আজ দিনভর ছেলেকে আদর করবেন দুলাল। তাই ভাত মেখে প্রথমে ছেলেকে খাওয়াতে লাগলেন। মাজেদা বেগম বলল, সজীবকে আমি খাইয়ে দিই, আপনি আপনারটা খান। স্ত্রীর কথায় কান দিলেন না দুলাল। অন্তরে যেন একটা তীব্র ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। দুলাল মনে প্রাণে আল্লাহর কাছে নিজের জন্য ফরিয়াদ করছে-আল্লাহ এই মাছুম বাচ্চার জন্য আমি বাঁচতে চাই। বাঁচতে চাওয়ার আবদার সৃষ্টিকর্তার কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা তিনিই ভালো জানেন। জীবনের জন্য প্রতিটি প্রানিরই সীমাহীন মায়া। এ মায়ার কোন বিনিময় হয়না। আয়শা স্কুল থেকে এসেছে। এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরেছে। পৃথিবীতে সবকিছু উপেক্ষা করা গেলেও সন্তানের ভালোবাসা কখনো উপেক্ষা করা যায় না। এটা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত এক অদৃশ্য শক্তি। স্কুলের ব্যাগ রেখেই বাবা-মায়ের সাথে খেতে বসলো আয়শা। খাওয়া শেষে সবাই মিলে ঘুরতে বের হলো। বাবার গাড়িতে এভাবে কোথাও যাওয়া হয়নি আয়শা ও সজীবের। আজই প্রথম। তাই আয়শা খুবই আনন্দিত। সজীব হয়তো এই আনন্দ অনুভব করতে পারছে না। 

দুলাল মিয়ার তার গাড়ি নিয়ে নদীর পাড়ে এসেছেন। নদীর পাড়ে মনোরম পরিবেশ। মৃদু বাতাস বইছে। নদীর পাড়ে উচু বেড়িবাধ আছে। সন্তানরা এখানে খেলছে। মাজেদা বেগম ও দুলাল মিয়া রাস্তার নরম ঘাসের উপর বসে গল্প করেছেন। মাজেদার জীবনে মনে হয় এটাই শ্রেষ্ঠ সময়। বিবাহিত জীবনে স্বামীকে যেন আজ খুব কাছে পেয়েছেন। এর চেয়ে আনন্দ, এর চেয়ে ভাল লাগা আর হয় না। সূর্যটা ধীরে ধীরে লাল হয়ে এলো। একটু পরেই নিভে যাবে সব আলো। অন্ধকারে ছেয়ে যাবে চারপাশ। মানুষের জীবনের সাথে এই আলো আঁধারের বড্ড মিল।
দুলাল মিয়া স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলেন। জ্বরটা যেন হঠাৎ করে বেড়ে গেল। কাশি যেন থামানো যাচ্ছে না। মাজেদা বেগম স্বামীর দিকে তাকিয়ে রইলেন।

দুলাল মিয়া উঠোনোর কোনে গাড়িটি রাখলেন। কারো সাথে কিছু না বলে ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। সজীব ও আয়শার ছোট মুখখানা মলিন হয়ে গেল। মাজেদা বেগম স্বামীর গায়ে কাঁথা টেনে দিলেন। হাত দিয়ে কপাল ছুঁয়ে জ্বর বুঝতে চেষ্টা করলেন। জ্বরে যেন সমস্ত শরীর পুড়ে যাচ্ছে।

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হল। ছেলে মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। মাজেদার চোখে ঘুম নেই। স্বামীর পাশে বসে রইলেন। দুলাল বললেন, তুমি ঘুমাও আমার জ্বর কমে যাবে। তুমি চিন্তা করো না।
মাজেদা বললেন, এ রকম তো প্রায়ই জ্বর হয় আপনার। এটা খারাপ লক্ষণ। কালকে ডাক্তারের কাছে যাবেন। স্ত্রীর কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন দুলাল। গভীর ঘুমে অচেতন সজীব ও আয়শা। এই পবিত্র মুখ দুখানায় হাত বুলালেন দুলাল। চোখ থেকে ঝর ঝর করে পানি বেড়িয়ে এল। দুলাল উঠে বসলেন। স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন, “মাসখানেক আগে ঢাকায় গিয়েছিলাম, তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই। আমার শরীরে প্রচন্ড জ্বর ছিল। তখন ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। ডাক্তার বলেছে আমার ক্যান্সার হয়েছে।” মাজেদা যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা। বাকরুদ্ধ হয়ে স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছে। দুলাল কান্নাজড়িত কন্ঠে বললেন, “আমি তো বাঁচবো না, আমার ছেলে মেয়ের কী হবে? তোমার কী হবে?” মাজেদা চোখের পানি মুছে বললেন, আবার ডাক্তার দেখাবেন। ঠিকমতো ঔষধ খাবেন। আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন। একদম চিন্তা করবেন না। সে রাতে চোখের পাতা এক করতে পারেনি দুলাল ও মাজেদা।

সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হলো আয়শা। দুলাল মিয়ার শরীরটা বড্ড খারাপ। তাই আজ আর গাড়ি নিয়ে বের হননি। মাজেদা হাঁস মুরগিকে খাবার দিচ্ছেন। দুলাল মিয়া আয়শাকে ডেকে বললেন, মা আজ স্কুলে যেতে হবে না। তুই একটু আমার পাশে থাক। স্কুলে যেতে হবে না শুনে আয়শার খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু খুশি হলো না। বাবার শরীর খারাপ থাকলে আয়শার কোন কিছু ভাল লাগেনা।

দিনে দিনে গুরুতর অসুস্থ হচ্ছে দুলাল। ঔষধও খাচ্ছে কিন্তু তাতে ভালো কোন ফল পাচ্ছে না। ঢাকাতে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে চায় দুলাল। কিন্তু দীর্ঘদিন ঘরে বসে থাকাতে খাবার জোগাড়েই এখন হিমশিম খেতে হয়। প্রতি সপ্তাহে এক হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। ইতোমধ্যে তিন সপ্তাহের কিস্তি বাকি পড়েছে। এনজিওর লোক এসে নানান কথা বলে গেল। আত্মীয়-স্বজন যারা আছে তারাও খুব একটা এগিয়ে আসে না। গরীব মানুষের আত্বীয়ের সংখ্যা কম থাকে। এদের সাথে সহজে কেউ নতুন করে সম্পর্ক করতে চায় না। পুরাতনরাও ধীরে ধীরে দূরে চলে যায়।
ধার-কর্য করে কোনরকম দিন যাচ্ছে দুলাল ও মাজেদার। ঢাকার ডাক্তারের সাথে মোবাইলে কথা বলেছিল দুলাল। ডাক্তার ঢাকা যেতে বলেছে। থেরাপি দিলে না কি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সে তো অনেক টাকার ব্যাপার। পঞ্চাশ হাজার টাকা দামে অটো গাড়িটিকে বিক্রি করল দুলাল। হাজার দশেক টাকা দিয়ে ধার পরিশোধ করেছে। কিছু টাকা এনজিওতে দিয়েছে। কিছু টাকা দিয়ে চাল, ডাল ও ঔষধ কিনেছে। হাতে আছে হাজার পাঁচেক টাকা।

আয়শা এখন আর স্কুলে যায় না। সারা দিন মনমরা হয়ে বাবার বিছানার পাশে বসে থাকে। মাঝে মাঝে সকলের অগোচরে চোখের জল ফেলে। সজীব বাবার বিছানার পাশে বসে খেলা করে। আর মাজেদা বেগম স্বামীর সেবা করে ও সংসারের অন্যান্য কাজ করে।

দুলাল মিয়া এখন আর বিছানা থেকে একদম উঠতে পারে না। জীর্ণ শরীরটা যেন বিছানার সাথে লেগে আছে। সজীব প্রায়ই বাবার বুকের উপর শুয়ে থাকে। বাবার চোখে মুখে হাত বুলিয়ে দেয়। মাজেদা বেগম কখনো দুলালের সামনে বসে কাঁদে না। রোগীর সামনে বসে কাঁদলে রোগী আরো দুর্বল হয়ে যায়। যখন খুব বেশি কান্না পায় তখন দৌড়ে পুকুরঘাটে যায়। মনের সাধ মিটিয়ে কাঁদা যায় এখানে। কান্না শেষে পুকুরের পানিতে চোখ মুখ ধুয়ে নেয় মাজেদা। এসব কান্নাকাটি সকলের চোখের আড়ালে হলেও আয়শার চোখে কখনো এড়ায় না। আয়শা সবকিছু দেখতে পায়।

একদিন গভীর রাতে দুলাল বললো, “মাজেদা আমার একটা কথা রাখবা?” মাজেদা স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল, জ্বি বলেন। “আমি মরে গেলে তুমি আবার বিয়ে করো, যাতে আমার সন্তান দুটি পিতৃহারা না হয়।” কথাটি বলে দুলাল অঝোরে কাঁদতে লাগল। এ কান্না যেন সারা জীবনের দুঃখকে হার মানায়। এ কান্না যেন একজন স্বামীর অসহায় আত্মসমার্পণ। স্বামীর কথা শুনে মাজেদা বলল, এসব কী বলছেন আপনি? অসুখ হলেই কি মানুষ মারা যায়? আপনি আর কয়েক দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যাবেন। দুলাল চায় মাজেদার কথা সত্যি হোক। মাজেদার কথাকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে চায়। কিন্তু দুলালের শরীরে কী যে অসহ্য যন্ত্রণা তা দুলাল ছাড়া আর কেউ জানে না।

দুলালের কাছে সকাল-সন্ধ্যা একই। বিছানায় পড়ে আছে দীর্ঘ আড়াই মাস। গ্রামের মানুষের সাহায্যে দিন চলে এখন। মাজেদা বেগম মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। বিনিময়ে প্রতিদিন দুই তিন কেজি চাল জোটে।

একদিন দুপুরে আয়শা কী যেন কাজ করছে। দুলালের পানির পিপাসা পেয়েছে। আয়শাকে ডেকেছে কয়েকবার। আয়শা শুনতে পায়নি। না শোনারই কথা। কারণ দুলালের গলা থেকে কোন আওয়াজ বের হয়না। গলাটা একদম ভেঙে গেছে। মাজেদা বেগম বাড়িতে নেই। কাজে গেছেন। সজীব উঠোনে বসে খেলছে। দুলাল পানি পান করার জন্য হাত পা ছুড়ছেন। জোরে চিৎকার করছে কিন্তু কোন শব্দ বের হচ্ছে না। মুখ থেকে গড় গড় করে আওয়াজ বের হচ্ছে। কিন্তু সে আওয়াজ আয়শার কান পর্যন্ত পৌঁছায় না। একটা সময় দুলালের গোঙানির আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। হয়তো পানির পিপাসা মিটে গেছে। দুলালের টকটকে লাল চোখ দুটি জানালা ভেদ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে কোন পলক নেই। মুখ থেকে সাদা ফেনা বের হয়ে বুকটা একদম ভিজে গেছে। কিছুক্ষণ পর আয়শা ঘরে এসে বাবার দিকে তাকাল। দেখল বাবার বুকটা একদম ভেজা। বাবা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। গামছা দিয়ে বাবার বুকটা মুছে দিল। কিন্তু বাবা এখনো জানালার দিকেই তাকিয়ে আছেন। শরীরটা কেমন যেন শক্ত মনে হচ্ছে। আয়শা কয়েকবার ডাকলো, আব্বা আব্বা। কিন্তু দুলাল মিয়া সাড়া দেয় না। আয়শা চিৎকার দিয়ে ডাকলো কয়েকবার। চিৎকার শুনে পাশের বাড়ি থেকে লোকজন এসেছে। তারা বুঝতে পেরেছে দুলাল আর এই পৃথিবীতে নেই। এদের মধ্যে একজন দৌড়ে গেল মাজেদার কাছে খবর পৌঁছাতে। পাশের বাড়ির লোকদের মুখের দিকে তাকিয়ে আয়শাও বুঝতে পেরেছে যে ওর বাবা আর বেঁচে নেই। আয়শা কী করবে বুঝতে পারছে না। দৌড়ে উঠোনে নামল। ছোট ভাইকে কোলে নিয়ে আবার বাবার কাছে এলো। ইতিমধ্যে আরো কয়েকজন লোক এলো পাশের বাড়ি থেকে। বাবাকে ধরে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে লাগল আয়শা। কান্না দেখে উপস্থিত লোকজন কেউই চোখের পানি আটকাতে পারলনা। খবর শুনে মাজেদা বেগম দৌড়াচ্ছে। শাড়ির আঁচল খুলে পড়েছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই। তাঁর স্বামী আর পৃথিবীতে নেই। একজন স্ত্রীর জন্য এটা কত বড় দুঃসংবাদ তা বলে বোঝানো যাবে না। ঘরের মধ্যে ঢুকে সজীবকে বুকে টেনে নিল মাজেদা। মাটিতে গড়াগড়ি করে কাঁদছে আয়শা। সজীব কিছু করছে না। ঘরে এত লোক একসাথে কখনো দেখেনি সজীব। তাই একটু অবাক হয়েছে। একবার মায়ের দিকে আরেকবার বোনের দিকে তাকায়। সজীব জীবনের তরে কী হারিয়ে ফেলল তা জানে না। একদিন হয়তো সবকিছু বুঝবে। কিন্তু সেদিন এসব ঘটনা ওর কাছে আবছা স্মৃতির মত মনে হবে।

লোকজন দুলালকে দাফনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে লাগল। উঠোনে কবর খোড়া হল। মৃত মানুষ ও জীবিত মানুষের মধ্যে কতটুকু পার্থক্য? শুধু শ্বাস-প্রসাসের পার্থক্য। মানুষের সকল অহংকার, বড়াই এই একটি জায়গায় এসে থেমে যায়। এখানে কারো প্রভাব খাটানোর সুযোগ নেই। মানুষের জীবন মূলত মৃত্যুর কাছে দায়বদ্ধ। একসময় এই দায়বদ্ধতার জালে সবাইকেই আটকা পড়তে হয়। 

দুলাল মিয়ার মৃত্যুর দুদিন পর্যন্ত পাশের বাড়ির লোকজন খাবার দিয়েছে। আজ চতুর্থ দিন। কোন বাড়ি থেকে খাবার আসে না। এবার নিজেদেরটা নিজেদেরই সামলাতে হবে। ঘরের এক কোণে বসে আছে মাজেদা বেগম। বয়সটা যেন হঠাৎ বেড়ে গেল। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। আয়শা যেন শরীরে কোন শক্তি পাচ্ছে না। বাবার বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে আছে। সজীব ঘরের কোণে বসে খেলছে। কোন কিছু বুঝতে না পারার মধ্যে এক ধরনের সুখ আছে। সেই সুখেই দিন পার করছে সজীব। 

মাজেদা বেগম খুব শীঘ্রই শোক কাটিয়ে উঠতে পারবেন। কারণ সৃষ্টিকর্তা গরিব মানুষকে এমন এক মন দিয়ে তৈরি করেছেন যে মনে শোকের কোন স্থান নেই। আছে টিকে থাকার অদম্য লড়াই। মাজেদা বেগম আবারও লড়াই করতে নেমেছেন। এ বাড়ি ও বাড়ি কাজ করেন দিনভর। আয়শা এখন আর স্কুলে যায় না। সারা দিন ছোট ভাইকে নিয়ে ঘরেই থাকে। সংসারের টুকটাক কাজ করে। আর সময় পেলেই বাবার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।

ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হতে লাগল। এনজিও কর্মী বার বার বাড়িতে এসে কিস্তির জন্য তাগাদা দেয়। অন্যান্য পাওনাদাররা চুপচাপ বসে নেই। কিন্তু মাজেদার কাছে তো এক পয়সাও নেই। এনজিও কর্মীকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে- এখন কোন টাকা পয়সা দিতে পারব না। কিন্তু গ্রামের পাওনাদারদের বুঝানো যাচ্ছে না। কেউ ঘরের টিন খুলে নিতে চায়। আবার কেউ ঘরের সামনের জমি দখল করতে চায়। মাজেদা বেগম কী করবেন বুঝতে পারেন না। মাঝে মাঝে সবকিছু ছেড়ে অনেক দূরে চলে যেতে ইচ্ছে করে।

একদিন রাতে এনজিও কর্মী আলতাফ হোসেন এসে হাজির। মাজেদাকে বললেন, ভাবী কেমন আছেন? সংসার কেমন চলছে? দুলাল মিয়া বেঁচে থাকতে লোকটি মাজেদাকে আপা বলে ডাকতেন। আর এখন ডাকছেন ভাবী বলে। বিষয়টা মাজেদা লক্ষ্য করেছে। আলতাফ মিয়া তাঁর কিস্তির ব্যাপারে কোন কথা বলছে না। অন্যান্য বিষয়ে অনেক কিছু বলছে। ভাবী মেয়েকে স্কুলে পাঠান না কেন? মেয়ে মানুষ স্কুলে না পাঠালে বিয়ে দিবেন কী করে? মাজেদা বেগম কোন উত্তর দিচ্ছে না। রাত ন’টা বাজে। এতরাতে এনজিও কর্মীর তো এখানে কোন কাজ থাকার কথা নয়। তবুও এ বাড়িতে কেন এসেছে? এ প্রশ্ন যে কেউই করতে পারে। তাই মজেদা বেগম বললেন, “আলতাফ স্যার আপনি এখন যান, টাকা পয়সা জোগাড় হলে আমি দিয়ে দিব।” আলতাফ হোসেন বললেন, কি যে বলেন ভাবী? আমিতো টাকার জন্য আসিনি। এমনি আপনাদের খোঁজ খবর নিতে আসলাম। মাজেদা বেগমের এখন কী বলা উচিত? বলা উচিত-আপনাকে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য আমি ডেকেছি? এই মুহূর্তে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। কিন্তু মাজেদা বেগম তা না বলে চুপ থাকলেন। কিছুক্ষণ পরে আলতাফ হোসেন চলে গেলেন। 

সজীব ঘুমিয়েছে। আয়শা বিছানা ঠিকঠাক করছে। আর মাজেদা বেগম জ্বলন্ত হারিকেনের দিক তাকিয়ে কী যেন ভাবছে। একটু পরে পাশের বাড়ির শাহিন মিয়া হাজির। সম্পর্কে মাজেদার চাচা শ্বশুর। দুলাল মিয়া বেঁচে থাকতে আচরণটা শ্বশুরের মত ছিল। আর এখন আচরণটা দেবরের মত। শাহিন মিয়া বললেন, কী খবর মাজেদা কেমন আছো? আজকে কী রান্না করেছো? মাজেদা বেগম মুখে বিরক্তি ভাব নিয়ে বললেন, ডাল ভাত। রাত দশটা বাজে। এত রাতে শাহিন মিয়ার এখানে কোন কাজ নেই। তবুও নির্লজ্জের মতো এখানে বসে আছে। দুলাল মিয়া যখন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়েছিলেন তখন একবারের জন্যেও দেখতে আসেনি। এখন এত দরদ কিসের? এসব খুব উঁচু গলায় বলতে ইচ্ছে করে মাজেদার। কিন্তু বলতে পারে না। বিধবা মহিলারা যা মুখে আসে তা বলতে পারে না। সমাজ তাদের হয়ে কথা বলে না। সমাজ সব সময় বিত্তবানদের পক্ষে। দীর্ঘ সময় বসে থেকে চলে গেলেন শাহিন মিয়া। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? প্রতি রাতে একজনের পর একজন বসে থাকে। মাজেদা বেগম এখন কী করবেন। কারো কাছে নালিশ করারও সুযোগ নেই। বরং এতে হিতে বিপরীত হবে।

সন্ধ্যার পরে মাজেদার ঘরে বাইরে থেকে লোক আসে খবরটি পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়লো। যে বাড়িতে কাজ করতো তারা মাজেদাকে বের করে দিয়েছে। তাদের চোখে মাজেদা দুশ্চরিত্রা। এমন দুশ্চরিত্রা মহিলাকে কেউ কাজে নিতে চায় না। এ কেমন বিপদে পড়লো মাজেদা? রাস্তা ঘাটে মুখ দেখাতে পারে না। অথচ যারা বাড়িতে খোঁজ খবর নিতে আসে তাদের কোনো দোষ নেই। মাজেদা বেগম যেন তাদেরকে ডেকে আনেন। 

ধীরে ধীরে মাজেদার জীবন জীবন দুর্বিষহ হতে লাগল। প্রায়ই অনাহারে দিন কাটে। আয়শা ও সজীবের মুখের দিকে তাকাতে পারে না মাজেদা। কলিজার টুকরা সন্তানরা আজ না খেয়ে দিন কাটায়। ক্ষুধার জ্বালায় সজীব প্রায়ই কান্নাকাটি করে। একজন মায়ের জন্য এর চেয়ে বেদনার আর কিছু হতে পারে না। সজীবের কান্না দেখলে মাজেদার অন্তরটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? 

মাজেদার বাবার বাড়িতে কেউ নেই। বড় দুই ভাই আছে। তারা অনেক আগে থেকেই যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই আর কোন কূল কিনারা না পেয়ে মাজেদা গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার চিন্তা করল। ঢাকায় গিয়ে কাজ করে ছেলে মেয়ের মুখে আহার তুলে দিবেন মাজেদা। এই গ্রামে আর এক মুহুর্তও নয়।
                               ২

ইট পাথরের ঢাকা শহরে মাজেদার আপন কেউ নেই। বহু কষ্টে গার্মেন্টসে একটা চাকরি জোগাড় করেছেন। ছয় হাজার টাকা বেতন। দুই হাজার টাকা ঘর ভাড়া। বাকি চার হাজার টাকা দিয়ে পুরো মাস চলতে হয়। ধার-কর্যও করতে হয় মাঝে মাঝে। সজীব আরেকটু বড় হলে আয়শাকেও কাজে নামিয়ে দিবেন। তখন মা ও মেয়ের আয়ে সংসারে কোন অভাব থাকবে না। 

সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অফিসে কাজ করতে হয় মাজেদাকে। আয়শা বাসায় থাকে। সজীবের দেখাশুনা করে ও রান্না বান্না করে।

অফিস থেকে ফেরার পথে মাজেদার সাথে একটা লোক প্রায়ই বাসায় আসে। লোকটির নাম সেলিম মিয়া। মাজেদার সাথে একসাথে কাজ করে। বাসায় আসার সময় আয়শা ও সজীবের জন্য বিস্কুট চিপস ইত্যাদি নিয়ে আসে। সেলিম মিয়ার মতলব বুঝতে পেরেছেন মাজেদা। সবকিছু বুঝেও চুপ থাকেন মাজেদা। চুপ থাকা একধরনের অসহায়ত্ব অথবা এক ধরনের সম্মতি। সেলিম মিয়া নানাভাবে মাজেদাকে সহযোগীতা করে। টাকা পয়সা ধার দেয়। প্রয়োজনে বাজার করে দেয়। ছুটির দিনে ফল ফলাদি নিয়ে বেড়াতে আসে। বেশ আনন্দে দিন কাটছে মাজেদার। সেলিম মিয়ার স্ত্রী ও সন্তান আছে। তারা গ্রামে থাকে।

একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে সেলিম মিয়া বিশটা এক হাজার টাকার নোট মাজেদার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, টাকাগুলো তোমার কাছে রাখো। আমার কাছে থাকলে খরচ হয়ে যাবে।
মাজেদা বেগম অবাক হয়ে ভাবলো। “লোকটি আমাকে এত বিশ্বাস করে।”
বিশ্বাস একটি অদৃশ্য ব্যাপার। যা সাদা চোখে দেখা যায় না। পৃথিবীতে যারাই বিশ্বাস ভঙ্গ করে আমরা তাদেরকেই বেশি বিশ্বাস করি। কারণ অবিশ্বাসীরা দেখতে ঠিক বিশ্বাসীদের মত। 

মাজেদার মনের মধ্যে সেলিম মিয়ার জন্য অনেকখানি জায়গা তৈরি হল। মেয়ে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য একজন অবলম্বন দরকার। এই অবলম্বনটি যদি একজন পুরুষ হয় তবে বেঁচে থাকাটা খুব সহজ হয়।

সেলিম মিয়া একদিন মাজেদাকে বললেন, “ছেলে মেয়েকে নিয়ে এত কষ্ট না করে চল একসাথে থাকি”।
মাজেদা বেগম অবাক হয়ে বললেন,
“লোকজন কী বলবে?”
সেলিম মিয়া একটু হেসে বললেন, “লোকজন যাতে কিছু বলতে না পারে সে ব্যবস্থা করেই একসাথে থাকবো।”
কয়েকদিন পর সেলিম মিয়া সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিল মাজেদাকে।
মাজেদা এখন কী বলবে বুঝতে পারে না। তবে বেঁচে থাকার জন্য যে অবলম্বন দরকার তা বুঝতে পেরেছে।

জীবনে একটু সুখের আশায়, ভালভাবে বেঁচে থাকার আশায়, সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে মাজেদা বেগম দ্বিতীয় বিয়ে করতে রাজি হলেন।
প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলেন সেলিম মিয়া। আয়শা সেলিম মিয়াকে মামা বলে ডাকতো। কিন্তু এখন কী বলে ডাকবে? মাজেদা বেগম বলছে, “ওনাকেও আব্বা বলে ডাকবি।” কিন্তু মুখে ডাক আসলেও অন্তরে বাবার স্থান দেওয়া সম্ভব নয়।

জীবনে যে এত সুখ আসবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি মাজেদা। স্বামী-স্ত্রী দুজন চাকরি করে। দুজনের টাকায় সংসার খুব ভালই চলছে। সেলিম মিয়ার গ্রামের সংসার কেমন চলছে তা মাজেদা জানতে চায় না।মাজেদা শুধু নিজেরটাই জানতে চায়। সুখের আশায় একজন মানুষ কখন যে স্বার্থপর মানুষে পরিণত হয় তা সে নিজেও জানে না।

আয়শা ওর মা ও নতুন বাবার জন্য রান্না করে রাখে এবং সজীবকে দেখে রাখে। বাকি সময় বাসার পাশে একা একা দাঁড়িয়ে থাকে।

একদিন বিকেলে সেলিম মিয়া অফিস থেকে চলে এসেছে। মাজেদা বেগম এখনো আসেনি। আয়শা খাবার বেড়ে দিল। সজীব ঘুমাচ্ছে। আয়শা লক্ষ্য করলো ওর নতুন বাবা কেমন করে যেন তাকায়।
এভাবে আয়শার দিকে কেউ কখনো তাকায়নি। আয়শা ভয় পেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে রইলো।

মাজেদা বেগম আগের মত মেয়ের প্রতি খেয়াল রাখার সুযোগ পায় না। অবশ্য খেয়াল রাখার প্রয়োজনও নেই। আয়শা সংসারের সব কাজ করে নিজেকে গুছিয়ে রাখতে পারে। সেলিম মিয়ার এই নজর প্রায়ই আয়শা লক্ষ্য করে। আয়শার কী করা উচিত তা বুঝতে পারেনা। মায়ের কাছে বললে সমাধান হবে কি না কে জানে?

দুলাল মিয়া মারা গেলেন দুই বছর হল। এই দুই বছরে কত কিছুর পরিবর্তন হল। মাজেদার সুখের সংসার হল। আয়শা ও সজীবের নতুন বাবা হলো। কিন্তু কেন যেন প্রকৃত শান্তি নেই এ সংসারে। কেমন যেন একটা অস্বস্তির ছাপ সবার মাঝে।

একদিন সন্ধ্যায় আয়শা রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে রান্না করছে। মাজেদা বেগম এখন অফিস থেকে ফিরেনি। সেলিম মিয়া রান্না ঘরে এসে আয়শার পাশে দাঁড়ালেন। এত কাছে দাঁড়ালেন যে আয়শার ভয় লাগছে। এ রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটতে লাগলো। নতুন বাবার মতলব ভালো নয়। সুযোগ পেলেই গা ঘেষে দাঁড়ান। মায়ের কাছে এসব ঘটনা বলতে চায় আয়শা। কিন্তু পরক্ষনেই মায়ের সংসারের কথা মাথায় আসে। এসব কথা মা জানালে মায়ের সংসার ভেঙে যাবে। মাকে না বললেও তো এ ঘটনার পুনুরাবৃত্তি ঘটবে। আয়শা এসব ভাবতে লাগলো। এর চেয়ে এই সংসার থেকে নিজেকে আড়াল করলেই সবাই বেঁচে যাবে। তাই আয়শা নিজেকে আড়াল কীভাবে করা যায় তাই ভাবছে।

একদিন রাতে বাবার কথা খুব মনে পড়ছে আয়শার। এই সংসারে আয়শা একজন অতিরিক্ত মানুষ। তাই অতিরিক্ত মানুষ হয়ে থাকার চেয়ে এখান থেকে চলে যাওয়াই উত্তম। এসব ভেবে মায়ের উদ্দেশ্যে একটা চিঠি লিখলো আয়শা।

মা,

এখানে আমার থাকতে ইচ্ছে করে না। আব্বার কথা খুব মনে পড়ে। সজীব মনে হয় নতুন আব্বাকে পেয়ে পুরোনো আব্বাকে ভুলে গেছে। ও তো ছোট বুঝতে পারে না। কিন্তু আমি বুঝি। আমি পুরোনো আব্বার কাছে চলে গেলাম। গ্রামের ঘরটিতে আমি একা থাকতে পারবো, তুমি একদম চিন্তা করবে না।

-আয়শা

চিঠিটা ভাতের পাতিলের উপর রেখে বাসা থেকে বের হল আয়শা। হাঁটতে হাঁটতে রেল লাইনের পাশে চলে এসেছে। একটু পরেই ট্রেন আসবে। ট্রেনে চড়ে বাড়ি যাবে আয়শা। বাবার বাড়ি। যেখানে ওর বাবা ঘুমিয়ে আছে নীরবে।