- আমি স্যারকে বলেছি, আমি একটা মেয়ের সঙ্গে প্রেম করার চেষ্টা করছি, তাকে রাজি করাতে হলে আমাকে প্রতিদিন ৩০ মিনিট দেরি করে অফিসে আসতে হবে।
লাল চায়ে বিস্কুট ভিজিয়ে সেটা মুখে দিয়ে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। সজীব নামের এই ছেলেটা সবসময় কি অদ্ভুত কথা বলে, কিন্তু কথা বলার সময় মোটেই অদ্ভুত মনে হয় না। আর সেই কারণে তাকে ভালোবাসতে না পারলেও অবহেলা করতে পারি না।
- বললাম, আপনার স্যার কি বললেন তখন?
- আমাকে অফিসের সকলেই খুব পছন্দ করে, তাই কেউ কিছু বলে না। প্রতিদিন যখন অফিসে যাই তখন এক এক করে সবাই জিজ্ঞেস করতে আসে কতদূর এগোলাম।
- আপনি কি বলেন? নিশ্চয়ই হতাশ হয় তারা?
- হ্যাঁ, বছর খানিক ধরে আমি আপনার পিছনে ঘুরি তবুও হতাশ হচ্ছি না। কিন্তু তারা শুধু আমার মুখে শুনেই হতাশ হয়ে যায়, কি অদ্ভুত!
- আপনি তো ভালো করে জানেন যে আমাকে কোনদিনই পাবেন না, তবুও কেন এভাবে আপনি সময় নষ্ট করছেন?
- জানি না, তবে আমার বিশ্বাস আমি একদিন ঠিকই আপনাকে পাবো। আমি মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখি, ঘন বর্ষার মধ্যে আপনার সঙ্গে কোন একটা নদীর তীরে হাঁটছি। অনেকটা পথ গিয়ে পথের কাছের এক কদম ফুলের গাছ থেকে কদম পেরে দেবার আবেদন জানাচ্ছেন।
- হাহাহা, বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার।
- হুম অবশ্যই, তাছাড়া আপনি কিন্তু আমার সঙ্গে কখনো খারাপ ব্যবহার করেননি। সবসময় আমার প্রপোজ রিজেক্ট করেছেন ঠিকই কিন্তু কখনো রাগারাগি চেঁচামেচি করেননি।
- এটা আমার ব্যর্থতা, আমি কখনো কারো সঙ্গে রাগ করতে পারি না। ছোটবেলা থেকে মা-বাবা কোনদিন রাগতে দেখেনি, তাছাড়া বন্ধুরা সবসময় অবাক হয়ে যায়।
- সেজন্যই হয়তো সিম কোম্পানির কাস্টমার কেয়ারে চাকরি হয়েছে আপনার, কারণ সেখানে অনেক ধৈর্য ধরতে হয়। পাবলিক রাগারাগি করে কথা বলবে তবুও ঠান্ডা মাথায় থাকতে হবে।
- হাহাহা, হতে পারে।
- আপনি কি এখন চলে যাবেন?
- যাওয়া তো উচিৎ, তাই না?
- হ্যাঁ, আচ্ছা চলুন আপনাকে অটোতে তুলে দিয়ে আসি।
- বাহ তারপর?
- আজকে অনেক কথা হয়ে গেল।
আমার নাম তৃপ্তি, যার সঙ্গে এতক্ষণ ধরে কথা হচ্ছিল তার নাম সজীব। বছর খানিক ধরে আমার সঙ্গে সম্পর্ক করার জন্য ঘুরছে, কিন্তু আমি তো আমার ডিভোর্সি সিলমোহর মুছতে পারি না। তাই এ জীবনে কারো সঙ্গে জড়ানোর ইচ্ছা নেই বলে তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। চট্টগ্রামের অনেক জায়গা তার সঙ্গে ঘুরেছি, প্রেমের প্রস্তাব না দিয়ে লোকটা যদি আমার বন্ধু হতো তাহলে সারাজীবন বন্ধু হয়ে থাকতাম। তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে আমার সময় কোত্থেকে হারিয়ে যায় বুঝতে পারি না।
প্রায় সময়ই ছুটির দিনে তার সঙ্গে ঘুরতে যেতে ভালো লাগে, তবে আগে থেকে শর্ত থাকে যাতে ভালোবাসার কথা না বলে। একবার পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বসে তাকে আমার অতীত জীবনের সকল ঘটনা বললাম। একজনকে ভালোবেসে বিয়ে করে আবার ডিভোর্স হয়ে যাওয়া, তারপর থেকে এই ভালোবাসার প্রতি অবিশ্বাস জন্ম নেওয়া। সবকিছু তাকে বলেছিলাম, কিন্তু তবুও তার মধ্যে কোন পরিবর্তন আসে নাই।
অটোতে উঠে বসে আছি, সজীব আমার সামনে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইল। চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে যদি একবার সঙ্গে আসতে বলি তাহলে লাফ দিয়ে উঠে পরবে। সিএনজির মতো এই অটো গুলোকে কি বলে আমি জানি না, তবে গ্যাসের মাধ্যমে চলে তাই দ্রুত যাতায়াত করা যায়। সবগুলো সিট ভর্তি শুধু আমার পাশে একটা সিট ফাঁকা, আমি হাত দিয়ে সজীবকে ইশারায় ডাকলাম। সজীব সত্যি সত্যি লাফ দিয়ে আমার পাশে বসলো, শরীরের সঙ্গে তার শরীর লেপ্টে রয়েছে। পাবলিক গাড়ির মধ্যে এসব নিত্য হয়ে থাকে, কিন্তু প্রায়ই মহিলার সঙ্গে বসা হয় আমার।
সমস্ত পথ একসঙ্গে এভাবেই আসলাম, তারপর শান্তিবাগ মোড়ে এসে নামলাম। সজীব এগিয়ে গিয়ে দুজনের ভাড়া মিটিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল।
- বললাম, আপনি নামলেন কেন? আপনার বাসা তো নিমতলা বিশ্বরোড। আপনি এক্সেসরোড গিয়ে ওখান থেকে নিমতলা বিশ্বরোড চলে যেতেন।
- সে বললো, নাজিম কে চা বিস্কিটের টাকা দেয়া হয় নাই, তাই আবার আগ্রাবাদ গিয়ে তারপর টাকা পরিশোধ করে চলে যাবো।
- আমি মুচকি হেসে বললাম, আপনি তো কালকে সকালে ঠিকই আবার আসবেন। কাল সকালেই নাহয় টাকা দিয়ে দিতেন, খামাকা সারাদিন অফিস করে এখন আবার যেতে হবে কেন?
- মহামারির এই সময়ে কে কখন মারা যাই, কার সামনে কখন আজরাইল (আঃ) এসে হাজির হবে বলা মুস্কিল। তাই সময়ের হিসাব সময়ের মধ্যে করে ফেলা দরকার, নাহলে দেখা গেল আজকের কাজ আরেকদিনে বোঝা হয়ে যায়।
- একটা কথা বলবো?
- বলেন।
- আপনি সবসময় এমন অদ্ভুত আর সাজিয়ে কথা বলতে পারেন কীভাবে?
- কখনো ভেবে দেখিনি।
- এখন আমার কি ইচ্ছে করছে জানেন?
- হ্যাঁ জানি।
- বলেন তো শুনি!
- আপনার মনে হচ্ছে আজকে সারারাত যদি আমার সঙ্গে গল্প করতে পারতেন।
- কীভাবে বুঝলেন?
- আপনি যতবারই আমাকে আমার কথা বলার ধরনের প্রশংসা করেছেন, ঠিক তার পরেই আপনি বলতেন যে আমার সঙ্গে গল্প করতে ইচ্ছে করে।
- কিন্তু সেটা তো সম্ভব না তাই বিদায় নিচ্ছি।
- আমি যদি আপনার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে আরও কিছুটা সামনে যাই, আপনি রাগ করবেন?
- সজীব সাহেব...?
- বলেন।
- আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি, আপনি ভুল পথে হাঁটছেন সাঁইসাঁই করে। এখনো সময় আছে প্লিজ সঠিক রাস্তায় হাঁটুন, নাহলে আমার মতো একটা ডিভোর্সি মেয়ের সঙ্গে ভুল পথে যতোটা হাঁটবেন। একদিন নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে কিন্তু পিছনে ফিরে আসার দুরত্ব অনেক বাড়বে। কোন একটা বইয়ের মধ্যে পড়েছিলাম " ভুল করে যদি ভুল ট্রেনে উঠে যাও তাহলে পরবর্তী স্টেশনে আসার সঙ্গে সঙ্গে নেমে যাও। নাহলে ভুল ট্রেনে যতোটা সামনে যাবে, ফেরার কষ্ট ততই বাড়বে। "
- বুঝতে পারছি।
- আমি জানি আপনি বুঝতে পেরেছেন কিন্তু সে অনুযায়ী কাজ করবেন না। আচ্ছা চলুন আমার সঙ্গে, বাসা পর্যন্ত গিয়ে আবার চলে আসবেন, তবে আমি রিক্সা ঠিক করে দেবো। আপনার একা একা আসতে কষ্ট হবে, তবে একসঙ্গে যাবার সময় রিক্সা নিতে চাই না। হাঁটতে পারবেন?
- হ্যাঁ পারবো।
শান্তিবাগ মোড় থেকে গুটিগুটি পায়ে হাঁটতে শুরু করেছি, তবে কথা হচ্ছে খুব কম। আমি যতটুকু জিজ্ঞেস করি ততটুকুই উত্তর দেয়,
- বললাম, গ্রামের বাড়িতে যাবেন কবে?
- ঈদের ছুটিতে।
- আপনার গ্রামের বাড়ি তো ফরিদপুর?
- হুম।
- চট্টগ্রাম থেকে অনেক দুর, আপনারা ঢাকা শহর গেলেই তো পারেন। আমরা নোয়াখালীর মানুষ তাই চট্টগ্রামে আছি, কিন্তু আপনারা কেন?
- জানি না।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৫ নাম্বার রোডে আমি থাকি, মা-বাবা আর একটা ভাই ও একটা বোন আছে, আমিই বড়।
গলিতে এসে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
- আপনি এখন বরং বাসায় চলে যান, আপনার চা বিস্কিটের টাকা আপনি দিতে না পারলে আমি দিয়ে দেবো। কিন্তু এখন আপনাকে আগ্রাবাদ যেতে হবে না, একটা রিক্সা নিয়ে কে ব্লক ১০ নম্বর রোডের মাথায় গিয়ে অটোতে উঠে নিমতলা চলে যাবেন।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- হঠাৎ করে চুপচাপ কেন?
- এমনিতেই।
আমি আমার ডান হাতটা তার সামনে এগিয়ে দিয়ে বললাম, - হাতটা ধরুন।
সজীব আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল, সে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না।
- বললাম, কি ভাবছেন? ধরুন বলছি।
- সজীব আস্তে আস্তে বললো, দোতলায় বারান্দায় কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। তিনি আমাদের দুজনের দিকে বেশ মনোযোগ দিয়ে আছে।
- ভয়ের কিছু নেই, তিনি আমার মা। আপনি আমার হাতটা ধরুন।
সজীব নিরুপায় হয়ে তার হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে আমার হাতটা ধরলো। আমি বললাম,
- আজকে আমাকে একটা কথা দিতে হবে।
- কি কথা?
- আজকে রাতের মধ্যে আপনার মনের মধ্যে থেকে ভালোবাসার ভুতটা বের করবেন। তারপর আগামীকাল থেকে আমরা সারাজীবনের জন্য বন্ধু হয়ে যাবো। আর যদি রাতের মধ্যে আপনার মনের মধ্যে থেকে ভালোবাসার বিষয় দুর করতে না পারেন তাহলে আর আমার চোখের সামনে আসবেন না, কথা দেন।
করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সজীব, মনে হয় যেন আকাশ থেকে পড়লো। হালকা অন্ধকারে তার চোখ বোঝা যাচ্ছে না।
- সজীব বললো, আমি হয়তো পারবো না।
- তাহলে আমি হাতটা ছাড়বো না, আপনার কাছ থেকে কথা আদায় করে তারপর ছাড়বো।
- সত্যি সত্যি যদি না পারি? তাহলে কি আর কোনদিন সামনে আসবো না?
- না আসবেন না, আগামীকাল সকালে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের কাছে প্রশ্ন করে দেখবেন। তারপর সিদ্ধান্ত নিবেন।
- ঠিক আছে।
- মনে থাকবে তো? আমার হাত ধরে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারবেন তো?
- চেষ্টা করবো।
- সজীব সাহেব, আপনার বন্ধু হয়ে সারাজীবন থাকতে চাই বিশ্বাস করুন। কিন্তু বিয়ে করে স্বামী স্ত্রী হয়ে সংসার করার কথা ভাবতে পারি না।
- জানি আমি।
- এবার হাতটা ছাড়ুন।
মিনিট খানিক দুজনেই চুপচাপ। তারপর আমি আবার বললাম,
- আরেকটা কথা।
- জ্বি বলেন।
- অটোতে উঠে আপনার শরীরের সঙ্গে একদম লেপ্টে গেছিলাম মনে আছে?
- সরি, আসলে মানুষের চাপে হয়ে গেছে, আমি মোটেই ইচ্ছে করে করিনি।
- জানি, আমি তখনই অনুভব করছি আপনার শরীর বেশ গরম। মনে হচ্ছে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গেছেন, তাছাড়া এতক্ষণ আপনার হাতটা ধরেও আমি জ্বর অনুভব করেছি।
- ওহ্ আচ্ছা।
- বাসায় যাবার পথে পরিচিত ফার্মেসি থেকে জ্বরের ওষুধ নিয়ে যাবেন। চারিদিকে করোনা পরিস্থিতি খুবই খারাপ, নিজেকে সচেতন রাখুন। শহরের মধ্যে একা একা অসুস্থ হলে দেখার মতো কেউ নেই।
- আচ্ছা।
- ভালো থাকবেন।
★★★
সজীব চলে গেল, সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে দেখি মা দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো তিনি আমাকে ঢুকতে দেখে দরজার সামনে এসেছেন। আমি প্রবেশ করে হাতের ব্যাগটা রেখে বোরকা খোলার চেষ্টা করছি।
- মা বললো, ছেলেটা কে রে তৃপ্তি?
- বলার মতো তেমন কিছু না মা, তবে কালকে সকালে সে যদি বন্ধুত্ব গ্রহণ করার কথা বলে তবে পরিচয় দিতে পারবো, সে আমার বন্ধু।
- দেখতে অনেক সুন্দর, লম্বাও মোটামুটি।
- তুমি বাড়িয়ে বলছো, প্রথমত গলিতে অন্ধকার বেশি তাই তাকে তেমন দেখা যাচ্ছিল না। আর সে কিন্তু আমার চেয়ে মাত্র ১" লম্বা, মাস খানিক আগে আমরা ওজন আর উচ্চতা মেপেছিলাম।
- তবুও বেশ ভালো মনে হচ্ছে।
- জামাই করবা নাকি?
- করতে চাইলেই কি করা যায়? তুই তো কাউকে বিয়ে করবিই না, তাছাড়া সেই ছেলেও কি বিয়ে করবে নাকি?
- মা, বিগত বছর খানিক ধরে যে ছেলের গল্প করি তোমার সঙ্গে, এটা সেই সজীব। সে অনেক আগেই তোমার জামাই হবার অপেক্ষায় আছে।
- বলিস কি? তাহলে ভিতরে নিয়ে এলি না কেন? এতদিন শুধু তার কথা শুনে গেছি, আজকে বাসার সামনে থেকে চলে গেল?
- যদি সে আমার বন্ধু হতে চায় তাহলে খুব শীঘ্রই বাসায় নিয়ে আসবো।
- মানে কি এসবের?
- খুব ক্লান্ত লাগছে মা, গোসল করবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
পরদিন সকাল বেলা আগ্রাবাদ গিয়ে তার সঙ্গে আর দেখা হলো না। প্রতিদিন সে লাকি প্লাজার অপজিটে দাঁড়িয়ে থাকতো, কিন্তু আজ আমি নিজে তার জন্য দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ কিন্তু তার কোন পাত্তা নেই।
ভাবলাম সময় কি হয় নাই?
আমি কি আগে এসেছি?
মোবাইল বের করলাম সময় দেখার জন্য, যদিও হাতে ঘড়ি আছে কিন্তু হাতের ঘড়িতে কখনোই সময় দেখা হয় না। শরীরের সাজগোজের মধ্যে ঘড়ি আছে তাই এটা ব্যবহার করি।
সময় ঠিকই আছে কিন্তু সে নেই, একটা মেসেজ দেখতে পাচ্ছি। সিন করে দেখি সজীব এর নাম্বর থেকে মেসেজ এসেছে,
তৃপ্তি,
ক্ষমা করবেন প্লিজ, এ জীবনে আর দেখা হবে না। আপনার কথা সারাজীবন মনে থাকবে, এভাবে কঠিন শর্ত না দিলেও পারতেন। আমাকে বিরক্ত লাগে সেটা বললেই পারতেন, এভাবে ঘুরিয়ে কথা বলে শর্ত দিয়ে চোখের সামনে থেকে আপদ বিদায় না করলেও পারতেন।
যাইহোক, রাত থেকে শরীর আরও খারাপ হচ্ছে তাই অফিসে যাবো না। মোবাইলের সিমটা বন্ধ করে দিচ্ছি, যদি বেঁচে থাকি তাহলে কোন একদিন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে যাবো।
আর হ্যাঁ, নাজিমের চা বিস্কিটের টাকা আপনি পরিশোধ করে দিয়েন, আমার হয়তো সুযোগ না ও হতে পারে।
ইতি,
আপনার সজীব সাহেব।
চারদিন পেরিয়ে গেল, সজীব এর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি কিন্তু পারিনি। সারাক্ষণ শুধু তার চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরছে, অফিস থেকে বের হলেই চোখ গুলো চারিদিকে ঘুরতে থাকে।
আগামীকাল থেকে ৭ দিনের লকডাউন দিয়েছে সরকার, দেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমার অফিসে কিছু সংখ্যক কর্মী কাজ করবে, কিন্তু আমাকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। আমার সঙ্গে আরও কয়েকজনকেও ছুটি দেওয়া হয়েছে।
অফিস থেকে বের হবার আগেই একটা চিঠি লিখে নিলাম, সজীব এর জন্য চিঠি। আগ্রাবাদ মোড়ে এসে নাজিমের চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
- তোমার ভাইয়া কি আর আসেনি?
- না আপা, সকাল বেলা তো জিজ্ঞেস করে গেলেন আপনি।
- কাল থেকে তো লকডাউন শুরু হবে, তোমার দোকান কি খোলা থাকবে?
- জানি না, মামা বলতে পারে।
- একটা কাজ করতে পারবে?
- কি কাজ আপা?
- আমি একটা চিঠি দিয়ে যাচ্ছি, সজীবের সঙ্গে দেখা হলে সেটা তাকে দেবে। আর তুমি তো কাল বলেছিলে সজীব এর একটা বন্ধু আছে তিনি নাকি মাঝে মাঝে আসে এখানে। যদি তিনি আসে তাহলে তার মাধ্যমে হলেও চিঠিটা দিও।
- ঠিক আছে আপা, আপা একটা কথা বলি?
- বলো।
- আপনার আর ভাইয়ার মতো এতো সুন্দর করে কাউকে প্রেম করতে দেখিনি। আপনাদের দুজন কে খুব মানাচ্ছে, একদম পারফেক্ট আপা।
- হাহাহা, তাই নাকি?
- জ্বি আপা।
- তুমি যেভাবেই হোক চিঠি দেবার ব্যবস্থা করবে কিন্তু নাজিম।
- আচ্ছা।
নাজিমের হাতে চিঠি দেবার আগে আরেকবার নিজে পড়ে নিলাম।
সজীব সাহেব,
আমাকে এমন কঠিন শাস্তি না দিলেও পারতেন।
আপনার শূন্যতা আমাকে কতটা ক্লান্ত করেছে সেটা প্রকাশ করার মতো ক্ষমতা কাগজ কলমের নেই। চোখে চোখ রেখে সেই অনুভূতি বোঝাতে চাই, এছাড়া বিকল্প পদ্ধতি নেই। তাই আপনাকে এই কদিন না দেখে কতটা খারাপ লাগছে সেটা বোঝানোর জন্য আপনাকে আমার সামনে চাই।
আপনি এতো বোকা কেন? আমি নিশ্চিত, এভাবে যদি আরো কয়েকমাস আগে আপনি যোগাযোগ বন্ধ করতেন তাহলে এতদিনে আপনার ঘরের রাধুনি হয়ে যেতাম।।
সময় একটু বেশি লেগেছে, ব্যাপার না। আপনি চিঠি পাবার সঙ্গে সঙ্গে আমার বাসায় আসবেন, মা-বাবার কাছে আমি সবকিছু বলে রাখবো। আর আপনার গ্রামের বাড়িতে যাদের বলবেন তাদের বলে নিবেন। পরবর্তী সাক্ষাতে আপনার জীবন সঙ্গী হতে চাই, আশা করি বুঝতে পেরেছেন। আমি কিন্তু এই লকডাউনে গৃহবন্দী থেকেও সারাক্ষণ বেলকনিতে বসে থাকবো। আর চিঠি পাবার সঙ্গে সঙ্গে কল দিবেন, আপনি নিজের নাম্বার বন্ধ করে দিলেন কেন?
এই কদিন কষ্ট দেবার ফলাফল ভবিষ্যতে শোধ করে দেবো, আপাতত সামনে আসুন।
ইতি,
আপনার তৃপ্তি জাহান অথৈ।
★★★
সেদিন চিঠি দিয়ে আসার পরে প্রতিটি মুহূর্তে অপেক্ষা করেছি কিন্তু সে আসেনি। আর কোন যোগাযোগ করে নাই সে, তাহলে কি চিঠি তার কাছে পৌঁছায় নাই?
ষষ্ঠ দিনের লকডাউন চলে, টিভিতে দেখলাম যে লকডাউন তেমন পালন হচ্ছে না। তাই বাসা থেকে বের হয়ে আগ্রাবাদের দিকে রওনা দিলাম, সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়। ভেবেছিলাম নাজিমের সঙ্গে দেখা হবে না, কিন্তু কাকতালীয়ভাবে নাজিমের সেই ফুটপাতের দোকানের সামনে সে মাস্ক পরে দাঁড়িয়ে আছে। দোকান বন্ধ।
আমাকে দেখে অবাক হয়ে এগিয়ে এলো তার চোখে পানি বের হচ্ছে। আমি তাকে তড়িঘড়ি করে বললাম,
- সজীব এর খবর পাওয়া গেছে কিছু?
- না আপা।
আমি হতাশ হলাম। বললাম,
- চিঠি কোথায়?
- আমার কাছেই আছে, আপা আজকে দুপুরের পরে সজীব ভাইয়ের বন্ধু রাজিব ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে।
- তুমি তাকে আমার কথা বলো নাই? চিঠি দিয়ে দাওনি কেন? নাম্বার রেখেছো তার?
- আমি তাকে চিঠি দিছিলাম আপা, আপা সেদিন আপনি চিঠি রেখে যাবার পরে আমি বাসায় গেলে আমার ছোটবোন আপনার চিঠি পড়েছিল। আমি তখন খুব কষ্ট পাইছি, আমি তো পড়তে পারি না তাই বুঝতে পারিনি। দুপুরে রাজিব ভাইয়ের কাছে যখন চিঠি দিলাম তখন তিনি চিঠি পড়লেন। তারপর নিজের পকেট থেকে একটা কলম বের করে আপন চিঠির বিপরীতে কি যেন লিখে দিয়ে গেছে। বলেছে আপনাকে দিতে।
- তাহলে দাও সেই চিঠি।
- আচ্ছা নেন।
রাজিব ভাইয়ের লেখা,
" আপনার লেখাটা পড়লাম, সজীব করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। অবস্থা ভালো না মেডাম, তবে আমাদের অফিসের স্যার সজীবকে খুব পছন্দ করতেন তাই তিনি নিজের খরচে ওকে আইসিইউতর চিকিৎসা করাচ্ছেন। কিন্তু দিন দিন অবনতি হচ্ছে, ডাক্তার সকল আশাভরসা ত্যাগ করেছে, বাকি আল্লাহর ইচ্ছে। আপনার চিঠিটা আর তাকে দিতে ইচ্ছে করছে না, আপনি ভালো থাকবেন সবসময়।
আর দোয়া করবেন। "
চিঠিটা নিজের হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না, চোখ দিয়ে না চাইতেই ঝরঝর করে পানি বের হয়ে গেল। নাজিমের কাছে জিজ্ঞেস করে কোন কিছু পাওয়া গেল না, নিরুপায় হয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটা শুরু করেছি। যত দ্রুত সম্ভব বাসায় ফিরে যেতে হবে নাহলে যেকোনো সময় অসুস্থ হয়ে যাবো৷ সাদিকের সঙ্গে ডিভোর্স হবার পর থেকে যে ডিপ্রেশন শুরু হয়েছে সেটা আজও একটুতেই ক্লান্ত করে আমায়।
অটোতে উঠার আগেই কেউ একজন তৃপ্তি বলে ডাক দিল, মুহূর্তে দাঁড়িয়ে গেলাম। তাকিয়ে দেখি সাদিক দাঁড়িয়ে আছে, আমার প্রথম হাসবেন্ড।
- সাদিক আরেকটু কাছে এগিয়ে এসে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, কেমন আছো?
আমি এমনিতেই অবাক হলাম, তারমধ্যে আবার সজীব এর টেনশনে অস্থির। সেখানে সাদিকের এই প্রশ্ন আমাকে বিরক্ত করে দিয়েছে, আমি শুধু বললাম
- তুমি এখানে?
- একটা কাজে এসেছিলাম, হঠাৎ করে দেখলাম চোখ মুছতে মুছতে হাঁটছ তাই কথা বলতে এলাম। যদিও বিগত কয়েকমাস তোমাকে ফলো করি কিন্তু কখনো সামনে এসে কথা বলতে সাহস করে দেখাতে পারিনি।
- তো আজকে কেন এলে?
- তুমি জানো না তোমার চোখের পানি আমার সহ্য করতে কষ্ট হয়?
- ন্যাকামি ভালো লাগে না সাদিক, প্রতিটি রাতের আঁধারে যখন কান্না করতে করতে বালিশ ভিজে যায়। তখন তো তোমার দরদ লাগে না, তোমার দেয়া আঘাতে জর্জরিত আমি বড্ড ক্লান্ত।
- কিন্তু আমার ধারণা তুমি সজীব সাহেবকে নিয়ে বেশ আনন্দে আছো, সবসময় ছুটির দিনে ঘুরতে যাওয়া। অফিস শেষে প্রতিদিন একসঙ্গে চা খেয়ে বাসায় যাওয়া, কি নেই তোমার?
আমি সম্পুর্ন অবাক হয়ে বললাম,
- তুমি সজীবকে চেনো?
- হাহাহা, কেন চিনবো না? তোমার আশেপাশে কখন কি ঘটছে সবকিছুই আমার জানা আছে।
- লাভ কি? যেখানে অনেক স্বপ্ন দেখিয়ে বিয়ের কনে সাজিয়ে ঘরে তুলে আবার লাথি মেরে ফেলে চলে গেলে, সেখানে এতো খোঁজখবর কেন?
- আমি কিন্তু তোমাকে বলেছি যে আমার ভুল হয়ে গেছে তৃপ্তি, মারাত্মক ভুল হয়ে গেছে।
- তোমার বাবার অনেক টাকা আছে সাদিক, কিন্তু আমিও তোমাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছি তাই সবকিছু ছেড়ে তোমার কাছে গেলাম। কিন্তু তুমি আমার সঙ্গে কি করলা বলো?
- তোমার সকল অভিযোগের একটাই উত্তর, আর তা হচ্ছে আমি ভুল করেছি।
- আমি এখন বাসায় যেতে চাই, রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোমার সঙ্গে এভাবে কথা বলতে আমার আর ইচ্ছে করে না। একটা সময় ছিল যখন ঘন্টার পর ঘন্টা একসঙ্গে হাঁটতাম, কিন্তু আজ...
- বাদ দাও প্লিজ।
- আচ্ছা ঠিক আছে, ভালো থেকো, রাত বেড়ে যাচ্ছে আমি বাসায় যাচ্ছি।
কোনরকমে বাসায় ফিরে মাকে জড়িয়ে ধরলাম, শরীর অসুস্থ হয়ে গেছে। মা আমাকে ধরাধরি করে বিছানায় নিয়ে গেল, তারপর নিজের হাতেই তিনি বোরকা খুলতে সাহায্য করলেন। রাত দশটার পরে আমার প্রচুর জ্বর এলো, মাকে বলে আমি আমার ছোটবোনকে আলাদা ঘরে ঘুমাতে বললাম। মনের মধ্যে চিন্তা ঢুকে গেল, সজীব এর করোনা হয়েছে তাহলে কি আমিও...?
নিজের রুমে পুরোপুরি হোম কোয়ারান্টাইন শুরু করেছি, সারাক্ষণ রুমের মধ্যে শুয়ে বসে দিন পার করা খুব কষ্টকর। আর মনের মধ্যে তো সজীবের কি হয়েছে সেটাই ঘুরছে, কিছু করার নেই।
দুদিন বাসায় থাকার পরে এক পরিচিত কলিগকে বলে নাজিমের সঙ্গে দেখা করতে বললাম। নাজিম কে সে চিনতো, কারণ তাকে নিয়ে আমি মাঝে মাঝে নাজিমের চা খেতে যেতাম।
অভ্যাসটা সজীবই করিয়াছে।
কিন্তু নাজিম সেখানে নেই, ওদের দোকান পুলিশ অভিযানে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আমি মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম, সজীবের সঙ্গে কথা বলা বা যোগাযোগ করার সকল উপায় শেষ।
আমারও কমবেশি জ্বর আছে, কিন্তু মারাত্মক অসুস্থ নই বলে বাবা বাসাতেই রেখেছে। বাসায় প্রায় সপ্তাহ খানিক পেরিয়ে গেছে, সাদিক মাঝে মাঝে কল দিয়ে কথা বলতে চায় কিন্তু আমি ইচ্ছে করে রিসিভ করি না। তবে একা একা বিছানায় শুয়ে শুয়ে সজীবের সঙ্গে পরিচয় হবার পর থেকে যত স্মৃতি সবকিছু ভাবতাম, আর তখনই চোখের সামনে সাদিকের স্মৃতি ভেসে আসে।
মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যায়, খুব ইচ্ছে করে ভাবনা গুলো দুর করতে। কিন্তু এসব যে আমার হাতে নেই, আমি কি করবো?
★★
২৬ দিন পর।
আজ আমার বিয়ে, খুব সাদামাটা দৃশ্যের বিয়ে হচ্ছে আমার। আমি এখন সম্পুর্ন সুস্থ, ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে পারিনি কিন্তু মহামারি থেকে রক্ষা পেলাম। তবে সজীবের কোন সন্ধান বের করতে পারি নাই আমি, নাজিম সেখানে নেই আর আমি কখনো সজীবের অফিসের ঠিকানা জানতাম না।
দুদিন আগে হুট করেই বাবা কিছু লোকজন নিয়ে হাজির হয়েছেন বাসায়। তারপর মেহমানদের বসিয়ে রেখে তিনি আমার রুমে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
" তোর সবকিছু জেনেই এরা তাদের ছেলের জন্য তোকে বউ করতে চায়। ছেলেটা ডাক্তার, আগের স্ত্রী এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে, তুই যদি তার সঙ্গে সংসার করো তাহলে সুখী হবি। একবার তো নিজ পছন্দ দেখলি মা, এবার নাহয় জন্মদাতা পিতাকে একটু সুযোগ করে দে। "
বাবার কথার জবাবে আমি প্রতিবাদ করতে পারি নাই, সেদিনই তারা আমাকে আংটি পরিয়ে বিয়ের দিন ঠিক করে গেছে। আর আজকেই হচ্ছে সেই বিয়ের দিন, তাই নিজের রুমে বসে সাজগোছ করছি। যেহেতু দুজনেরই এটা দ্বিতীয় বিয়ে তাই কোন অনুষ্ঠান ছাড়াই বিয়ে হচ্ছে। বরযাত্রী বলতে মাত্র ৮ জন মানুষ এসেছে, কাজি সাহেব সহ আর সবাই আমাদের আত্মীয়।
কথা ছিল জোহরের নামাজের আগেই বিয়ে হয়ে যাবে কারণ কাজি সাহেব নাকি নামাজের পরে অন্য একটা বিয়ে পরাতে যাবেন।
হঠাৎ করে আমার ছোটভাই এসে বললো,
- আপা তোমার সঙ্গে একটা ছেলে দেখা করতে এসেছে, ১৩/১৪ বছর বয়স হবে।
- নাম কি?
- নাজিম, সে নাকি আগ্রাবাদ চা বিক্রি করতো, তুমি নাকি তাকে চেনো?
নাজিমের কথা শুনে বুকটা কেঁপে উঠল, কৌতূহল জেগেছে বেশ। তাই তাড়াতাড়ি তাকে আমার রুমে আনার জন্য ভাইকে পাঠিয়ে দিলাম।
- নাজিম আগের মতোই আছে, আমাকে দেখে একটা হাসি দিয়ে বললো, কেমন আছেন আপা?
- ভালো আছি, তুমি কেমন আছো?
- আমিও অনেক ভালো, আপা আপনার জন্য একটা চিঠি আছে।
- কার চিঠি?
- সজীব ভাইয়ের চিঠি, ভাই তো সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে, ঢাকায় নেওয়া হয়েছিল।
আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল, ভাগ্য কেন এমন করলো আমাকে? আর একটা দিন আগে কি সে আসতে পারে নাই? মনে মনে ভাবলাম, হে আল্লাহ কেন করো এমন?
নাজিমের হাত দিয়ে চিঠি নিয়ে চিঠির ভাজ খুলতে আরম্ভ করলাম। নাজিম তখন বললো,
- আপা বাড়িতে এত মেহমান কিসের? আপনার তো সাজগোছ দেখে মনে হচ্ছে কোথাও বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবেন।
- আমি চিঠির ভাজ খুলতে খুলতে বললাম, আজ আমার বিয়ে হবে যাচ্ছে নাজিম।
নাজিম যেন বিশ্বাস করতে পারে নাই, অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, তারপর আমার হাত থেকে চিঠি ছো মেরে নিয়ে গেল।
- বললাম, কি হলো?
- আপা আপনার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে?
- হ্যাঁ নাজিম, সজীবকে বলে দিও আমাকে যেন ক্ষমা করে দেয়।
- আচ্ছা ঠিক আছে আপু, কিন্তু তাহলে আপনার আর চিঠি পড়তে হবে না। এই চিঠি আপনার জন্য নয় আপা, আপনি ভালো থাকবেন সবসময়।
নাজিম ছুটে বেরিয়ে গেল। আমি তাড়াতাড়ি করে বেলকনিতে গেলাম, ভেজা কাপড়চোপড় শুকাতে দেওয়া হয়েছে তাই রাস্তা থেকে আমাকে দেখা যাবে না এমনভাবে দাঁড়ালাম।
কড়া রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে সজীব, দৃষ্টিতে কি যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে। বুকের মধ্যে আবারও কেঁপে উঠল আমার, মানুষটা আমার জন্য কতটা কষ্ট করে দাঁড়িয়ে আছে।
নাজিম রাস্তায় নেমেছে, সজীবর দিকে তাকিয়ে সে সবকিছু বলেছে। হাত দিয়ে নিজের চোখ মুছে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সজীব নাজিমের হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে টুকরো টুকরো করে ছিড়লো, তারপর রাস্তায় ফেলে দিল।
পকেট থেকে মোবাইল বের করে স্ক্রিনে তাকিয়ে রইল, একটু পরে বেলকনিতে তাকিয়ে মনে হয় বিশাল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তারপর নাজিমের হাত ধরে কড়া রোদের মধ্যে আস্তে আস্তে হাঁটতে শুরু করলো। অনেকটা পথ গিয়ে আবারও পিছনে ফিরে তাকিয়ে রইল, এরপর আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়ে গেল।
একটু পরে মা বেলকনিতে এসে বললো,
- কাজি সাহেব তোর রুমে এসেছে, কাবিননামায় সই করতে হবে, তাড়াতাড়ি ভিতরে আয়।
ছোটভাইকে বলে রাস্তা থেকে ছেঁড়া চিঠির অংশ কুড়িয়ে আনালাম। সবগুলো টুকরো পাওয়া গেল না, কিন্তু যতটুকু পাওয়া গেছে তাতে লেখা আছে,
" রমনা পার্কে দেখেছিলাম, বৃদ্ধ বৃদ্ধা একসঙ্গে হাত ধরে সকাল বেলা হাঁটছে। তোমার সঙ্গে যদি দিনটা পর্যন্ত থাকতে চাই তাহলে কি আবারও ফিরিয়ে দেবে? প্লিজ এমনটা করিও না।
তুমি ছাড়া এ জগতে
চাই না মেয়ে অন্য।
ভালোবাসা রেখেছি শুধু
'তৃপ্তি' তোমার জন্য। "
সম্পুর্ন চিঠি পড়া হলো না, যতটা আশা নিয়ে এই মানুষটা এসেছিল, ঠিক ততটাই কষ্ট নিয়ে ফিরে গেছে। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে এসেছে কিন্তু সত্যিই কি বাঁচতে পেরেছে সে?
#সমাপ্ত
#লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)
0 Comments