প্রিয়ঙ্গী

আমি যখন প্রথম বার কনসিভ করি আমার এক বোন জিজ্ঞেস করেছিল, 

"তোর কি মর্নিং সিকনেস হয়?" 

আামি উত্তর দিয়েছিলাম, 

"আমার তো সারাজীবনই ঘুম থেকে ওঠার পর মর্নিং সিকনেস হয়। বমি বমি লাগে.. চোখে আন্ধার দেখি.. খাট থেকে নামার পর আধা ঘন্টা পর্যন্ত ভূমিকম্প মোডে থাকি। বুঝবো ক্যামনে এইটা ওই মাথা ঘুরান্টি, নাকি কনসিভ করার মাথা ঘুরান্টি?" 

কয়েকদিন পর বুঝতে পেরেছিলাম দুই মাথা ঘুরান্টির মধ্যে পার্থক্যটা কি। কনসিভ করলে শুধু মাথাই ঘুরে না। দুনিয়াদারি নিয়ে ঘুরান্টি দেয়। নরমাল মাথা ঘুরানো যদি ক্লকওয়াইজ হয়, তাহলে এটা এন্টি-ক্লকওয়াইজ। আর বমি বমি লাগার সময় শরীরে যেই ভাইব্রেশন হয়, আগের দিনের থান ইট সাইজের মটোরোলাতেও এই রকম ভয়াবহ ভাইব্রেশন হতো না। 

আমরা প্রথম যেদিন জানতে পারি আমাদের ঘরে একজন নতুন অতিথি আসছে, সেই দিনটা আমাদের স্মরনীয় দিনের তালিকায় সবার শীর্ষে। আমি যখন আমার বরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে খবরটা দেই, তিনি কাঁথার ভেতর থেকে কচ্ছপের মতো মাথা বের করে বললেন, "আলহামদুলিল্লাহ"। বলেই আবার কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। আমি গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম। এটা কেমন কথা? পরে আমাকে কনভিন্স করার জন্য তিনি বলেছিলেন, " আরে আমি তো প্রচুর খুশী হয়েছি। খুশীর চোটে ঘুমিয়ে গেছি।" 

নাটক সিনেমায় বাবা হওয়ার খুশীতে বউকে কোলে নিয়ে তিন চক্কর দেওয়া দেখে বড় হওয়া আমি ভারাক্রান্ত মনে সে কথা মেনে নিয়ে ভাবলাম, কী আর করা। সবার মনের ভাব প্রকাশের ভঙ্গি তো আর এক হয় না। ভালোই হয়েছে, কোলে নিয়ে চক্কর দিতে গেলে আমিই বিপদে পড়তাম। এমনি ওইসময় সারাদিন চক্করের মধ্যে থাকি। 

তবে আমার বাড়ির লোক কিন্তু আবেগ অনুভূতি প্রকাশের ব্যাপারে কোনো কার্পণ্য করেনি। আমি তখন অসুস্থতার কারণে মায়ের বাড়িতে ছিলাম। সেদিন আমার শ্বশুর বাড়িতে আমাদের সবচেয়ে বড় মেয়ের (আমার বড় ভাসুরের মেয়ে) জন্মদিন। আমি তাকে একটা টেক্সট করে বললাম, 

"শুভ জন্মদিন মা। আগামী বছর তোমার জন্মদিনে আমি তোমাকে একটা ছোট্ট পুতুল উপহার দিবো।" 

সে ঘটনা বুঝতে পেরে তৎক্ষনাৎ রিপ্লাই দিলো, 

"কংগ্রাচুলেশনস ছোট মা, প্লিজ তুমি আজকে বাসায় আসো। আমার জন্মদিনে আজকে ডাবল সেলিব্রেশন হবে।" 

আমাদের সেই বড় মেয়ে আজ যেভাবে আমার ছেলেমেয়েকে আগলে রাখে, সেটা দেখে আমার মনে হয়, সেদিন আমি সঠিক মানুষকেই বেছে নিয়েছিলাম আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সুসংবাদটা সবার আগে দেয়ার জন্য। 

এদিকে আমার বাবার বাড়ির লোকজন দুপুরে ভাতটাত খেয়ে কাপড়চোপড় পরে রেডি হয়ে গেলো। বিকেলে আমার আলট্রাসাউন্ড করতে যাওয়ার সময় দল বেঁধে যখন প্যাথলজি ল্যাবে গিয়ে হাজির হলাম, ডাক্তারের সহযোগী চোখ কপালে তুলে বললেন, "একজন পেশেন্ট এর সাথে ছয়জন? সমইস্যা কী?" 

আমি বললাম "সমইস্যা অতি ভয়াবহ। এখানে যাদের দেখছেন তারা আমার পরিবারের এক চতুর্থাংশ। বাকিরা খবর পাওয়ার আগে জলদি আমার আলট্রাসনোগ্রাম করে বিদায় করেন।" 

আমার এই রসিকতা ভদ্রমহিলার উপর এন্টিবায়োটিক এর মতো কাজ করলো। মুহুর্তের মধ্যে আমি নিজেকে আল্ট্রাসাউন্ড রুমে আবিষ্কার করলাম। 

রুমের বাইরে আমার মা আয়াতুল কুরসি পড়ছেন আর রুমের দরজায় ফুঁ দিচ্ছেন। আমার দুই ভাই ভিডিও ক্যামেরা হাতে রেডি। বের হওয়ার সাথে সাথে বড়টা জিজ্ঞেস করলো "ছেলে না মেয়ে?" মা তার দিকে তাকিয়ে একটা ড্যাগার লুক দিলেন। ছোটটা ভয়ে ভয়ে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো, "কয়দিন লাগবে?" মা এবার আরো কঠিন দৃষ্টিতে তার দিলে তাকালেন। আমার বর শুধু জিজ্ঞেস করলেন, "সব ঠিক আছে?" আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলতেই তার পাশে দাঁড়ানো আমার দুলাভাই উর্ধ্বগগনে দুই হাত তুলে বললেন,"নো চিন্তা ডু ফুর্তি।" 

সেখান থেকে বের হয়ে ফুর্তি করতে করতে যখন শ্বশুর বাড়ি গেলাম, সেখানেও আমার জন্য অপেক্ষা করছিল আচানক সব অভিজ্ঞতা। তবে সেটা আপাতত উহ্য থাক। সোয়া তিন লাখ সদস্য বিশিষ্ট যৌথ পরিবারের সবার অনুভূতি ব্যাক্ত করতে গেলে একটা মহাকাব্য লিখে ফেলতে হবে। 

গর্ভধারণ করার পরপর যে আনন্দময় ঘটনাগুলো ঘটেছিল, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বাকি সময়টা তেমন ছিল না। আমার প্রথম প্রেগন্যান্সির সময় আমাকে কিছু শারীরিক জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। সাধারণত গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে যেসব জটিলতা হয়, তার বাইরেও কিছু জটিলতা। আমার লেফট ওভারিতে একটা ডারময়েড সিস্ট দেখা দেয়। প্রেগন্যান্সির পাঁচ মাসের সময় সার্জারী করে ওভারি সহ কেটে ফেলতে হয়। ইউটেরাসে বেবি রেখে পাশ থেকে ওভারি ফেলে দেয়া বিষরটা ডাক্তার যত সহজ ভাবে বুঝিয়ে বলেছিলেন, তার চেয়ে অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল আশেপাশের মানুষের কিছু বিশেষজ্ঞ মন্তব্য। আমার মেয়ের বাবাকে সেসময় একটা ভয়াবহ কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। রীতিমতো যুদ্ধ করে জীবন বাজি রেখে আমি আমার সন্তানকে এই পৃথিবীতে আনতে পেরেছি শুধুমাত্র তিনি সেসময় আমার পাশে ছিলেন বলে। সেই কঠিন সময়ের অপ্রিয় অভিজ্ঞতাগুলোও না হয় আজকের দিনে উহ্য থাক। 

আজ থেকে ঠিক এগারো বছর আগে এই দিনে আমি একটা কন্যা সন্তানের জন্ম দেই। অপারেশন থিয়েটারে ওকে যখন আমি প্রথম দেখি, আমার মনে হয়েছিল.. চোখ, মুখ, নাক আঁকা একটা লাল টুকটুকে আপেল। ডাক্তার যখন তাকে এনে আমার গালের সাথে চেপে ধরলো, তখন আমি ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছি। সিজার চলাকালে ডাক্তার যখন আমার টেনশন কাটাতে গল্প করছিলো, তখন আধো ঘুম আধো জাগরণে আমি তাকে বলেছিলাম, 

"আমাকে সার্জারীর পর একটু জাগিয়ে রাখবেন প্লিজ। আর ওর বাবাকে প্রথম দেখাবেন। ওকে দেখে সে কী করে আমি দেখতে চাই।" 

ডাক্তার আমার কথা শুনে হেসে বলেছিলেন, "প্রথম তো তুমিই দেখবে বোকা মেয়ে। মায়ের আগে কেউ দেখে?" 

আমি বলেছিলাম, "আমার আগে তো আপনি দেখে ফেলবেন।" 

আমার কথা শুনে তিনি হো হো করে হেসে উঠলেন। তারপর বললেন, "আচ্ছা যাও দেখবো না। পেটটা কেটে চোখ বন্ধ করে ডাকবো 'আয়রে আয় টিয়ে, নায়ে ভরা দিয়ে।" 

আমি ওটি তে ঢোকার পর থেকে ভীষণ কান্নাকাটি করছিলাম। আমাকে একটু শান্ত রাখার জন্য তাদের সবার সে কী চেষ্টা। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, আমি ডাক্তারকে বলেছিলাম, "আমার বাবুটার যদি কিছু হয় তাহলে আমাকেও বাঁচানো দরকার নেই। আমাকেও মেরে ফেলবেন।" 

উনি আমাকে একটা কঠিন ধমক দেয়ার বদলে আদর করে বলেছিলেন "আমরা অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা সুস্থ এবং ফুটফুটে বাবুর কান্না শুনতে পাবো। আল্লাহ ভরসা। " 

বাবুটাকে বের করে আনার পর সে যখন চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো, তখন আমিও চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলাম। ডাক্তার বলছিলো "এই সবাই চোখ বন্ধ করো। কেউ বাবু দেখবে না। আগে মা দেখবে।" 

মেয়েটাকে এক ঝলক দেখেই আমি ঘুমিয়ে গেছিলাম। তার বাবা তাকে দেখে কী করেছিল আমার দেখা হয়নি। তবে পরে সবার কাছে শুনেছি তাকে যখন সবাই জিজ্ঞেস করছিলো কেমন লাগছে, তিনি অত্যন্ত নির্লিপ্ত গলায় বলেছিলেন "আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কেমন জানি আবেগ অনুভূতি শূন্য মনে হচ্ছে।" 

মেয়ের জন্মদিনে আজ আমাদেরও বাবা-মা হওয়ার এগারো বছর পূর্ণ হলো। অনেকে প্রথম মা হওয়ার অনুভূতি অনেকভাবে ব্যক্ত করে। কিন্তু সত্যি বলতে, যখন আমার কোল জুড়ে একটা ছোট্ট শিশু আসে, তখন তাকে দেখে আমি যত মুগ্ধই হই, তৎক্ষনাৎ মা হওয়ার অনুভূতিটা আমি টের পাইনি। 

মা আমি হয়ে উঠতে শুরু করেছি তখন, যখন সে আমার ওপর নির্ভরশীল হতে শুরু করেছে। মা আমি তখন হতে শুরু করেছি, যখন তার প্রতি আমার দায়িত্ববোধ বুঝতে শিখেছি। শুধু মাত্র সন্তান জন্ম দিয়েই মা হয়ে যাওয়া যায় না। মা হওয়া একটা চলমান প্রক্রিয়া। একটার পর একটা জীবনের চৌরাস্তার মোড় পেরিয়ে একটু একটু করে মা হয়ে উঠতে হয়। আমি প্রতিদিন, প্রতিনিয়তই একটু একটু করে মা হয়ে উঠছি। 

আমার মতো তার বাবাকেও প্রতিদিন একটু একটু করে বাবা হয়ে উঠতে দেখি। পৃথিবীর সব সুন্দর গানগুলো যখন সে তার মেয়েকে উদ্দেশ্য করে গায়, আর মেয়ে যখন বাবার গান শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায়, এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য পৃথিবীতে আর কিছু হতে পারে না। বাবার বুকের উপর ঘুমিয়ে থাকা ছোট্ট মেয়েটা যখন বাবাকে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়, আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখি। আমার মেয়ে পৃথিবীর সবকিছু সহ্য করতে পারে, শুধু তার বাবা কোনো কারণে অসুস্থ বোধ করলে সেটা সে সহ্য করতে পারে না। কখনো যদি বাবার সামান্য একটু মাথা ব্যাথাও হয়, তবু মেয়ের নাকের পানি চোখের পানি এক হয়ে যায়। 

প্রতি বছর তার জন্মদিন নিয়ে আমাদের অনেক প্ল্যান থাকে। তার কোনো চাহিদা নেই বলে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি দিনটা তার মন মতো করে তুলতে। তার বাবা প্রতিবছরই মেয়েকে কোনো ভিন্নধর্মী উপহার দেয়ার চেষ্টা করেন। কখনো বারান্দায় দোলনা লাগিয়ে দেন, কখনো পাখি এনে দেন, কখনো কিবোর্ড কিনে দেন। 
পৃথিবী থমকে যাওয়ায় এবার আমরা তার জন্য বিশেষ কিছু করতে পারিনি। আমার মেয়ের এইটুকু ছোট্ট জীবনে আমাদের ভালো থাকার জন্য, আমাদের খুশী রাখার জন্য তার অনেক স্যাক্রিফাইস। আজকেও তার কোনো চাহিদা ছিল না। আজকের দিনেও শুধু তার চাওয়া ছিল "বাবা যেন ভালো থাকে" আর "পৃথিবীটা যেন আবার আগের মতো হয়ে যায়। আমরা যেন আবার নানু বাসায় যেতে পারি।" 
আর এই ছোট্ট জীবনে তার পাওয়া আশেপাশের মানুষের অনেক অনেক আদর আর ভালোবাসা। 

প্রাপ্তির খাতায় এবারে কিছু বিশেষ সংযোজনও আছে। গতকাল পাঠশালা (Centre for Basic Studies) গ্রুপের একটা আড্ডায় আমি যুক্ত হয়েছিলাম সেখানকার একজন আয়োজকের আমন্ত্রনে। ভীষণ প্রাণবন্ত একটা আড্ডা শেষে বিদায় নেবার সময় তাদের যখন আমি বললাম কাল আমার মেয়ের জন্মদিন, সবাই যেন তার জন্য দোয়া করেন.. তখন তারা সবাই মিলে আমার মেয়ের জন্য হ্যাপি বার্থডে গানটা গেয়ে শুভেচ্ছা জানালেন। 

এই আন্তরিক শুভ কামনার জন্য পাঠশালা পরিবারের সবার প্রতি আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা। আন্তরিক ধন্যবাদ অষ্ট্রিয়া প্রবাসী তথ্যপ্রযুক্তিবিদ কাঁকন মাহমুদ এবং তার সহধর্মিণীকে, যারা আমাদেরকে তাদের পাঠশালা পরিবারের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আমি যা কিছু করি সবটাই আমার সন্তানদের জন্য, তাদের জন্য যেন কিছু রেখে যেতে পারি সেজন্য... এই যে আপনারা এমন ভাবে আমাদের বিশেষ  দিনটাকে আনন্দে ভরিয়ে দিলেন, আপনারাও হয়তো তাদের জন্য থাকবেন। 

লেখালেখির সুবাদে কিছু মানুষের সাথে যুক্ত হওয়ায় সে এবার পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর শুভেচ্ছা পেয়েছে। কেউ তাদের পেইজের লাইভে সবাইকে নিয়ে হ্যাপি বার্থডে গান গেয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে, কেউ আলাদা ভাবে ইনবক্স করেছে, কেউ কেউ তাদের টাইমলাইনে পোস্ট দিয়েছে। কেক কাটার পর আমি যখন তাকে সেসব শুভেচ্ছা বার্তা দেখালাম সে প্রচন্ড খুশী হলো, এবং একই সাথে ভীষণ লজ্জাও পেয়েছিল। সে ও আমার মতো বললো,
"মাম্মা, বেস্ট গিফট এভার।"
আমি লক্ষ্য করে দেখলাম আমার মতো তার চোখও ছলছল করছে। 

আমারও তো আজ একটা বিশেষ দিন। আমিও তো এই দিনেই প্রথম মা হয়েছিলাম। আমিই বা কোনো উপহার পাবো না কেন? মেয়ে আমাকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে বললো, 

"মাম্মা, তুমি যে বলো তোমার "হাজার কবিতা বেকার সবই তা", এবার বুঝলে তোমার লেখা যে বেকার না। তোমার লেখার জন্য আমি কতো মানুষের ব্লেসিংস পেলাম বলো তো।" 

মেয়ের কাছ থেকে একজন মা এর বেশী আর কী চাইতে পারে। আমার এই এক রত্তি মেয়ে যেরকম ভাবে আমাকে বোঝে, পৃথিবীর আর কেউ সেরকম ভাবে বোঝে কিনা সন্দেহ। 

একদিন সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, "মা, তুমি কী চাও? বড় হয়ে আমি কী হই?" 

আমি বলেছিলাম, "আমি চাই তুমি অনেক ভালো মানুষ হও। বাবার মতো। সৎ, সাহসী, বুদ্ধিদিপ্ত এবং নীতিবান। আমার স্বপ্ন একদিন সারা পৃথিবীর মানুষ তোমার জন্মদিন পালন করবে।" 

রাতে ঘুমাতে যাবার সময় সে বললো, "মা, আজ তো তোমার স্বপ্ন পূরনের দিন। পৃথিবীর কত মানুষ আমাকে শুভেচ্ছা জানালো।" 

আমি তার স্বপ্নপুরণের সহজ সরল হিসেবনিকেশ শুনে একটু হাসলাম। কিছুদিন আগে একদিন হঠাৎ সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো,
"মা, রবীন্দ্রনাথ ক'বার নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন? 

আমি বলেছিলাম, " নোবেল, অস্কার এগুলো এতো বড় পুরষ্কার যে একবার পেলেই তার যোগ্যতা প্রমানিত হয়ে যায়। একটা পেলেও নোবেলবিজয়ী , চারটা পেলেও নোবেলবিজয়ী। বুঝেছো?" 

সে মাথা নেড়ে বললো সে বুঝেছে। আমি বললাম, "বলো তো কী বুঝেছো।" 

সে বললো, "নোবেল পুরষ্কার পাওয়া মা হওয়ার মতো। যার একটা বেবি, সে ও মা। যার চারটা বেবি সে ও মা।" 

সে কথাটা বলে খুব সহজ স্বাভাবিকভাবে হেঁটে চলে গেলো। আমি বেশ অনেক্ক্ষণ তার কথা শুনে নড়াচড়া করতে ভুলে গেছিলাম।
তার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে সেদিনের কথাটা মনে করে ভাবছিলাম, আমার লেখার জন্য না, একদিন তোমার জন্যই সারা পৃথিবীর মানুষ তোমার জন্মদিন পালন করুক। সৃষ্টিকর্তা আমার প্রার্থনা শুনলেন কিনা জানি না। তবে আমি মনে মনে আমার মেয়েকে আজ নোবেলবিজয়ী ঘোষণা করে দিলাম। 

শুভ জন্মদিন মা। আমি যদি না ও থাকি, আমার এই লেখাটা পড়ে অনেকে তোমাকে মনে করিয়ে দেবে তুমি মাত্র এগারো বছর বয়সে মায়ের কাছ থেকে একটা নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলে।

Post a Comment

0 Comments