যে মেয়েটিকে প্রথম ভালোবেসেছি সে আজ ভালোবাসে তার স্বামীকে। কারণ আমি বেকার বলে সেই দিন মেয়েটির বাবা মা আমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল। বিয়ে দিয়েছিল নামকরা গৃহস্থ্য পরিবারে। তার খুব কাছের এক বান্ধবী সেদিন এসে বলেছিল, "যতটা সুখী মনে করো সে কিন্তু ততটা সুখী নেই।"
কেন যেন সেদিন অনেক কেঁদেছিলাম। আমার না হোক, আমি তো চেয়েছিলাম সে সুখী হোক।

খুব ছোটোবেলার এক বন্ধু ছিল। সারাক্ষণ আমাকে নিয়েই মেতে থাকত। একই প্লেটে ভাত খেয়েছি, ঘুমিয়েছি অনেকদিন একই সাথে। তখন মারবেল খেলার গল্প করতাম রাত জেগে। আমি এখনো খুঁজি তাকে গল্প করব বলে। কিন্তু এখন আমি ছাড়াও দার অনেক বন্ধু আছে। আমার গল্পগুলো শোনার সময় আর হয় না তার।

আমি, তুমি, অনেকেই অনেক বড়ো হয়ে গেছি। তবে আমাদের কিছু কিছু মানুষের ভিতরের "আমি" টা এখনো ছোটো-ই রয়ে গেছে। আমাদের কচি মনের ছোটো ছোটো অবুঝ ভালোবাসার দাম সবার কাছে পাই না।
আজ একজনের সাথে সারাটি দিন আনন্দে কাটিয়েছি, সেই লোভে অবুঝ মনটা পরদিন তাকেই খুঁজে বেড়াবে।
গিয়ে দেখি সে মেতে আছে অন্য কাউকে নিয়ে। কারণ তার মনটা আমার মনের মতো অবুঝ না। সে অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে। কিন্তু অবুঝ মনের চাওয়াটা বুঝার ক্ষমতা তার হয়নি।

প্রিয় মানুষটার নামের পাশে সবুজ বাতি দেখা গেলেই ভিতরে চিনচিন করে ব্যথা করে। কারণ আমিও যে বড্ড বেশি অভিমানী। সে মেসেজ না দিলে আমি কেন দিব?
তবুও তার লেখা পোস্টগুলো প্রতিদিন পড়ি, বারবার পড়ি। কখনো মেসেজ করতে গিয়েও ফিরে আসি। কখনো লাইক অপশনে টাস লেগে মেসেজ চলে গেলেও মেসেজ সিন করার আগেই লিখে দেই, "সরি, টাচ লেগে চলে গেছে।"
কখনো অনেক অজুহাতে একটু কথা বলার চেষ্টা করি। "আজ না ছোটো বোনের বার্থ-ডে ছিল, ছবিটা সুন্দর না? আচ্ছা, কেউ ট্যাগ করলে কী করে বন্ধ করব?"
এমন কত শত অজুহাতে প্রিয় মানুষটার সাথে আমরা কথা বলতে চাই। তবে আমাদের অবুঝ মনের চাওয়া তারা কখনো বুঝবে না।

কখনো মাটিতে কারো নাম লিখেছো কাঠি দিয়ে? আমি লিখতাম প্রিয় মানুষটির নাম। আবার কেউ দেখে ফেলার আগে মুছে ফেলতাম। খাতায় বা বইয়ের ভিতর নাম লিখে আবার কলম দিয়ে মোটা করে কেটে দিতাম।
আমাদের এই ছোট্ট পাগলামি আর ভালোবাসা প্রিয় মানুষগুলো কখনো জানবে না। তবুও পাগলামি করে যাই, কারণ মনটা যে অবুঝ।

নাটক বা ছবি যখন দেখি, তখন নায়ক বা নায়িকা ভেবে নেই নিজেকে। আর নিজের প্রিয় মানুষটাকে কল্পনায় এঁকে দৃশ্য অবলোকন করি। রাত্রি যখন গভীর, চারিদিকে যখন নীরবতা, চোখে যখন ঢুলু ঢুলু ভাব, তখন ঘুমানো আগে প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে নিজের মত কল্পনা করি, স্বপ্ন আঁকি।
এটা আমার দোষ নয়, আমার মনটা যে অবুঝ।

আমাদের ভাই, বন্ধু বা প্রিয় মানুষটি যদি কখনো জানতে পারত দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কর্মকান্ডে তার ছায়া রয়েছে, তাহলে কখনো আমাদের কষ্ট দিত না। ভালোবাসত আমার চাইতে বেশি আমাকে।

প্রিয় মানুষটির প্রতি আমাদের অসংখ্য কথা থাকে, যা ইচ্ছে করলেও বলা হয় না। ঠোঁটের মধ্যে কথাগুলো আসে, তাদের কান অবধি পৌছানো হয় না।
যেমন, "ভাল থেকো" "সুখে থেকো" "খুব মনে পড়ছে তোমায়' "কীভাবে ভুলে গেলে?" কেমন আছো'
এমন হাজারো কথা আমরা বিড়বিড় করে বলি। মাঝেমধ্যে বন্ধু বা প্রিয় মানুষটাকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে,
"আমি তোমাকে এত্তগুলা ভালোবাসি।"