বিড়ি খাওয়ার কারনে চাচাতো বউ যখন উদুম কেলায়

বউ-- “ আফনে রাত-বিরাইতে বিরি খান আমার বালা লাগে না। ”

খুব দুঃখ লইয়া বৌ কথাখান কইলো। আমি ঝারি দিয়া কইলাম।

“ তর কী হিংসা অইতাছে নাকি? খাইবি বিরি? ”

বউ-- “ ছিঃ ছিছিছি, এমন কথা আফনে কইতে পারলেন? আমি বেডি মানুষ অইয়া বিরি টানুম? ”

“ তাইলে চুপ কইরা থাক। আমার মনে বহুত দুঃখ। ”

সে চোখমুখ ত্যাড়া কইরা কইলো।

“ আফনের মনের দুঃখ লইয়া আফনে বাইরে যান। বিরির ধোঁয়ায় আমার বমি আয়ে। ”

বৌয়ের কথা চিমটিখানি হইলেও হুনা লাগে। বাইরে যাইতে লাগলাম।

“ কী অইলো? কই যান? ”

“ বাইরে যাইয়া বিরি টানুম। তোর না বিরির ধোঁয়ায় বমি আয়ে? ”

অভিমানী হইয়া সে কইলো।

“ থাউকগা, আমার কথা আফনে কোনোদিনও ভাবেন নাই। আইজ্জাও ভাবন লাগবো না। এইহানে বইসাই টানেন, বাইরে অনেক ঠান্ডা! ”

আমি চিমটিখানি কথা হুনলাম। এক বিড়ি শেষ অইলে আরেক বিড়ি ধরাইতাছি। সে আমার দিকে হা কইরা চাইয়া রইছে।

“ এইভাবে কী দেহস? আমার কী রুপ বাইরছে? ”

সে লজ্জা পাইলো কিনা বুঝলাম না।

“ আফনে আমার দিকে বালা কইরা তাকান না। এরলাগি কী আমিও আফনের দিকে তাকাইতে ফারতাম না? ”

“ তোর লগে এরলাইগাই আমি কথা কম কই৷ কথা খালি ঘুরাস। এইসব রুমান্টিক কথা আমার বালা লাগে না। ”

“ আফনের তো আমার কিসুই বালা লাগে না। আমারে বিয়া করার কী দরকার আছিলো? বিরি লইয়াই থাকতেন। ”

বিড়ির প্যাকেটে চাইয়া বুকে ব্যথা অনুভব করলাম। বিড়ি শেষ, প্যাকেট ফাকা !  

“ তোরে অনেক সুন্দর লাগতাছে নীলা । তোর অভিমানী মুখটা কিযে লাগে তুই জানস না। ”

মারিয়াম খুশি হইয়া গেছে। মুখখানাও তাঁর লাল হইয়া গেছে।

“ তোর কাছে দশটা ট্যাকা আছে রে? রাইত পার করার মতন মাল আমার কাছে নাই! ”

নীলার  মুখের মানচিত্র ফট কইরা কালা হইয়া গেছে।

“ এমুন কপাল লইয়া জন্ম লইছি খোদা। মাইনষের টাকার দরকার পড়লেই প্রেম আসে। আমার কাছে কোনো ট্যাকা-ফ্যাকা নাইগা। ঘরে হলুদই নাই তিন দিন হইয়া গেছে! ”

“ তোরে আমি কালকে দিয়া দিমু। দশটা ট্যাকা কর্যা দে না। আমি জানি তোর কাছে ট্যাকা আছে। ”

“ আফনের যদি সেই কাল আদও আইতো। তাইলে কিডনি বেইচ্যাও আমার ঋণ শোধ করতে পারতেন না। ”

“ সত্যিই দিয়া দিমু। তুই অনেক লক্ষ্মী মেয়ে। দে না। ”

“ এক কথা বারেবারে কইতারতাম না। ”

অসহায় হইয়া বইসা থাকা ছাড়া আমার কোনোও উপায় দেখতাছি না। উদাস হইয়া জানালার দিকে চাইয়া রইছি।

“ বিরি টানা শেষ আমার। ঘুমা তুই। ”

“ সবসময় তুইতোকারি করেন ক্যান? বালা কইরা একটু কথাও কইতে পারেন না? ”

“ মাফ কইরা দেন আফা। আমার বিরি টানা খতম। আফনে ঘুমাইতে পারেন। ”

সে আর কিছু কইলো না। কম্বল গায়ে দিয়া শুইয়া পড়লো। কিছুক্ষণ যাইতে না যাইতেই আবার উইঠা বইসা পড়লো।

“ জানালা বন্ধ করেন। ঠান্ডা বাতাস আইতাছে। ”

জানালা বন্ধ কইরা দিলাম। সে আবার শুইয়া পড়লো। পুনরায় উইঠা কইলো।

“ ঘুম আইতাছে না। ঠান্ডা লাগে। ”

“ সিলিং এর উপরে আরেকটা কম্বল আছে। ঐটা নামাইয়া, দুই কম্বল একলগে কইরা ঘুমা। নাইলে আমার লগে বইসা বিরি টান আয়। ”

“ যে কোনো কথার মাঝে বিরি আনাই লাগে? এই বিরির মতন হেডার জিনিষ কোন হালায় বানাইছে? একবার তাঁরে পাইলে খুন কইরালাইতাম! ”

এইসব কথায় আমি কান দেই না। নিজের মতন বইসা রইলাম।

“ কোন ছেড়ির লাগি অতো উদাস আফনে? আমারে একটু কওন যাইবো? ”

“ দশটা ট্যাকা দে, বিরি আনি, তারপর টানতে টানতে কই? ”

“ আমারে বেইচা দেহেন ট্যাকা-পয়সা পান কিনা। এছাড়া তো আর কিছুই বাকি নাইগা! ”

কথার উত্তর দিতে পারলাম না।

“ বেশি সুন্দরী আছিলো? অনেক বেশি? ”

“ দুনিয়াতে বিরির চাইতে সুন্দর তো আমি আর কিছু দেহি না। ”

“ আফনে একটা অমানুষ। ”

এই কথারও জবাব আমার কাছে নাই। আমি হয়তো মানুষের কাতারে আর নাই। আবার সে কইলো।

“ আমার ঘুম আইতাছে না। ”

“ কাইল বাপের বাড়ি যাইস। মনও বালা অইবো। ঘুমও অইবো। আসার সময় খালি মনে কইরা এক প্যাকেট বিরি আনিস। খুশি হমু। ”

“ আফনেরে আমি আর খুশি করতে ফারতাম না। আমার খুশি আফনে একটু দেহেন? ”

“ তোর খুশির লাগি দুই প্যাকেট বিরি দিনে কম খাই। আর কী চাস? ”

“ মাইরা ফালান আমারে। অতো খুশি আমার আর সইহ্য হয় না। ”

“ তুই মইরা গেলে আরেকটা বিয়ে করতে বহুত ট্যাকা লাগবো। সেই ট্যাকার অর্ধেক বিরি খাইয়া শেষ করলে মন্দ হয় না। ”

“ মনডায় চায় নিজের কপালে নিজে ঝারু মারি! ”

তাঁর কপাল। সে ঝারু মারবো না লেবু মারবো তাঁর একান্ত ব্যাপার। এই ব্যাপারে আমার কিছু কওন নাই।

“ একটা কথা কই? আমার লাগতাছে আফনে অন্য কোনো ছেড়িরে বিয়া করতে চাইতাছেন। আফনে চাইলে বিয়া করতে পারেন। আমি কিছু কমু না। ”

“ ফালতু কথা রাখ। তোর বাপ ক্যারে বিরির ব্যবসা করে না? এই কথার জবাব আগে দে। ”

“ দেহেন রাইত অনেক হইসে। ঝগড়া করতে চাইতাছি না। আমারে ঘুমাইতে দেন। ”

“ থাপ্পড় দিমু একটা। আমি কী তোরে ঘুমাইতে মানা করছি? ঘুমা না। ”

“ একলা আমর ঘুম আইতাছে না। ”

“ একলা কই? আমি কী রুমের বাইরে? আর না আইলে তো কইলামই বিরি টান আমার লগে। ”

“ কম্বলের তলে একলা একলা ঠান্ডা লাগে। ”

“ এক কাম কর, বিরি ধরা কম্বলের নিচে৷ বিরির আগুনে গরম লাগবো। ”

“ সারাদিন কামকাজ কইরা রাইতে আফনের এই বিরি আর বিরি, মরণ হয় না ক্যান আমার? ”

চুপ কইরা রইলাম।

“ আমারে কী ঘুমাইতে দিবেনই না? ”

“ ভাইরে আমি আবার কী করছি? ”

“ এইদিকে আয়েন। আমি ঘুমাই আফনের হাত ধইরা। ”

“ তাইলে বল দশ ট্যাকা দিবি? কালকে আমি দিয়া দিমু সমস্যা নাই! ”

অপরাধের কী কইলাম বুঝলাম না। সে চৌকি থাইকা উইঠা আমার চুল টানা শুরু করছে! মাথার চুলগুলো সব শেষ, ও আম্মাগো! 

|