শশুড় বাড়িতে নতুন এসেছি, এই সবে ঘন্টা দুয়ের মত হবে। ভদ্রলোকের ভাবীরা বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে গেলো কয়েক মিনিট আগে। পৃথিবীর সবচেয়ে ইরিটেটিং এবং ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার হলো এই ভাবী চরিত্রগুলো।
আমার ভেতরে কোনো ভয়,শঙ্কা বা রহস্যজনক কিছুই কাজ করছে না। একটু আগ মুহুর্তেও বাবা মায়ের কথা ভেবে কান্না করছিলাম। এখন ভাবছি অন্য কথা..
"ইশ, একটু ছাদে যেতে পারলে ভালো লাগত। এক কাপ কফি খেতে খেতে রাত্রের জোৎস্না দেখতাম আর গলা ছেড়ে গান ধরতাম। আচ্ছা, কোন গানটা গাইতাম.??
"এখন অনেক রাত,তোমার হাতে আমার হাত.."
আরে, আমি তো আর একা নই। কিন্তু না, আমার রাতটা আমিই উপভোগ করবো। কাউকে তার ভাগ দেবো না। ভাগ দিতে গেলে ভদ্রলোকের ভালবাসার রোমাঞ্চে জোৎস্নাটা উপভোগ্য হবে না।
দরজা খোলার শব্দ হলো। ভদ্রলোক আমার দিকে আর পাঁচটা স্বামীর মত অবাক হয়ে তাকালেন না। মাথা নিচু করে হাতের ঘড়িটা টেবিলে রাখলেন।
সেসব নিয়ে আমার মাথাব্যাথা নেই। আমি ভাবছি-কখন উনি ঘুমাবেন আর আমি টুপ করে ছাদে যাবো.!!
আমার ভাবনার অবসান ঘটিয়ে উনি আগ বাড়িয়ে বললেন--
""তোমার হাতটা দাও তো...
অবাক হবার চেয়েও রহস্যজনক মনে হলো। প্রথম কথায়-প্রথম আলাপে কেউ হাত ধরতে চায়.? তার উপর ডান হাত নাকি বাম হাত সেটাও উল্লেখ করেনি।
--নাহ, আপনার যা বলার বলুন। হাত দেবো না।
ভদ্রলোক আমার কথা অগ্রাহ্য করে হাত ধরে টেনে বিছানা থেকে নামালেন।
--আরে, আপনি তো বড্ড নির্লজ্জ.!
--প্রেমিক হতে গেলে একটু নির্লজ্জ হতে হয়।
--আপনি প্রেমিক.?
--সকল স্বামীই একেকটা প্রেমিক..
কথাগুলো অসম্ভব রকম সুন্দর। এত সাজানো গোছানোভাবে কোনো ছেলে কথা বলে নাকি.? ছেলেদের কথা হবে-ভাঙাচোরা,এবড়োখেবড়ো, অগোছালো। যে এলোমেলো কথা শুনে প্রেমিকা তার প্রেমিককে পাগল প্রেমিক আখ্যা দিবে।
আমার সে সুযোগ নেই।
সন্দেহ হলো-কবিতা লিখে হয়ত।
মুখ ফসলে বলেও ফেললাম--
--আপনি কি কবিতা লিখেন.?
--মনে হবার কারণ.??
--কবিরা সবসময় প্রেমিক হতে চায়।
-তুমি আসলেই বড্ড বেশি কথা বলো।
-আপনার অবজ্ঞায় সেটা বন্ধ হবে না।
ভদ্রলোক আর কথা বাড়ালেন না। হাত ধরে নিয়ে চলেছেন তার কোনো সাজানো স্বপ্নে। আমার গায়ে জড়িয়ে আছে বিয়ের শাড়ি,গহনা। এসব টেনে হাটার অভ্যেস নেই। কিন্তু আমি নিরুপায়..
এতক্ষণে চলে এসেছি একটা সাজানো গোছানো ছোট্ট কামরায়। ভদ্রলোক রুমের লাইট জ্বালালেন। উনি তখনো হাতটা ধরে রেখেছেন।
ঘরের ভেতর চোখ বুলালাম। সারা ঘর বইয়ের সেল্ফ আর বইয়ে সাজানো। রবি ঠাকুরের শেষের কবিতা, হাফিজুরের আগুন পাখি সহ পৃথিবীর বিখ্যাত সব লেখকদের গল্প-কবিতার সামগ্র।
ভদ্রলোক আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন--
-প্রথম রাতে নাকি স্ত্রীদের বিশেষ উপহার দিতে হয়। আমার কাছে এটাই আমার সাম্রাজ্য। আজ থেকে তুমি এই সাম্রাজ্যের রাণী।
আমি বিস্ময় ভরা চোখে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
--আপনি কিভাবে বুঝলেন আমার সেরা স্বপ্নগুলোর মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ ছিল।
কে আপনি.?
-সে হিসেব নাহয় আজ থাক..
--আপনি পুরোটাই রহস্য..।
-রহস্য একবারে জানতে নেই। একটু একটু করে পান করতে হয়।
--তা বটে।
--তোমার যদি অসুবিধে হয় তবে হাতটা কি ছেড়ে দেবো.?
আমার ততক্ষণে সমস্ত বিস্ময়ের ঘোর ঠেলে নেশা পেয়েছে। ভদ্রলোকের প্রতি মারাত্নক নেশা লেগে গেছে। তার জবাব দেবার ইচ্ছে হলো না। শুধু দুহাতে তার হাতটিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।