ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফিজিক্সে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া এক ভাইয়াকে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করার পরও তিন বছর পর্যন্ত চাকরির জন্য এদিক ওদিক ঘুরতে হয়েছিল।
অনেক ঘোরাঘুরি করেও যখন চাকরি পাচ্ছিলেন না তখন জীবনের উপর হতাশ হয়ে তিনি বলেছিলেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কি চুলই বা ছিঁড়লাম যদি সময়মতো ভালো একটা চাকরি না পাই?"
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার এক পরিচিত বড় ভাই আইন বিভাগ হতে মাস্টার্স করে বের হয়ে দুই বছর ঘোরাঘুরি করেছিলেন। দুইবছর পরে গিয়ে অনেক কষ্টে একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি নিয়েছিলেন
আইনে পড়ে এইদিকে কেন? সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, "দুই বছর তো ঘুরলাম। যেই লাউ সেই কদু।"
আমার এক বন্ধুর বড় ভাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাশ করে বের হওয়ার সাত মাসের মাথায় চাকরি পেয়ে গিয়েছিলেন। সেটা দেখে উনার এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বন্ধু মন্তব্য করেছিলেন, "এত কষ্ট করে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে লাভটাই কি হলো?"
এসব নিয়ে কথা একটু পরে বলছি। এবার কথা বলছি স্টুডেন্টদের ক্যাটাগরি নিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দিকে খেয়াল করলে দেখবেন কিছু ছাত্রের সকাল শুরু হয় দৈনিক পত্রিকা দিয়ে। কারো দিন শুরু হয় প্রেমিকার ফোন কল দিয়ে আবার কারো দিন শুরু হয় দুপুরবেলাতে গিয়ে।
হল থেকে বের হয়ে কেউ যায় ক্লাস করতে, কেউ যায় বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দিতে আবার কেউ যায় প্রেমিকার সাথে ঘুরতে।
সন্ধ্যাবেলায় কেউ বসে পড়ালেখা করতে, কেউ যায় টিউশনে, কেউ যায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে আবার কেউ যায় প্রেমিকার সাথে দেখা করতে।
পড়তে বসা কারো পাশে থাকে শুধুই একাডেমিক বই আবার কারো পাশে একাডেমিক বই এর পাশাপাশি থাকে জব প্রিপারেশনের বই।
এভাবেই আমরা একেকজন একেকভাবে বেড়ে উঠি। এভাবে বেড়ে উঠার পর একেকজনের জীবন হয়ে উঠে একেক রকম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফিজিক্সে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া যেই ভাইয়াটির কথা বলছিলাম তিনি ভাইভা দিতে গেলে হাতে পায়ে কাঁপুনি শুরু হয়ে যেত। কথা মুখে আটকে যেত। ঘামে কপাল ভিজে যেত। নিজে যে ভালো জানতেন সেটা মানুষকে জানানোর ক্ষমতা তার ছিল না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ভাইয়ার কথা বলছিলাম তিনি আইন বিভাগে পড়লেও জীবনে কখনো পাঠ্যবই ধরে দেখেন নি। বন্ধু-বান্ধবীর শীটের উপর ভরসা করে পরীক্ষা দিতে যেতেন। তাহলে তিনি কীভাবে আইনের ধারা বুঝবেন?
যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইয়ার কথা বলেছি উনার সাথে যখনি দেখা হতো তখনি উনার হাতে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স অথবা জব প্রিপারেশনের বই দেখতাম। সেকেন্ড ইয়ার থাকাকালীন সময় হতেই তিনি জব প্রিপারেশন শুরু করে দিয়েছিলেন।
আপনি কিভাবে গড়ে উঠছেন সেটা আপনিই ভালো জানেন।
দিনশেষে গিয়ে আমরা দোষ দিই আমাদের প্রতিষ্ঠানকে।
দোষ দিই আমাদের ডিপার্টমেন্টকে।
সবশেষে গিয়ে আমরা দোষ দিই আমাদের ভাগ্যকে।
আমরা নিজেরাই নিজেদের পঙ্গু বানাই। হ্যাঁ, এভাবেই।
একবারও কি ভেবে দেখেছেন আপনাকে এই পঙ্গুত্ব ঠিক কতটা গ্রাস করেছে?