রেনু  ❤

রেনুর নিজের কাছেই বেশ অপরাধ বোধ হতে লাগল। সামান্য বিষয়ে ছেলেটাকে কত কথায় না শোনাল সে , এখন কেবলিই মনে হচ্ছে যদি অনিককে ফোন করে সমস্তটা বলতে পারত। অন্তত নিজের বুকের উপর থেকে বড় একটা পাথর সরে যেত !

রেনু অনিককে যে  কতটা ভালবাসে সেটা  অনিক জানে  বেশ ভালভাবেই জানে। এ কারনেই রেনু ওর সাথে যতবারই রাগ করেছে ও কখনোই তা গায়ে মাখে নি। রেনু  রেগে গেলে ওর গাল লালা হয়ে যায়। যেটা ওর সৌন্দর্য়কে আরও বাড়িয়ে দেয়।অনিক এটা বেশ উপভোগ করে।  দোষ যার ই হোক না কেন রেনু রেগে গেলে অনিক স্বাভাবিকের থেকেও আরও চুপ থাকে।

অনিকের এমন ধৈর্য দেখে রেনুর রাগ এখন বেশ কমে এসেছে। বলতে গেলে ও এখন আর তেমন রাগ করেই না। অনিক এমন ধৈর্য ওর মায়ের কাছ থেকে শিখেছে। অনিক ও জানত একদিন না একদিন রেনু ওর মনের মতই হয়ে যাবে !!

কিন্তু কাল ছুটির দিন ছিল আর রেনুর এক বান্ধুবি ওকে দাওয়াত দিয়েছিল তার জন্মদিনে। রেনু ছাড়াও ওর আরও বেশ কিছু ফ্রেন্ডও আসছিলো। রেনু ওদের সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে রাত ১২ টা হয়ে গেল ওর কোন হুশ ই  ছিল না। পরে ওর ওই বান্ধুবির বাসাতেই ছিল রাতে। সকাল সকাল যখন বাসায় আসলো , ওর মা ওকে বেশ কড়া রকমের কিছু কথা বলল। বর্তমানের যে সময় তাতে রাতে বাড়ির বাইরে রাত কাটানো নিয়ে এমন হওয়াটা খুব অস্বাভাবিক না । এ নিয়েই সেই সকাল থেকেই রেনুর রাগ উঠে রইল।

এর মধ্যে অনিক আবার ফোন করে বলল যে আজ বিকালে দেখা করার কথা ! কেবল দেখা করার কথায় বললো না আবার বললো যে আজ রেনুর হাতের পায়েশ খেতে ইচ্ছা করছে । এসব শুনে রেনু আর নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারল না সকালে ওর মায়ের উপর থাকা সব রাগ অনিকের উপর দিয়ে গেল। তখন ওর কোন হিসাব নেয় যে ও কী বলছে !

ফোন কেটে দেওয়ার পরই মনে হল ও অনিককে এ কী সব বলল ! মুখে যা এসেছে তাই বলেছে। ওর মনে হচ্ছে অনিক কে আবার ফোন করে ক্ষমা চেয়ে নিতে। নিজের ভিতরের অপরাধ বোধটা যেন আরও বেশি করে জেগে উঠেছে রেনুর ভিতরে। রেনু জানে অনিক হয়তো ওর সামনে কখনোই রাগ বা অভিমান কোনটাই দেখাবেনা  কিন্তু ওর কথার ভিতরে একটা চাপা অভিমান থাকবেই  !! রেনু জানে ও বিকালে যাওয়ার কথা না করে দিলেও অনিক ঠিকই চন্দ্রিমা উদ্দানের ওই বেঞ্চটাতে বসে থাকবে।
ও কখনোই এ বিষয়টা জানতে পারতো না যদি না ! সেদিন এক কাজের জন্য না করে দিয়ে, পরে অনিকে না জানিয়েই  যেত ।

রেনু আর কিছু না ভেবে দ্রুত বিরিয়ানি রান্নার জন্য কিচেনের দিকে পা বড়ালো। অনিকের সামনে বিরিয়ানি ধরলে ওর ওসব মনখারাপ টারাপ কিছুই থাকবে না। সব কেমন হাওয়াই মিলিয়ে যাবে।

রেনু বিকালে যখন সেই বেঞ্চির সামনে গিয়ে হাজির তখন কেমন কেমন একটা ধাক্কার মত খেল। অনিক ওর সামনে দুইটা কোকোকোলার বতল নিয়ে বসে আছে। রেনুর সব কিছুই কেমন অবিস্বাসের মত লাগল। রেনু যখন ওর পাশে বসল, অনিক আস্তে করে বলে উঠল -বিরিয়ানির বাটিটা দাও

রেনু এবার আরও বেশি চমকাল অনিক তো জানেই না যে ওর ধরে থাকা প্যাকেটের ভিতরে বিরিয়ানি আছে। রেনু আর কিছু না বলে প্যাকেট থেকে বাটিটা বাড়িয়ে দিল অনিকের দিকে।  রেনু অনিকের ভালবাসা দেখে এতটাই অবাক যে ওর চোখ দিয়ে পানি আসতে লাগল।সকালে সে অনিকের সাথে কত খারাপ ব্যাবহার করেছে কিন্তু ও রেনুর সাথে কত স্বাভাবিক ভাবেই না কথাগুলো বলছে। 

রেনু অনিকের হাতটা ধরে বলতে লাগল
অনিক আমি তোমাকে বড্ড বেশি ভালবাসি ! তোমাকে কখনোই হারাতে দিতে পারবো না