অফিসে বসে কাজ করছি এমন সময়

অবন্তীর ফোন।

:-আপনি কী আজ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে পারবেন?(অবন্তী)

:-কেনো?কোনো কিছু লাগবে?(আমি)

:-না।আসলে একটু বাইরে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে।

:-এনামুলের সাথে যাও।(আমার ছোট ভাই)

:-থাক লাগবেনা।আপনার সাথে ছাড়া যাবোনা।

:-আচ্ছা আমি দেখি ছুঁটি নিতে পারি কীনা!

:-আচ্ছা রাখছি।

:-ওকে।

আমি হুসাইন।একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি।যার সাথে ফোনে কথা বললাম সে আমার বউ অবন্তী।খুব সহজ সরল মেয়ে।আমাদের বিয়ে হয়েছে ৯মাসের বেশি হয়ে গেছে তবুও আমাকে আপনি করে বলে।আমাদের বিয়েটা হয়েছিলো পারিবারিক ভাবে।একবার একটা মেয়েকে ভালোবেসেছিলাম।সেই মেয়েটা একদিন আমাকে ঠকিয়ে চলে যায় তারপর থেকে আর রিলেশনশিপে জরায় নি।চাকরী পাওয়ার পর আব্বু আম্মু আমার জন্য মেয়ে ঠিক করে।আমি না করিনি কারণ আব্বু আম্মুই আমার কাছে সব।

আজ বসন্ত।অন্য মেয়ের মত অবন্তীরও ঘুরতে যাওয়ার শখ জেগেছে সেটা বুঝতে পারছি।বিয়ের পর এই প্রথম মেয়েটা আমার কাছে কিছু চাইলো। আমাকে ওর ইচ্ছা পুরণ করতেই হবে।

বসের কাছে গেলাম ছুঁটি চাইতে।আমাদের অফিসের বস খুব ভালো মানুষ।রসিক প্রকৃতির।

:-স্যার আসবো?(আমি)

:-আরে হুসাইন সাহেব যে, আসুন।(স্যার)

:-স্যার আজকে আমার ছুটি লাগবে।

:-বউকে নিয়ে ঘুরতে যাবে নিশ্চয়?

:-না মানে-আসলে ও এই প্রথম আমার কাছে কিছু চাইলো তাই।

:-আচ্ছা যান।

:-ধন্যবাদ স্যার।

স্যারের রুম থেকে বের হয়ে অবন্তীকে ফোন দিয়ে বললাম রেডি হতে।আমি জানি মেয়েটা খুব খুশি হবে।প্রিয় মানুষের কাছ থেকে একটু সময় পাওয়া যেকোনো মেয়ের জন্যই বড় পাওয়া।অবন্তীকে সময় দিতে পারবো এটা ভেবে আমার মনের মধ্যেও এক ধরণের ভালোলাগা কাজ করছে।

বাসায় এসে বেল চাপতেই দরজা খুলে গেলো।আমার জন্য অবন্তী মনে হয় ওপাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো।অবন্তীর দিকে তাকাতেই বড় রকম ক্রাশ খেলাম।এ যেনো সাক্ষাৎ পরী।হলুদ শাড়িতে অসাধারণ লাগছে অবন্তীকে।খোপায় গোলাপ ফুল অবন্তীর সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

:-ওই এভাবে তাকিয়ে কী দেখেন?আমার লজ্জা লাগেনা বুঝি?(অবন্তী)

:-ইউল ইউ মেরী মি।(আমি)

আমার কথা শুনে অবন্তী খিলখিল করে হাসতে শুরু করলো।হাসিতো নয় যেনো মুক্ত ঝড়ে পড়ছে।আমি হাজার বার এভাবে অবন্তীর প্রেমে পড়তে চাই।

:-নিজের বউকে কেউ এমন করে এসব বলে?হি হি হি হি(অবন্তী)

আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম

:-না মানে মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে।চলো বের হই।

:-আপনি ফ্রেশ হবেন না?

:-না। এভাবেই যাবো।

:-একদমই না।আপনার জন্য আমি পান্জাবি রেডি করে রেখেছি।ফ্রেশ হয়ে পড়ে নিন।

:-পান্জাবি পড়তে আমার ভালো লাগেনা।

:-ওই আমি পড়তে বলেছিনা?(কোমরে হাত দিয়ে)

:-আচ্ছা পড়ছি।

আমি ফ্রেশ হয়ে পান্জাবি পড়ে নিলাম।এরপর অবন্তীকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

আমি আর অবন্তী রিক্সায় বসে আছি।অবন্তীর চুল উড়ে এসে আমার চোখে মুখে পড়ছে আর আমি মুগ্ধ হয়ে সেই দৃশ্য দেখছি।অবন্তীর চুল থেকে শ্যাম্পুর গন্ধ ভেসে আসছে।আমাকে মাতাল করে দিচ্ছে।

:-অবন্তী?(আমি)

:-বলুন।(অবন্তী)

:-ভালোবাসি।

:-আমিও।

:-কী?

:-ভালোবাসি।

:-হুম।

তারপর আবার দুজনেই চুপ।আমাদের দেখে অনেকেরই মনে হতে পারে নতুন প্রেম হওয়া কোনো জুটি রিক্সায় চড়ে যাচ্ছে।মনে হতে পারে নতুন প্রেমের ফলে দুজন দুজনাকে কী বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।

:-আমার মাথা ঘুরছে।(অবন্তী)

:-হঠাৎ করে মাথা ঘুরছে কেনো?(আমি)

:-জানিনা।রিক্সা ঘুরাতে বলেন বাসায় যাবো।

আমি রিক্সাওয়ালাকে রিক্সা ঘুরতে বললাম।অবন্তীকে দেখে বুঝলাম ওর ভালোই কষ্ট হচ্ছে।

:-কাঁধে মাথা রেখে আমাকে ধরে থাকো।(আমি)

:-হুম রাখছি।(অবন্তী)

বাসায় সামনে এসে রিক্সা থামলো।আমি অবন্তীকে জিঙ্গেস করলাম ও হেঁটে যেতে পারবেনা কিনা।ও না সুচক মাথা নাড়া।আমি রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে অবন্তীকে কোলে তুলে নিলাম।

:-এই করছেন কি?ছাড়েন।কেউ দেখলে কী ভাববে।(অবন্তী)

:-আমার বউকে আমি কোলে নিয়েছি তাতে কার কী হু?(আমি)

রিক্সাওয়ালা মামা আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।রিক্সাওয়ালাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অবন্তী আমার বুকে মুখ লুকালো।

অবন্তীকে রুমে এনে বিছানায় শুয়ায়ে দিলাম।এরপর আম্মুকে ডেকে বললাম অবন্তীর কেমন জানি লাগছে দেখো।এটা বলে রুম থেকে বের হয়ে এলাম।বাইরে এসে আমি ডাক্তার আঙ্কেলকে ফোন দিয়ে আসতে বসলাম।ডাক্তার আঙ্কেলের মনে হয় কোনো কাজ ছিলো তাই তাড়াতাড়ি চলে আসলো।

আমি গেটের কাছ থেকে ডাক্তার আঙ্কেলকে নিয়ে রুমে এলাম।রুমে এসে খুব বেশি অবাক হলাম।আমার মত মনে হয় ডাক্তার আঙ্কেলও অবাক হয়েছেন।""আমার আম্মুর কোলে অবন্তী মাথা রেখে শুয়ে আছে আর আম্মু অবন্তীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে"'।বউ শাশুরির এমন ভাব দেখে আমার চোখে পানি ছলছল করছে।এমন দৃশ্য মনে হয় এখনকার বউ শাশুরির মধ্যে বিরল।

আমাকে আর ডাক্তার আঙ্কেলকে দেখে অবন্তী বালিশে মাথা রেখে শুয়ে রইলো আর আম্মু ওঠে দাঁড়ালো।

ডাক্তার আঙ্কের চেকাপ করে বললেন

:-মিষ্টি নিয়ে আসেন।পরিবারে নতুন সদস্য আসতে চলেছে।

:-সত্যিই?(আমি)

:-হ্যা সত্যি।

আমি আনন্দে ইয়াহু বলে লাফিয়ে ওঠলাম।ডাক্তার আঙ্কেলকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসলাম।গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ডাক্তার বললেন

:-তুমি খুব ভাগ্যবান এমন একটা বউ পেয়ে।তোমার মা আর তোমার বউয়ের এমন কান্ড দেখেই বুঝতে পেরেছি তারা কতটা আপন ভাবে দুজন দুজনাকে।এমন মেয়েকে কখনো কষ্ট দিওনা।

ডাক্তার আঙ্কেল চলে গেলেন।অন্যের মুখে প্রিয় মানুষের প্রশংসা শুনলে সবাই খুব খুশি হয়।

আমি রুমে আসলাম।আম্মু আর অবন্তী গল্প করছে।

:-আম্মু আব্বু কোথায়?(আমি)

:-বাজারে গেছে।চলে আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে।আমি যাই রান্না বসাতে হবে।(আম্মু)

:-আম্মা আমি থাকতে আপনি কেনো রান্না করবেন?আমিই রান্না করছি।(অবন্তী)

:-না মা।তোমার এখন বিশ্রামের দরকার।এ বাড়িতে আসার পর থেকেতো আমাকে কাজই করতে দাওনা।এখন তুমি কিছুদিন বিশ্রাম নাও আমি সামলে নিবো সবকিছু।(আম্মু)

:-না আম্মা আমি পারবো।আপনাকে কষ্ট করতে দিবোনা।

:-পাগল মেয়ে এত জেদ করা ভালোনা।এখন বিশ্রাম কর পরে এসে দুজন গল্প করবো।

আম্মু চলে গেলেন।আমি এত সময় বউ শাশুরির মিষ্টি ঝগড়া দেখছিলাম।আমার চোখ দিয়ে দুফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়লো।এটা দুঃখের নয় সুখেরঅশ্রু।আমার চোখের পানি অবন্তীর চোখ এড়ালোনা।

:-ওই আপনার চোখে পানি কেনো?কী হয়েছে?মন খারাপ।নাকি শরীল খারাপ।(অবন্তী)

কথাগুলো বলে বিছানা থেকে ওঠে এসে আমার কপালে হাত দিয়ে দেখলো।আমি অবন্তীর কোমড় ধরে কাছে টেনে নিয়ে বললাম

:-সব অশ্রু দুঃখের হয়না।কিছু কিছু সময় অতি আনন্দেও চোখ দিয়ে জল পড়ে বুঝলে।

:-বুঝলাম।

:-আজ আমি অনেক খুশি।তোমাকে পেয়ে আমি সত্যিই খুব ভাগ্যবান।

:-আমিও।

:-তোমার ঠোটে একটা আদর দিই?

:-ওই একদম দুষ্টুমি করবেনা বলে দিলাম বাবু দেখে ফেলবে।

:-দেখলে দেখুক গিয়ে।

:-পিছনে আম্মু।

আম্মুর কথা শুনে আমি অবন্তীকে ছেড়ে দিলাম।আমি ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে অবন্তী এক দৌঁড়ে দরজার কাছে চলে গেলো।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ভাঙ্গিয়ে বাইরে চলে গেলো।

আমিও জোরে বললাম

:-এখন বেঁচে গেলে রাতেতো কাছে পাবো তখন সব উশুল করে নিবো।

এমন পাগলী একটা বউ পেয়ে আমি খুব সুখি।দোয়া করবেন আমি যেনো সবসময় আমার পাগলী বউটাকে অনেক বেশি ভালোবাসতে পারি।

*সমাপ্ত*

আফসোস এখনো বিয়ের বয়সই হলোনা।