- এই রোহান.. কিরে তোর ঘুম এখনো ভাঙ্গলো না..
- কি ব্যাপার আম্মু, এত সকাল সকাল বিরক্ত করছো কেন..?
- এত সকাল কই, কত বেলা হয়েছে জানিস, তারাতারি উঠ। অনেক কাজ আছে আজ..
- কিসের কাজ, আমি কাজে টাজে নাই, আমি আরো ঘুমাবো..
- আরে উঠ তো, জেরিনকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করতে যেতে হবে না..
- জেরিনকে রিসিভ করতে যেতে হবে মানে..?
- আরে বাবা জেরিন আজ আসতেছে।
- কই আমাকে তো আগে বলনি?
- আরে আজ সকালেই তো ফোন করে বলল আসতেছে..
- ও..

জেরিন আমার কাজিন। আমাদের যৌথ পরিবার। ছোট থেকে এক সাথে বড় হয়েছি। ৫ বছর আগে চাচা- চাচী কানাডা চলে গেল। কাগজপত্রের সমস্যার কারনে জেরিনকে নিয়ে যেতে পারেনি। আর এমনিতেও জেরিন যেতে রাজি ছিল না। সারা দিন ঝগড়া ঝাঁটি, খুঁচা-খুঁচি লেগেই থাকতাম আমরা। তখন আমি সবে মাত্র র্ভাসিটিতে ভর্তি হয়েছি। আর জেরিন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার। আমরা মাত্র দেঁড় বছরের ছোট বড় ছিলাম। বন্ধুর মত সম্পর্ক ছিল আমাদের।

হঠাৎ একদিন..
- রোহান, তোর মোবাইলে এটা কার ছবিরে..
- কোনটা..?
- ঐ যে মেয়েটার ছবি তোর মোবাইলে..
- ও ওটা, ওটা তো রিচি আমার friend..
- শুধুই friend?
- হ্যাঁ... কেন?
- না তাহলে ঠিক আছে..
- আচ্ছা তোর ভাবী হিসেবে ওকে কেমন মানাবে রে..
- মানে..
- মানেটা বুঝিসনি ও যদি আমার বউ হয়..
- বউ হবে মানে..
- আমি ওকে খুব পছন্দ করি..
- ফাজলামি করছিস..
- আমি সিরিয়াস জেরিন..
- কই আমাকে তো আগে বলিসনি..
- এখনো বলার মত এমন কিছু হয়নিরে, আমি ওকে পছন্দ করি কিন্তু ও করে কিনা জানিনা..
- আচ্ছা আমি তর কি হইরে..
- তুই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড..
- শুধুই ফ্রেন্ড..
- না না, সুইট ছোট্ট চাচাতো বোনও লাগিস.. হা হা হা
- কিন্তু আমি তো, তোকে নিয়ে অন্য কিছু ভাবতাম....
- মমমমানে....?
- মানেটা তুই বুঝিস না, আমি শুধু তোর জন্য মা-বাবার সাথে কানাডা যাইনি..
- কি বলছিস তুই এসব, আমি কখনো এরকম feel করিনি.. তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড...
- ..... ও আচ্ছা ঠিক আছে বলে চলে গেল জেরিন..

তারপর...
৩ বছর আগে জেরিন কানাডা চলে যায়। কাউকে কিছু বলেনি। চাচাকে বলে চুপিচাপি কাগজপত্র রেডি করেছিল। আমি আটকানোর অনেক চেষ্টা করেও, আটকাতে পারিনি। যেদিন চলে যাবে, সেদিন আমি ইচ্ছে করেই খুব সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলাম। ওর সাথে যাওয়ার আগে আমার আর দেখা হয়নি। গত ৩ বছর ও আমার সাথে কোন রকম যোগাযোগ রাখেনি।
- কিরে রোহান এখনি উঠিসনি..
- উঠছি মা..
- তারাতারি রেডি হ... এখনি বেরুতে হবে তোকে..
- আচ্ছা মা..

রোহান বেরিয়ে পড়লো এয়ারপোর্টের পথে। ৩ বছর পর আজ দেখা হবে জেরিনের সাথে। ৩ টা বছর ও আমার সাথে কোন রকম যোগাযোগ করেনি, অনেক রাগ-অভিমান ছিল ওর উপর। কিন্তু ওকে দেখার পর সব রাগ-অভিমান যেন কোথায় হারিয়ে গেল। দুজন কেউ কারো সাথে কোন কথা বললাম না, ওর হাত থেকে লাগেজটা নিয়ে গাড়ীতে তুললাম।

গাড়ীতে দুজন পাশা-পাশি বসে আছি। কিন্তু কেউ কিছু বলছি না-
- কেমন আছিস রোহান..
- ভালো, তুই..
- ভালো ছিলাম না, কিন্তু এখন ভালো আছি...
- হুম..
- অন্য দিকে তাকিয়ে আছিস কেন..
- ৩ টা বছর আমার সাথে যোগাযোগ করিসনি, ৩ টা বছর.. (দীর্ঘ শ্বাঃস)
- ভেবেছিলাম আর কোনদিন তোর সামনা-সামনি হব না.. কিন্তু ফেইসবুকে তোর এই লেখাটা দেখার পর, ২৪ ঘন্টাও থাকতে পারিনি তোকে ছাড়া..
- রোহান কাদঁছে..
- জেরিন ও কাদঁছে..
- দূর পাগলি কাদঁছিস কেন..?
- তুই কাদঁছিস কেন..?
- আমি তো খুশিতে কাদঁছি..
- জেরিন রোহানের বুকে মাথা রেখে বলল, আমিও খুশিতে কাদঁছি..
.........................................................
জেরিন চলে যাওয়ার পর। রোহান বুঝতে পেরেছিল রিচির জন্য ওর আবেগ কাজ করে, ভালবাসা নয়। জেরিন ছাড়া রোনাহের কাছে ভালবাসা অস্তিত্বহীন। অনেক চেষ্টা করেছে#জেরিনকে বলতে কিন্তু জেরিন একটি বারের জন্য সুযোগ দেয়নি। জেরিন ফেইসবুক আইডিটাও deactive করে রেখেছিল।

৩ বছর পর জেরিন যখন আইডিটা active করলো রোহানের Pic দেখার জন্য। তখন একটা নোট চোখে পড়লো, যেটা ২ বছর আগে লেখা...

" তুইকি আর কোন দিন আমার সাথে যোগাযোগ করবি না। খুব মিস করি তোকে। অনেক ভালবাসি তোকে.. তর জন্য সারা জীবন অপেক্ষা করবো। তোকে ছাড়া একেকটা দিন, অনেক দীর্ঘরে। চলে আয় না জেরিন... তরই অপেক্ষায় আছি..

(বিঃদ্রঃ ভালবাসার মানুষটা যখন কাছে থাকে, সেটার উপস্থিতিটা আমরা টের পাই না। যখন দুরে চলে যায় তখনি হারে হারে বুঝতে পারি, তার অনউপস্থিিতটা কতটা বিষাধময়।)