সকালবেলা টিউশনিতে গিয়ে মিতু একটা ভয়ংকর জিনিস আবিষ্কার করল।ওকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না।আশ্চর্য কেউ ওকে দেখতে পাচ্ছে না কেন?ও তো আর ভূত নয় যে কেউ দেখতে পাবে না।তাহলে না দেখার কারণটা কি?সবাই ওর সাথে ইচ্ছা করে মজা করছে না তো?এক্ষুনি প্রমান হয়ে যাবে।ও স্যারের সামনে গেল।স্যার খুব কড়া।তিনি নিশ্চই ওর সাথে মজা করবেন না।আশ্চর্য স্যারও ওকে দেখতে পাচ্ছেন না।এবার মিতু খানিকটা ভয় পেয়ে গেল।ব্যাপারটা আবার পরীক্ষা করার জন্য ও রিনার পিঠে গিয়ে থাপ্পড় মারল।অন্য কোনদিন হলে রিনা সাথে সাথে মিতুর পিঠে একটা বসিয়ে দিত।কিন্তু আজ ওর মধ্যে কোন ভাবান্তর হল না।যেন কেউ ওর পিঠে থাপ্পড় মেরেছে এটা সে বুঝতেই পারে নি।মিতু এখন সবার সামনে গিয়ে সবার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে।কিন্তু কেউ ওর কথা শুনছে বলে মনে হচ্ছে না। হঠাৎ মিতু লক্ষ্য করল সবার মুখটা কেমন থমথমে যেন একটু আগে অনেক বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটেছে।স্যারের মুখেরও একই অবস্হা যেন তিনিও খুব ভয় পেয়েছেন।সবাই চুপচাপ।কারও মুখে কোনো কথা নেই।নীরবতা ভেঙ্গে স্যারই প্রথম কথা বললেন -তোমরা কি ভয় পেয়েছ? কেউ কোন উত্তর দিল না। মিতু বুঝতে পারল ওর অনুপস্হিতিতে ভয় পাওয়ার মত কোনো ঘটনা ঘটেছে।কিন্তু এর সাথে ওকে না দেখতে পাওয়ার সম্পর্ক কি?মিতু আন্দাজ করতে পারল না। এবার স্যার বললেন -দেখো আমরা যে মিতুকে মেরে ফেলেছি সেটা শুুধু আমরাই জানি।এঘরের বাইরের কেউ এটা জানে না।আশাকরি তোমরা কাউকে ঘটনাটা বলবে না। কথাটা শুনা মাত্রই ভয়ে মিতুর হাত পা কাঁপতে লাগল।ওরা মিতুকে মেরে ফেলেছে মানে ওতো ওদের সামনেই দাড়িয়ে আছে।মিতু চিৎকার করে বলছে -এই তোমরা কাকে মেরেছ?আমি তো এখানে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু কেউ জবাব দিল না। মিতু এখন ভাবছে ও কি সত্যি সত্যি মারা গেছে?মিতু সকাল থেকে কি কি করেছে এটা মনে করার চেষ্টা করল।ঘুম থেকে উঠার পর হাত মুখ ধুয়ে দাত ব্রাশ করে সবার সঙ্গে নাস্তা খেল।তখন তো সবাই ওকে দেখেছিল।ও টিউশনিতে আসার সময় বাবা ওকে ২০০ টাকা দিয়েছিলেন।মিতু ওর ব্যাগ চ্যাক করল।হ্যাঁ টাকাটা তো ঠিকই আছে।আসার সময় একটা খেলনা পিস্তলও ব্যাগে ঢুকিয়েছিল,সেটাও আছে।তাছাড়া ওতো এইমাত্র ঘরে ঢুকল।তাহলে ওরা মারল কখন?তবে কি ওরা মিতু ভেবে অন্য কাউকে খুন করেছে?যদি অন্য কাউকে খুন করেও থাকে তাহলে কেউ ওকে দেখতে পাচ্ছে না কেন?এরকম হাজার প্রশ্ন মিতুর মাথায় উঁকি দিতে লাগল যার কোনো উত্তর নেই। মিতু এখন খুব ভয় পাচ্ছে।কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।ও এখান থেকে চলে যাচ্ছিল,এমন সময় স্যার বললেন -তোমরা তো বাইরে গিয়ে কিছু বলবেনা এটা আমি জানি।কিন্তু যদি মিতুর পরিবারের কেউ তোমাদের কাছে ওর ব্যাপারে জানতে চায় তাহলে কি বলবে? জাকিয়া জবাব দিল -আমরা বলব স্যার ও আমাদের সাথে টিউশনিতে আসে নি। -না না এটা বললে সবাই ফেঁসে যাব। -কিভাবে স্যার? -দেখ তোমরা সবাই এক সাথে আমার কাছে পড়তে এসেছ।কেউ না কেউ তো তোমাদের একসাথে আসতে দেখেছে।এখন সে যদি সবাইকে এটা বলে দেয় তাহলে তোমরা ধরা পড়ে যাবে।আর তোমরা ধরা পড়া গেলে আমিও ধরা পড়ে যাব? -তাহলে আমরা কি বলব স্যার? -তোমরা বলবে মিতু তোমাদের সাথে পড়তে এসেছিল।কিন্তু পড়া শেষে ও তোমাদের সাথে যায় নি।ও বলেছে ওর একটা আত্মীয়ের বাসায় যাবে।তাই তোমরা বাসায় চলে গেছ? মিতু এখন ভাবছে ওতো সবার সাথে আসে নি।একা একা এসেছে।তাহলে ওর কি কোনো জমজ বোন আছে যার কোনো খবর ও নিজেই জানে না।মিতু যেন একটা গোলক ধাঁধার মাঝে পড়ে গেল।যার কোনো সমাধান ওর কাছে নেই।ওর এখন কি করা উচিত?কোনো সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারছে না মিতু।ও মনে মনে বলছে আল্লাহ এ কি বিপদের মধ্যে ফেললে আমাকে?আমাকে রক্ষা কর আল্লাহ,আমাকে রক্ষা কর। হঠাৎ রুমের দরজা খোলার আওয়াজে মিতুর ভাবনায় ছেদ পড়ল।সীমা আপু দরজায় দাড়িয়ে আছেন।ওনি স্যারের ওয়াইফ।মিতুরা সীমা আপু বলে ডাকে।মিতু তাড়াতাড়ি গিয়ে ওনার হাত ধরল এই ভেবে যে উনি অত্যন্ত তাকে দেখতে পাবেন।কিন্তু তিনিও দেখতে পেলেন না। সীমা আপু বললেন -এই তোমরা সবাই খেতে আস।আমি আজ নিজের হাতে মিতুর মাংসের বিরিয়ানী রান্না করেছি। কথাটা শুনা মাত্রই মিতুর জ্ঞান হারাবার উপক্রম হল।এসব হচ্ছে টা কি?মিতু চিৎকার বলছে -এই তোমরা এসব কি বলছ।আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি,তোমরা আমাকে দেখতে পাচ্ছ না কেন? মিতুর কথার জবাব কেউ দিল না।সবাই খেতে চলে গেল পাশের রুমে।সবার সাথে মিতুও গেল ব্যাপারটা দেখার জন্য। একটা অন্ধকার ঘরে সবাই ঢুকল।মিতুও ঢুকল।দরজার বাইরে থেকে সামান্য আলো আসছিল।তাতে ঘরটাকে কেমন বেলুন দিয়ে সাজানো মনে হচ্ছে।অন্ধকারের কারণে ঘরটা পুরোপুরি দেখা যাচ্ছিল না।হঠাৎ কে যেন দরজাটা লাগিয়ে দিল।ঘরটা পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে গেল।কিছূক্ষন এভাবে কাটল।ঘরটা পুরোপুরি নীরব।হঠাৎ ঘরের লাইট জ্বলে উঠল।আর সবাই এক সাথে চিৎকার করে বলল -হ্যাপি বার্থডে মিতু মিতু ঘরের চারিদিকে ভালো করে তাকাল।ঘরটা বেলুন দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো।ঘরের মাঝে টেবিলে একটা বড় কেক।আর তাতে লেখা HAPPY BIRTHDAY TO YO MITU এতক্ষনে মিতুর কাছে ব্যাপরটা পরিষ্কার হল।এখন রাগে ওর শরীর কাপছে।এটা কি ধরনের মজা।ঠিক তখন সীমু এসে বলল -কিরে মিতু,সারপ্রাইজ টা কেমন দিলাম? মিতু আস্তে আস্তে বলল সারপ্রাইজ তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলল -এটা সারপ্রাইজ?হ্যাঁ তোমাদের কাছে এটা সারপ্রাইজ হতে পারে আমার কাছে নয়।তোমরা জানো এতক্ষন আমি কোন মানসিক অবস্হার মধ্যে ছিলাম।আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি সেটাই বুঝতে পারছিলাম না।আরেকটু হলে ভয়ে আমি সত্যি সত্যিই মারা যেতাম।বলেই মিতু কেঁদে উঠল। কেউ কোনো কথা বলল না।সীমা আপু এসে মিতুর মাথায় হাত রাখল। মিতু একটু দূরে সরে গেল। তারপর ব্যাগ থেকে রিভলভার টা বের করে চিৎকার করে বলল - সবাই একলাইনে দাঁড়াও।একটু নড়াচড়া করলে আমি গুলি মেরে দিব। সীমা হেসে বলল -এটা নিশ্চই খেলনার পিস্তল। -এটা আমার বাবার রিভলবার।তোদের দেখানোর জন্য এনেছিলাম।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটা দিয়েই আজ কারও প্রান যাবে। মূহুর্তেই সবার মুখ থেকে হাসি উদাও। -মিতু তুই মাথা ঠান্ডা কর।দেখ আমরা শুধু তকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আমাদের ছিল না। -এটা কোন ধরনের সারপ্রাইজ।আসল সারপ্রাইজ তো আমি দেখাব। -মানে?কি বলতে চাচ্ছিস তুই। -কিছু বলব না।করে দেখাব। মিতু ধীরে ধীরে রিভলবার হাতে সীমা আপুর দিকে এগিয়ে গেল। -কি সীমা আপু,আমার মাংস দিয়ে বিরিয়ানী রান্না করেছ? সীমা আপু ভয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে।কেঁদে কেঁদে বলছে -আমায় ক্ষমা করে দাও,মিতু।জীবনে আমি আর বিরিয়ানী রান্না করব না। মিতুর হাসি পেয়ে গেল।অনেক কষ্টে হাসি আটকিয়ে মুখটা কঠিন করে রেখেছে।মিতু সীমা আপুর কাছ থেকে সরে এল।সবার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করল -প্ল্যানটা কার ছিল? কেউ কোন কথা বলছে না। আবার মিতু জোর গলায় বলল -প্ল্যানটা কার? স্যার জবাব দিলেন -প্ল্যানটা আমি করেছি। -কেন? -তোমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য। -এইবার দেখ সারপ্রাইজ কাকে বলে মিতু রিভলভার টা স্যারের মাথার কাছে নিয়ে গেল। সবার মুখটা ভয়ে শুকিয়ে গেছে।সবাই মিতুকে বলছে মিতু মাথা ঠান্ডা কর।রিভলবারটা সরা।হঠাৎ গুলি বেরিয়ে যাবে।কিন্তু মিতু রিভলভারটা সরাল না।স্যারের মাথা বরাবর গুলি চালিয়ে দিল।ঠাস করে একটা শব্দ হল।মূহুর্তেই ঘরটা নীরব হয়ে গেল।কারও মুখে কোনো কথা নেই।সবাই একবার মিতুর দিকে আরেক বার স্যারের দিকে তাকাচ্ছে।এবার মিতু চিৎকার করে উঠল আরে এটা খেলনার পিস্তল।কথাটা শুনার পর সবাই যেন স্বস্হি পেল।সীমা বলল -এতক্ষন তুই নাটক করছিলি।বিশ্বাস কর ভয়ে আমি শ্বাস ফেলতে পারছিলাম না। -তাহলে এবার বুঝ আমার অবস্হা তখন কি হয়েছিল। স্যার এখনও হা করে মিতুর দিকে তাকিয়ে আছেন।মিতু কাছে গিয়ে বলল -স্যার এভাবে হা করে তাকিয়ে আছেন কেন?আসুন কেক কাটব তো। -তুমি যা খেল দেখালে আমি কোনদিনও ভুলব না। -আপনার সারপ্রাইজটাও আমি ভুলব না। এবার মিতু সীমা আপুর দিকে তাকিয়ে বলল -ভয় পেয়েছ আপু সীমা আপু হেসে জবাব দিল -কি বলছ?ভয় পাব কেন?আমি এত ভীতু নাকি।আমি তো প্রথমেই বুঝেগিয়েছিলাম এটা তোমার নাটক। ঠিক তখনি স্যার বলে উঠল -হ্যাঁ ভয় পাওনি।এজন্যই তো তখন কাঁদছিলে।আবার কোনদিন বিরিয়ানি রান্না করবেনাও বলেছিলে। সাথে সাথে সবাই হেসে উঠল