ARS Dhruboমেয়েটার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করতেই টেক্সট এর বন্যা বইয়ে গেলো আমার মেসেঞ্জারে!
হেই কি অবস্থা? কেমন আছেন? কি করছেন? একসাথে এতগুলি মেসেজ দেখে অবাক হওয়ার মাত্রা ছাড়িয়ে থ মেরে বসে রইলাম!
মেয়েটা কে? আমাকে এতগুলি টেক্সট দেওয়ার কারণ কি? এসব ভেবে শেষ না করতেই আরো ৩ টা টেক্সট এলো তার!
কি হলো কথা বলছেন না কেন?
খুব ভাব আপনার তাইনা?
অবাক হওয়ার পালা আরো বেড়ে গেলো!
আজব মেয়ে রে বাবা! আমাকে নিজ থেকে টেক্সট করে আবার আমাকেই কথা শুনাচ্ছে! ভারী অন্যরকম মেয়ে তো!
যাক ভদ্রতা করে টেক্সট এর রিপ্লাই দিলাম, আমি একটা টেক্সট এর রিপ্লাই দেয়ার আগেই মেয়েটা ৩/৪ টা করে টেক্সট এর পর টেক্সট দিয়েই যাচ্ছে!
হয়ত টাইপিং এ পাক্কা মেয়েটা!
যাইহোক ডাটা অফ করে রেখে বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষে বাসায় ফিরে ডাটা অন করতেই মেসেঞ্জার এর টুংটাং আওয়াজে কান ভারী হয়ে এলো! একসাথে ৩৭ টা মেসেজ পাঠিয়েছে মেয়েটি!
কি এক প্যারায় পড়লাম মেয়েটির রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করে!
মেয়েটি তার ছবিও পাঠিয়েছে, দেখতে মাশাল্লাহ সুন্দরী! কিন্তু বুঝে উঠতে পারলাম না মেয়েটি আমার পিছনে পড়েছে কেন? এমনিতেই মেয়েদের যন্ত্রনায় ফেসবুকে নিজের ছবি আপ্লোড করিনা, প্রোফাইল পিক টাও নিজের দেইনি! তবুও এই মেয়েটি কি দেখে আমার পিছনে পড়লো বুঝে উঠতে পারলাম না! সেদিনের মত ঘুমিয়ে পড়লেও পরের দিন ঘুম থেকে উঠার পর সেদিনের ঘুম টা হারাম করে দিলো মেয়েটি, তার সাথে নাকি দেখা করতে হবে আজকেই! জানিনা চিনিনা, একটা মেয়ের সাথে দেখা করবো কোন দুঃখে??
কিন্তু মেয়েটি নাছোড়বান্দা! আমাকে নাকি দেখা করতেই হবে তার সাথে!
কই এক বিপদে পড়লাম রে বাবা! না পারছি কথা না বলে থাকতে! না পারছি দেখা না করে থাকতে! একগাদা হুমকি দিয়ে রেখেছে মেয়েটি! দেখা না করলে নাকি খুব খারাপ হবে! মনে মনে ভাবতে লাগলাম এই মেয়েটা নিশ্চয় সেফুদার ভক্ত, তাইতো দিনে রাতে মদ খেয়ে মাতলামি করছে আমার সাথে! দুনিয়াতে এত ছেলে থাকতে আমার পিছনেই কেন পড়তে হলো তাকে! অবশেষে তার দেয়া ঠিকানায় গিয়ে হাজির হলাম সময়মত,
সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম যে মেয়েটা কেনইবা আমার সাথে দেখা করতে চাচ্ছে! কেনইবা সে আমার পিছনে পড়েছে! ভাবনাটা শেষ হওয়ার আগেই কে যেন আমার কাধে হাত রাখলো! চমকে পিছনে তাকাতেই দেখি সেই মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে আমার পিছনে!
আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাকে টেনে নিয়ে পাথরের উপরে বসে আমার কাধে মাথা রাখলো, আমি অবাক চোখে তার কান্ডগুলি দেখেই যাচ্ছি চুপচাপ!
সাহস করে বলেই ফেললাম তাকে! আপনি আমার পিছনে পড়েছেন কেন?
আর আমাকে চিনেনই বা কেমন করে!
ভেবেছিলাম মেয়েটি তার ভুল বুঝতে পারবে! বিধিবাম! আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই মেয়েটি আমার গালে চুমু বসিয়ে দিলো! হায় আল্লাহ! মেয়েটির কি লাজ শরম বলে কিছুই নেই! দিনে দুপুরে এভাবে..... আমার অবাক হওয়ার পালাটা আরো দ্বিগুন হলো যখন মেয়েটি তার ব্যাগ থেকে ফোন বের করে আমার বুকে মাথা রেখে সেল্ফি তুলতে লাগলো! আমি প্রতিবাদ করতে যাবো তখনই সে বলে উঠলো একদম নড়াচড়া করবেনা!
চুপচাপ হাসিমুখে ক্যামেরার দিকে তাকাও! আমি বাধ্য ছেলের ন্যায় তার হুকুম পালন করে গেলাম! সেল্ফি তোলা শেষে মেয়েটির আবদার হলো যে তাকে জড়িয়ে ধরতে হবে, আর সে সেল্ফি তুলবে! এবার আমার মাথায় রাগ চেপে গেলো! হুংকার দিয়ে বললাম যে আগে বলুন আপনি কে? কি নাম আপনার?
মেয়েটি বলে উঠলো ওসব পরে শুনবেন, আগে আমার কথামত কাজ করেন!
কিছুটা বিরক্তি সাথে ভালোই লাগছে এমন অনুভুতি নিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে সেল্ফি তুললাম, এবার পড়লাম আরেক বিপদে, একটা আইস্ক্রিম নাকি দুজনে ভাগ করে খেতে হবে! এ কোন প্যারায় পড়লাম আমি! যাক সেটাও করলাম,
এরপর মেয়েটি একটা হাসি দিয়ে বিদায় নিলো! মনে মনে ভাবলাম যাক বাচা গেলো এবারের মত!
কিন্তু আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো আরো বড় বিপদ!
রাতে ফেসবুকে ঢুকতেই দেখি টেক্সট পাঠিয়েছে মেয়েটি, আগামী ১৫ তারিখ আমাকে বিয়ে করতে হবে! নাইলে আমাকে জড়িয়ে ধরে যেই ছবি তুলছিলেন, সেগুলি আপনার বাবার ইমো তে পাঠিয়ে দিবো! তার টেক্সট দেখে আমি আকাশ থেকে পড়লাম, মেয়ে বলে কি???
বাবা যদি এমন ছবি দেখে! তাইলে ত আমি শেষ! হাজারো চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম! সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাংতেই আম্মু বললো! বাবা! আগামী ১৫ তারিখে তোর বিয়ে ঠিক করেছি, মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে, তুই কি মেয়েটাকে দেখতে যাবি! আবারো চিন্তায় পড়ে গেলাম, এদিকে বাবা মা নিজেরা একটা মেয়ে ঠিক করেছে, ওদিকে সেই মেয়েটা বলেছে ১৫ তারিখে তাকে বিয়ে করতে হবে! বাবা কে যদি ছবিগুলি দেখ্য! তাহলে মান ইজ্জত থাকবেনা! তাই আম্মু কে বলে দিলাম তোমরা যা ভালো মনে করো! এদিকে মেসেঞ্জারে মেয়েটি একের পর এক হুমকি দিয়েই যাচ্ছে আমাকে!
উপায়ন্তর না দেখে ফেসবুকে ঢোকায় বন্ধ করে দিলাম! আজকে সেই ভয়াল ১৫ তারিখ! জানিনা আমার কপালে কি লিখা আছে! বাবা মায়ের পছন্দ করা মেয়ের সাথেই বিয়েটা সম্পন্ন হলো ভালোভাবেই, কিন্রু ভিতরে ভিতরে আমার অবস্থা খারাপ! না জানি সেই মেয়েটা কি না কী করে বসে! আল্লাহ তুমি মান ইজ্জত বাচানোর মালিক! বাসর ঘরে ঢুকতেই ঘোমটা পড়া নতুন বউ আমার পায়ে সালাম করলো! আমি বিছানায় গিয়ে বসে তার ঘোমটা সরাতেই চিৎকার দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলাম! আমার চিৎকারে সাড়া বাড়িতে লাইট জ্বলে উঠলো! এ আমি কি দেখলাম! যেই মেয়েটাকে আমি বাবা মার পছন্দে বিয়ে করেছি! ঘোমটার আড়ালে যেই মেয়ে আছে! সেই মেয়েটিই তো আমাকে জোড় করে সেলফি তুলতে বাধ্য করেছে তার সাথে! সেই মেয়েটিই ত তাকে বিয়ে করার জন্য আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে দিনের পর দিন!
আমি তো বাবা মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করেছি! তাহলে সেই মেয়েটি আমার বাসরঘরে কিভাবে এলো!
এদিকে এসব চিন্তায় ঘেমে অস্থির হয়ে গেছি আমি! ওদিকে মা আমার এই অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে! আমি মা কে বললাম আসল ঘটনা খুলে বলো! তারপর মা যা বললো তাতে বুঝে আসলো আসল ব্যাপার টা! ফেসবুকের সেই মেয়েটি আর বাবা মার পছন্দ করা মেয়ে এই একজনই!
আমার মা আর আমার বউ মিলে আমাকে চমকে দেয়ার জন্য এভাবে ঘটনা টা সাজিয়েছে! যাক বাবা, মাথা থেকে চিন্তা দূর হলো! বাসর ঘরে ঢুকেই দরজা টা বন্ধ করেই নতুন বউয়ের কান টা টেনে দিয়ে বললাম! খুব ভালোই ত মজা নিছো আমাকে নিয়ে, সেদিন তো জোর করে সেলফি তুলিয়েছিলে আমাকে দিয়ে! জড়িয়ে ধরতেও বাধ্য করেছিলে! আজ আর যাবে কোথায়! মজা দেখাচ্ছি তোমায়! এই কাছে আসবেনা বলে দিলাম! ভালো হবেনা কিন্তু! আম্মা! বলতেই আমি বউয়ের ঠোটে আমার ঠোট টা লাগিয়ে দিলাম।
এর পরের গল্প টা আর বলা যাবেনা! লজ্জার ব্যাপার...
আপনারা বুঝে নেন।
0 Comments