-আমার ফোন অয়েটিং কেন ছিল জানতে চাইবে না?(নিধি) -না।ফোন থাকলে অয়েটিং থাকতেই পারে(অভ্র) -এইইই অভ্র তোমার সাথে এটা যাচ্ছে না।নতুন কাউকে পেয়েছো বল?(নিধি) -আজব! (আমার চোখ খচখচ করে ওঠে। অভ্রর হঠাত এরকম পরিবর্তন হয়ে যাওয়াটায় যতটা না কষ্ট পেয়েছি,তার চেয়েও বেশি অবাক হয়েছে।অবাক হবারও যথেষ্ট কারন আছে।যে অভ্র আমার সাথে কথা বলার জন্য সারাক্ষন অস্থির হয়ে থাকতো,ফোন অয়েটিং থাকলে সারাক্ষন জেরা করত সেই অভ্র এখন আমার অয়েটিং এ থাকার ব্যাপারটাকে সবাভাবিক ভাবে দেখছে! এইতো কয়েকমাস আগেই আসিফের সাথে রাত জেগে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিচ্ছিলাম ফোনে।হঠাত অভ্রর ফোন।আমাকে অয়েটিং পেয়ে কল কেটে দিয়েছিল সে।আমিও আসিফের সাথে কথা বলা চালিয়ে যেতে লাগলাম। অভ্র ঘন্টা খানিক পর আবার কল করেছিলো।তখনো আমাকে অয়েটিংএ পেয়ে আর কল করে নি। কয়েকদিন পর আবারো রাতে কথা বলি আসিফের সাথে। অভ্র সেদিনও আমাকে অয়েটিং এ পায়। সে কল করে আবার কেটে দেয়। এভাবে প্রায় ত্রিশ পয়ত্রিশ মিনিট পর পর সে কল করে দেখে।সেদিন শেষ রাতে আমি যখন ওকে কল ব্যাক করি ততক্ষনে সে আমাকে সাত বার কল করেছে।ফোন রিসিভ করেই ওর অভিযোগের সুরে জিজ্ঞাসা,কার সাথে কথা বলছিলে? আমি ফেমিলি মেম্বারদের সাথে কথা বলার কথা বলে এড়িয়ে যাই। কিন্তু সে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। বাচ্চাদের মত একটানা কাঁদতে থাকে সে। ব্যাপারটা বেশ বিরক্তিকর লাগে আমার কাছে। এরপরে প্রায় প্রতিরাতেই সে আমাকে অয়েটিং এ পায়।কয়েক মিনিট পর পর কল করতে থাকে। আমি ইচ্ছে হলে শেষ রাতে ওকে কল করি, ইচ্ছে না হলে করি না।কল করলেই কান্নাকাটি শুরু করে।অস্থির থাকতো সে সব সময় আমাকে নিয়ে।যখন তখন কল করে চেক করে আমি কারো সাথে কথা বলছি কিনা? একদিন প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বলি,তুমি এরকম করো কেন?অয়েটিং এ থাকাটা কি এমন অসবাভাবিক ব্যাপার? ফেমিলি মেম্বারদের সাথে কথা বলতে পারি না আমি? এতে এরকম অস্থির হওয়ার তো কোন মানে দেখি না আমি। সে হতাশ হয়ে বলেছিল,যেদিন আমি আর অস্থির হবো না,হাজারবার অয়েটিং এ দেখেও যেদিন আর তোমাকে জেরা করবো না সেদিন বুঝবে তুমি আমার এই অস্থির হওয়ার মানে। অভ্রর কথা আমি হাসি মুখে এড়িয়ে যাই। এরকম ভাবেই চলছিল বেশ। অভ্রর প্রতি আমার উদাসিনতা,আমার জন্য তার কান্নাকাটি,অস্থিরতায় দিন গুলো ভালোভাবেই পার করছিলাম।কিন্তু কিছুদিন আগেই হঠাত ধরতে পারলাম, অভ্র কেমন জানি চেঞ্জ। আমাকে অয়েটিং এ পেলেও আর কিছু বলে না।কল করলে হেসে হেসে কথা বলে।আমার জন্য তার মাঝে কোন অস্থিরতাই দেখতে পাই না।কথা বলার সময় ফোন রাখতে চাইলেও বলে না,আর কিছুক্ষন থাকো প্লিজ।সব কিছুতেই অভ্র এর পরিবর্তন লক্ষ করি! ব্যাপারটা ধরতে পেরে আমি ঠিক থাকতে পারি না।ওর অস্থিরতা,কান্না কাটি সব কিছুকেই মিস করতে থাকি। নিজের ভুল বুঝতে পেরে ওর কাছে ক্ষমা চাই। সে হাসি মুখে এড়িয়ে যায়। আজকে দুপুরে মামা ফোন করে। এটা ওটা কথা বলতে বলতে অনেক্ষন কেটে যায়।মাঝখানে অভ্র মাত্র একবার কল করে।কথা বলা শেষে অভ্রকে কল করি।সে ফোন রিসিভ করেই আমার সাথে সবাভাবিক ভাবে কথা বলতে থাকে।একবারও আমার অয়েটিং এ থাকাটা নিয়ে কিছু জানতে চায় না।আমি ফোনেই ফুপিয়ে কাদতে থাকি। সে বিরক্ত হয়ে কল কেটে দেয়। আমি আবারো তাকে কল করি।কিন্তু এবার আমি বিদ্যুতের শকের মত আঘাত পাই। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে অয়েটিং লেখা।ঠিক এই মুহূর্তে আমি অস্থির হয়ে পড়ি অভ্রকে হারানোর ভয়ে। পাগলের মত যতবারই অভ্রর নাম্বারে কল করি ততবারই তাকে পাই অয়েটিং অবস্থায়। মিনিট দশেক পরে অভ্রর রুমমেটের কাছ থেকে একটা এসএমএস পাই।সেটা ওপেন করে একটা সবস্থির নিঃশ্বাস ফেলি। এসএমএসটাতে লেখা ছিলঃ "অভ্রর হাতে এখন দুটো ফোন। এক ফোনের নাম্বার দিয়ে সে আরেক ফোনের নাম্বারে কল করে বসে বসে কাঁদছে") (সমাপ্ত) অবহেলায় যে কতটা কষ্ট সেটা শুধু তারাই যানে যারা প্রিয় মানুষের কাছ থেকে অবহেলা পেয়েছে...