রাতে আব্বার পকেট থেকে হাজার টাকা চুরি করছি। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফুরফুরা মনে গোসল দিতে গেলাম, গোসল শেষ করে রুমে ঢুকে গান প্লে করে দিলামঃ
“ডামিতো কাসিটা আহ্ আহ্ ডামিতো কাসিটা আহ্ আই…
.
ড্যান্স দিচ্ছিলাম কেন যেন মনে হলো কেউ একজন দেখছে। পেছন ফিরে দেখি খালার সুন্দরী মেয়ে।
.
-কিরে কি দেখস?
.
--আপনার ড্যান্স।
.
-তোর মা আসছে?
.
--হুম…
.
ঘর থেকে বের হয়ে খালার সাথে দেখা করলাম, কদমবুচি করে বললামঃ
-খালা টাকা দাও…
.
--কিসের টাকা?
.
-তোমারে সালাম করলাম না তার টাকা।
.
--আজব আমি কি তোরে সালাম করতে বলছি?
.
-তুমি তো আমারে তোমার মেয়েকে দেখে ক্রাশ ও খাইত্তে কওনাই, তবুও খাইছি তো।
.
--কি?
.
-কিছুনা টাকা দাও…
.
--টাকা চাইতে লজ্জা করেনা তোর?
.
-লজ্জা আছে বলেই তো টাকা চাইছি, লজ্জা না থাকলে তোমার মেয়ের হাত চাইতাম।
.
--কি কস এসব, মাথা ঠিক আছে?
.
-খালা এতো প্যাঁচাল পাইরোনা তো, টাকা দাও।
.
বিরাট দেহের ছোট মনের খালা বিশটাকার নোট বের করে দিলেন। যাক মাগনা যা পাওয়া যাও তাই অনেক।
.
আইজ বিশেষ একখান দিন তিনদিন ফেসবুকে প্রেম করার পরে গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাইতেছি। কিন্তু একখান প্রব্লেম হয়ে গেলো। শার্ট দর্জি এমন ভাবে চাপাইছে যে শার্ট পড়লে পাছার দিকে শার্টের কাপড় উঠে যায়। ইস্ত্রি দিয়ে বহুত ডলা দিছি কাজ হয়নাই। শেষ মেষ হাত সম্বল। একটু পরপর হাত দিয়ে টেনে নামিয়ে দিলেই হবে। কিন্তু প্যান্ট নিয়ে কি করুম, দোকানদাররে কইছি- মামা একটু চাপা পেন্ট দাও নাইলে বেল্ট পড়লেও খুইল্লা পইড়া যায়। সালায় এমন প্যান্ট দিছে যে মনে হচ্ছে চাপা খাইয়া ছোট বড় দুইটাই যে কোন সময় বের হয়ে প্যান্ট খারাপ করে ফেলবে।
সমস্যা না কয়েক ঘন্টার ব্যাপার যামু দেখা করমু চলে আসমু। একটু এডজাস্ট করি।
.
রুম থেকে বের হইছি দেখি খালাতো বোন মুচকি মুচকি হাসে।
-কিরে হাসছ ক্যান?
.
--এসব কি পড়ছো ভাইয়া।
.
-ক্যারে কোন প্রব্লেম?
.
--না তবে বগার মতো লাগছে।
.
-বগা মানে?
.
--বকের মতো।
.
-বেদ্দপ ছেড়ি।
.
আম্মার সামনে গিয়া কইলামঃ
-আম্মা আমারে কেমন লাগতেছে?
.
--তোকে তো সবসময় উত্তম কুমারের মতো লাগে বাবা।
.
-আম্মা লিমিটের মধ্যে মিথ্যা কথা কও।
.
--না সত্যি ভালো লাগতেছে।
.
আম্মার কথায় আশ্বস্ত হলাম, কেননা মায়েরা নাকি মিথ্যা বলেনা। বাসা থেকে বের হবো এমন সময় খালা ডাক দিলেনঃ
.
--ওই কুদ্দুস আলী।
.
কেমনডা লাগে, একটা ভালো কাজে যাচ্ছিলাম পেছন থেকে ডাকাডাকি। তাও আবার কুদ্দুস আলী। আলিফ, এতো সুন্দর একটা নাম থাকতে খালা সারাজীবন কুদ্দুস আলী ডাকেন।
.
-খালা তোমারে কতোবার বারন করছি কুদ্দুস আলী ডাকতে।
.
--ক্যান তোর নাম তো কুদ্দুস আলী।
.
-ফালতু কথা কইয়োনা খালা, তুমি ওই নাম রাখতে চাইছিলা। আল্লাহর অশেষ রহমত আব্বা-আম্মা তোমার কথা শুনেনি।
.
--বড্ড কথা কছ তুই। বগা সেজে যাচ্ছিস কই?
.
-ওই খালা খবরদার তোমার মেয়ে একবার বগা বলছে সুন্দরী বলে সে মাফ পাইছে। তুমি কিন্তু মাফ পাইবানা।
.
--হাতে কি? গিফ্ট?
.
-কিছুনা।
.
--আচ্ছা ছোঁয়াকে সাথে নিয়ে যা।
.
-ক্যারে?
.
--কি নাকি কেনাকাটা করবে। ঈদ না সামনে।
.
পারুম না, বলে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। কিন্তু দেখি ছোঁয়া পেছন পেছন আসছে। আসুক রিক্সায় না নিলেই হয়। হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে, প্যান্ট যেন সামনে, পেছন, ডান, বাম চারপাশ থেকে চেপে ধরছে।
রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছি, রিক্সাওয়ালাদের দেখি ভাব বাড়ছে। ডাকলেও শুনেনা, চেহারার দিকে তাকায় তারপর চলে যায়।
শেষ মেষ একটা রিক্সাওয়ালা থামলো, রিক্সায় উঠতে গেছি রিক্সাওয়ালা কয়ঃ
.
--মামা নামেন আপনায় যাইবো।
.
পেছন ফিরে দেখি ছোঁয়া দাঁড়িয়ে আছে। ছোঁয়া সুন্দরী দয়া করে তার সাথে আমাকে রিক্সায় চড়িয়ে নিলো। রিক্সা চলছে মন্থর গতিতে, খুব সুন্দর সুমিষ্ট সুঘ্রাণ পাচ্ছি। আচ্ছা মেয়ে কি পার্ফিউম ব্যবহার করে যে সবসময় সুমিষ্ট সুঘ্রাণ আসে?
আমার পার্ফিউম তো এমন না। বাসায় পার্ফিউম দিলে আশেপাশের তিন চার বাড়ি পর্যন্ত সেন্ট যায় কিন্তু দু তিন ঘন্টার মধ্যে পার্ফিউম হাওয়া হয়ে পাঠা পাঠা গন্ধ আসে।
.
যাক সে কথা আমার ফোন বাঁজছে, ফোনটা রিসিভ করলামঃ
-হ্যালো বাবু…
.
--হ্যাঁ বাবু তুমি কতো দূরে?
.
-এইতো বাবু রিক্সায়।
.
--ও আচ্ছা বাবু আসো। বাবু তাহলে খাবার অর্ডার করি।
.
-হ্যাঁ বাবু করো। রাখছি কেমন।
.
ফোনটা রাখতেই দেখি ট্রাফিক মোড়ে ডিবি পুলিশ হাত উঁচু করে থামতে বললেন। স্যারে দিকে মুখ যথাসম্ভব বিনয়ী করে বললামঃ
.
-স্যার যাইত্তে দেন। বহুত কষ্টে এক মেয়ে দেখা করতে রাজি হইছে। প্লিজ।
.
--আহা ভয় পাচ্ছো কেন। কেমন আছো জানার জন্য থামালাম। আচ্ছা যাও।
.
স্যার ছেড়ে দেয়ার পরে কেন যেন স্বাভাবিক হতে পারলাম না। মনে পড়ে গেলো পুরোনো কিছু স্মৃতি। মনে পড়ে গেলো মা মিথ্যা বলেন। একটা সময় ছিলো, পিঠ পর্যন্ত চুল রেখেছিলাম, একদিন রাতে ডিবি স্যার থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলেনঃ
.
--চুল এতো বড় কেন, নাচ গান কিছু করিস?
.
ভাব নেয়ার জন্য বলেছিলাম, স্যার ড্যান্স করি। স্যার সেদিন নুসরাত ফারিয়া আপুর পটাকা গানে একঘন্টা নাচিয়েছিলেন। আরেকদিন ধরে বললেনঃ
--গাঞ্জা খাও?
.
-না স্যার।
.
--মুখ খুলো।
.
হা করলাম, সালা মুখের ভেতর নাক ঢুকিয়ে শুঁকে চেক করলো। তারপর মাথার পেছনে ঠুয়া মেরে বললো- কতোদিন ব্রাশ করছনা। যা বাড়ি গিয়ে ব্রাশ কর।
যখনি আজিব গেটআপে ছিলাম তখনি স্যার ধরছিলেন। সুতরাং বুঝা যায় আজও আজিব লাগছে। মনকে বললাম লাগলে লাগুক। ভালোবাসা অন্তর দেখি বাহির না।
.
রেস্টুরেন্টে ঢুকে দেখি গার্লফ্রেন্ড নাই। রেস্টুরেন্ট ফাঁকা শুধু এক টেবিলে হাতির বাচ্চা টাইপ দুটা মেয়ে বসে দুহাতে রাক্ষসের মতো কিছু একটা খাচ্ছে। এরকম আর কয়টা হলে বাংলাদেশে কদিনে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে সিউর। বিদেশি সাংবাদিক দলে দলে আসবে ফটো তুলতে। কেউ একজন ভুলে আমার ফটো তুলে বেস্ট ফটোগ্রাফারের এওয়ার্ড পাবে, আমি হয়ে যাবো ভাইরাল মডেল সেলিব্রেটি।
.
ফোনটা বের করে কল দিলামঃ
-হ্যালো বাবু কই তুমি?
.
--এক মোটি বললো বাবু এইত্তো আমি।
.
মনে মনে বললাম, আল্লাহ্ তোমার কাছে বিচার দিলাম। যেই মোটুগুলা ক্যামেরার কারসাজি করে পাতলা হয়ে ফটো আপলোড দেয় তাদের আইডিতে ঠাডা ফালাও তুমি।
.
আমি পাতলু দুই মটুর সামনে বসে আছি। তারা সময় নিয়ে তাদের খাওয়া শেষ করলেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ
-তুমি এতো পাতলা কেন বাবু?
.
--এমনি বাবু। বাবু তুমি এতো মুডা কেন?
.
-কিহ্ তুমি আমাকে মোটা বললা।
.
-ছিঃ বাবু রাগ করছো কেন। আমি তো মজা করলাম। তুমি মুডা নাকি, তুমি তো হলা কিউট।
.
--হিহিহিহি… থাংক ইউ বাবু। হাতে কি তোমার? গিফ্ট আনছো আমার জন্য?
.
-হ্যাঁ বাবু…
.
--খুলি এটা?
.
-খুলবা, আচ্ছা খুলো।
.
আমার সামনেই খুলুক, আমিও জানতে চাই এটার ভেতরে কি আছে। আমার জন্মদিনে ভাতিজা গিফ্ট করছিলো। শোপিছ হবে হয়তো তাই আর খুলিনি। আজ কাজে দিয়ে দিলো।
গার্লফ্রেন্ড গিফ্ট খুলার পরে যতোটা না অবাক হলো তার থেকে বেশি অবাক হলাম আমি। ইহা একটি একতারা।
.
--বাবু একতারা আনছো আমার জন্য। এটা কেমন গিফ্ট।
.
-সেটা তো আমিও ভাবছি এটা কেমন গিফ্ট।
.
--মানে?
.
-না কিছুনা, তোমার কন্ঠ অনেক সুন্দর তো তাই দিলাম। গান শিখবা।
.
গার্লফ্রেন্ড কিছু বলতে যাচ্ছিলো এমন সময় ওয়েটার বিলের কাগজ হাতে ধরায় দিলো। ২৯৯৯টাকা মাত্র।
.
-ওই মিয়া ফাইজলামি করো? কোন টেবিলের বিল এটা?
.
--স্যার আপনার টেবিলের?
.
-মানে কি, এতো টাকার খাবার কোন রাক্ষস খাইছে?
.
গার্লফ্রেন্ড বললোঃ
-ছিঃ বাবু তুমি আমাকে এভাবে বলছো। বিলটা দিয়ে দিলেই তো হয়।
.
--তুই খাইছস তুই দে।
.
-আলিফ বেয়াদবি হচ্ছে কিন্তু।
.
--চুপ… চুপ কর। তুই বাবু? তুই তো বাবুর আম্মা। তোরে কাটলে পাঁচ ছয়টা বাবু বের হবে। আর চর্বি তো কেজি হিসাবে বিক্রি করে দেয়া যাবে। এতো টাকা কি গাছে ধরে।
.
আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু বাবু একটা থাপ্পর দিলো যে পাশের টেবিলের উপর ডিগবাজি খেয়ে দুহাত দূরে পড়লাম।
যখন জ্ঞান ফিরলো। দেখি বাবু নাই। ওয়েটার মাথায় পানি দিচ্ছে। চোখ খুলতেই বললোঃ
.
--স্যার বিল দেন।
.
মানিব্যাগে হাত দিলাম দেখি কতো আছে। মানিব্যাগ খুলে দেখি চুরি করার হাজারের নোটটাও নাই। আব্বাহুজুর নোটটা সরিয়ে চিঠি দিয়ে রাখছেন। চিঠিতে লিখা চুরি বিদ্যা মহা বিদ্যা যদি না পরো ধরা। বাবা আলিফ তুমি ধরা পরেছো। রাতে চুরি করার সময় দেখিছি আমি। তাই টাকাটা ফেরত নিলাম। ইতি তোর আব্বা।
.
রিক্সায় যাচ্ছি ছোঁয়ার সাথে। বেচারি এ যাত্রায় বাঁচিয়ে নিয়েছে। নাহলে ম্যানেজার বলছিলো আগামি একমাস ফ্লোর পরিষ্কার করতে আর একতারা বাজিয়ে গান শোনাতে। যখন থেকে রিক্সায় উঠেছি ছোঁয়া হাঁসছে। একতারা টা তোর হাতে টুং টুং করে বাঁজাচ্ছে আর হাঁসছে। বেইজ্জতি। বেইজ্জতি। বেইজ্জতি।
.
আব্বাহুজুরকে কল দিলামঃ
-হ্যাঁলো আব্বাহুজুর…
.
--কিরে?
.
-একটা গান শোনাই?
.
--কিহ্!!!!
.
-টিকাতলির মোড়ে একটা হল হয়েছে…
গান শোনানোর পরে বললামঃ
-আব্বাহুজুর একটা বুদ্ধি পাইছি।
.
--কি?
.
-পারিবারিক ব্যান্ড করি। আমি একতারা বাঁজামু, আপনি হারমনিয়াম ছোট মিয়া গিটার। বাসায় বাদ্যযন্ত্রগুলো অযথা পড়ে আছে। নেন শুরু করে দেই। আর শিল্পি আপনার বৌমা ছোঁয়া।
.
কথাটা বলার পরে দুটো রিয়েকশন হলো। আব্বাহুজুর কয়েকটা গালি দিয়ে ফোন কাঁটলেন। ছোঁয়া রিক্সা থেকে নামিয়ে দিলো। এখন হাঁটছি আমি। টাইট প্যান্টের কারনে হাঁটতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। রাস্তায় সুন্দরী মেয়ে দেখলে থামিয়ে বলছি আপু একটা গান শোনাই। ইতোমধ্যে একতারা বাঁজানো আয়ত্তে আসা শুরু করেছে। দোয়া রাখবেন যাতে ছোঁয়া এবং আব্বাহুজুরের সাথে পারিবারিক ব্যান্ড চালু করতে পারি।
0 Comments