উকুন(রম্য)

কিছু নিষ্পাপ উকুন ছিল মাথায়। তেল দিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে কন্ডিশনার দিয়ে বেশ আদরে যত্নে লালন পালন করেছিলাম। রেশমি কালো চুল। সকালে বিকেল সেই চুল চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে পাটপাট করে রাখতাম। চুলের আইলে আইলে উকুন বাহিনী মনের সুখে লেফট রাইট লেফট রাইট করে বেড়াতো। মিছিল মিটিং করতো। যেদিন তেল দিতে ভুলে যেতাম সেদিন তারা এক জোট হয়ে চুলের গোঁড়া ধরে ঝাঁকাতো। হরতাল হরতাল করতো। আমি অস্থির হয়ে যেতাম। মায়ের তেলের বোতল ধ্বংস করে তাদের খাবারের ঘাটতি পূরণ করতাম। তারা তেল খেতো। আমি আনন্দে আত্নহারা হয়ে যেতাম। খুশিতে আমার মরু চোখে ৯৮ সালের বন্যা বয়ে যেতো।

একে একে দিন যায়। উকুন তাদের বংশ বৃদ্ধি করতে থাকে। দাদা উকুন তার নাতি নাতনীদের কোলের ভেতরে নিয়ে গল্প শোনাতো। নাপিতের কাহিনী, উকুন নাশক শ্যাম্পুর কাহিনী, শান্তি কদুর তেলের কাহিনী, নাড্ডু মাথার কাহিনী।

ছোট ছোট নাতি নাতনি উকুনেরা হেসে গড়াগড়ি খেতো। খুশিতে আমার চুলের গোড়া কামড়ে ধরেতো। আমি চুলকাতে গিয়েও চুলকাতাম না। ছোট বোনের তেলে মাথা ভাসিয়ে দিতাম। রাতে ঘুমাতে গেলে কিছু চুল ভুল করে কানের সুড়ঙ্গে ঢুকে যেতো। নাকে ঢুকে সুড়সুড়ি দিতো। আমার মন্দ লাগতো না।

কয়েকদিন এমন অবস্থা হলো যে শ্রাবণীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেও পাঁচ হাত দূরে বসতো। পাঁচ হাত দূর থেকে বাদামের খোসা ছিলে বলতো "আঃ করো। আমি পাঁচ হাত দূর থেকেই বাধ্য প্রেমিকের মতো আঃ করতাম। সে বাদাম ছুঁড়ে দিতো। কিছু বাদাম মুখে যায় কিছু যায় ভাগাড়ে। কোথাও যেতে হলে সে বলতো দুইটা রিকশা নাও। আমার সঙ্গে উঠবে না।
আমি বাধ্য বাচ্চার মতো রিকশা ডাকতাম। আমার মন্দ লাগে না। রিকশা ভাড়া শ্রাবনী দেবে। আমার কি?

এলাকার নাপিতও আমাকে দেখলে মুখ ফিরিয়ে নিতো। আমার চুল আছে কিন্তু কাটি না।মুখে দাঁড়ির দোকান। সেভ করায় না। আগে মা শিম্পাঞ্জি বলতো কয়েকদিন ধরে খাটাশ ছাড়া ডাকে না। আপন মা সৎমার মতো ব্যবহার করতো।

শ্রাবণী আজকাল এমন একটা ভাব করে যেন আমি নারায়ণগেঞ্জর সাত খুন মামলার প্রধান আসামি।

আর পারছিলাম না।

সেলুনে গিয়ে মাথার উকুন বিসর্জন দিলাম। সন্তানের মতো পালন করা উকুন গুলো হারিয়ে গেল পাষান নাপিতের ভয়ঙ্কর কেঁচির নিচে।

দাঁড়ি গোঁফের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মুখ দেখে সবাই খুশি। নিজেকে আবার পুরাতন ধান্দাবাজের মতো দেখতে লাগছে। যে ধান্দাবাজ চশমার আঁড়ালে সিনেমার নায়িকাকে কিস খাওয়া দেখে লজ্জায় লাল নীল বেগুনি হয়। যে ধান্দাবাজ নিজের সব বন্ধুর বৌদের নিজের বৌয়ের চোখে দেখে। নিজের চেহারা দেখে নিজের ইচ্ছে করে রিকশার নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হই কিংবা সুইসাইড খেয়ে আত্মহত্যা করি।

আহারে আমার সাধের চুল। আহারে আমার নিষ্পাপ উকুনের বাচ্চা কাচ্চারা রে। ওরে আমার সোনা মানিকেরা রে।
আহারে উঁহুরে এঁহেরে।

দমুহমা শকাআ

Post a Comment

0 Comments