- আপনি কি আজ কোন গল্প লেখেন নি ? নাকি এখন লিখতে বসবেন ?
- আজ লিখতে বসি নি ,হয়তো এখন লিখবো ।
সুমাইয়া আমার কথায় কিছুটা আহত হলো ,কেননা আজ সারাদিন ই আমি বাসায় ছিলাম। বাসায় থাকলে আমি লেখালিখি করি আর সে আমার লেখার ভক্ত হয়তো ।ইদানিং আমি সুমাইয়াকে কেমন যেন বুঝতে পারি না ।অবশ্য এখন আর তাকে বুঝার চেষ্টা ও করি না।সে আজকাল অন্য কিছুতে মগ্ন থাকে যা আমায় খুব ভাবিয়ে তুলে অবশ্য ভাবনা টা আমার কারনেই তৈরি তা আমার জানা ।আমি জানিনা সে আমার লিখা কি পছন্দ করে নাকি শুধু আমাকে দেখানো মাত্র এটা ।আমি টেবিলের উপর থাকা খামটা সুমাইয়ার হাতে তুলে দিলাম ,সে আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্ঠিতে তাকালো আর আমি চোখে ইসারা দিয়ে বুঝালাম যে খামটা খুলে দেখ ।
সুমাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে রইলো অবাক চোখে আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম
- তুমি চাইলে এখন থেকে আমার জীবন থেকে মুক্তি নিতে পারো ।তোমার সামনে আমি আর অদৃশ্য দেয়াল হয়ে দাড়াবো না ।
- আমায় ড্রির্বোস দিয়ে আপনি সুখি হবেন ?
- সুখ জিনিস টা কেমন সেটা আমি জানি না ।
- আমি কি আপনার জীবনটা অনেক খারাপ করে দিয়েছি ?
- এমন টা ও কখনো বলি নি আমি ।
- তাহলে হঠাৎ করে এটা কেন ?
- ভেবেছি তুমি খুশি হবে ।
- আমিও তাহলে আপনার মতো সুখ জিনিস টা কি সেটা জানি না ।আর এত ভনিতা না করে সোজা ভাবেই বলে দিতে পারতেন যে আমাকে আপনার পছন্দ না ।তাহলে অনেক আগেই হয়তো চলে যেতাম ।
তারপর সুমাইয়া উড়না দিয়ে মুখ টা চেপে ধরে বাহিরে চলে গেল । আমার ধারনা অনুযায়ী সে এখন কান্না করবে । আসলে সুমুর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে ৬ মাস ১৪ দিন হলো মাত্র । আমাদের পারিবারিক ভাবে বিয়েটা হয়েছিল ,বলতে গেলে পরিবারের চাপে বাধ্য হয়ে আমি বিয়েটা করেছি । আমার মোটেও সুমুকে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না,কেননা সে দেখতে শ্যাম বর্ণের । সবার মতো আমিও আমার কল্পনায় একটা সুন্দরী মেয়েকে চেয়েছিলাম , যে বিছানায় ঝড় তুলবে ।যে আমার পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী হবে ,যাকে দেখলে পাড়ার সকলে হিংসে করে বলবে “ ইস ইমুর বউ এত সুন্দরী কেন ? কিন্তু আমার কল্পনার সাথে আমার বাস্তব মোটেও মিললো না ।
আমি বিয়ের রাতে সুমুর সাথে যখন প্রথম খুব কাছে এসেছিলাম তখন তার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে ছিলাম ।যে আমি তোমাকে পেয়ে সুখি ।কিন্তু সুমু আস্তে আস্তে হয়তো বুঝে গিয়েছে যে তার প্রতি আমার তেমন কোন ভালোবাসা কাজ করে না । আমি ঠিক তখন ই সুমুকে আমার করে নিতাম যখন কিছু সময়ের জন্য তাকে আমার প্রয়োজন পরতো। ক্ষুধা টা চলে গেলেই আমার দুরুত্ব তৈরি হয়ে যেত আমাদের মধ্যে । বিয়ের পর থেকে আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি সুমুর সাথে ঝগড়া করার জন্য কিন্তু এখনো তার এমন কিছু পাই নি যে আমি ঝগড়া করবো । আমি সে রাতে সুমাইয়া কে আর আমার সাথে একই বিছানায় দেখতে পাই নি, রাত্র ১১ টার উঁকি দিয়ে দেখি সে ড্রয়িং রুমে সোফায় শুয়ে আছে ।আমি আর ডাকতে গেলাম না ।এই ফাকে নতুন প্রেম করা তন্নির সাথে মেসেজ করতে লাগলাম ।মেয়েটা বেশ সুন্দরী ,ঠিক যেমন টা আমি চাই । সে রাতে আমি তান্নির সাথে অনেকক্ষন প্রেম আলাপ চালিয়ে গেলাম ।
পরের দিন ভোরে সুমুর কোরআন তেলাওয়াত শুনে আমি জেগে গেলাম, তারপর আরো কিছুক্ষন বিছানার সাথে লেগে থাকলাম । সকাল বেলা খাবার টেবিলে সুমু বলে উঠলো
- শোনেন আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই ।
- হুম বলো
- আমি জানি আমি দেখতে সুন্দর না, আর আমাকে আপনার ভালো লাগেনা সেটাও আমার জানা ।কিন্তু আপনি আমাকে ড্রির্বোস দিবেন না প্লিজ ।কেননা এতে করে আমি আমার পরিবারের কাছে একটা বোঝা হয়ে যাবো ।আপনি চাইলে আপনার সেই পছন্দের মেয়ে কে বিয়ে করতে পারেন আমি কিছুই বলবো না । প্রয়োজন হলে আমি আপনার বাবা মা কে বলবো যে আমার সমস্যা আছে, আমি বন্ধ্যা মেয়ে । আর আমাকে আপনার চালাতে হবে না , আমি একটা জব জোগার করে নেব।আমি আমার খরচ নিজেই বহন করবো । আপনি শুধু ঘরের এক জায়গায় আমায় থাকতে দিয়েন ।
- তুমি কি করে জানো যে আমার পছন্দের কেউ আছে ?
- আপনি গোসলে যাবার সময় আপনার মোবাইলে মেসেজ এসেছিল আর সেটা আমার চোখে পড়েছে ।
- যেহেতু সব জান তাহলে নতুন করে বলার কিছুই নেই ।আচ্ছা আমি তোমার কথা রাখবো ।
আমাদের কথাগুলো খুব অল্প কিন্তু প্রতিটা কথার ওজন বেশ ভারী । প্রায় ১ মাস এর মতো হয়ে গেল আমি আর তান্নি চুটিয়ে প্রেম করছি ।অবশ্য তান্নি জানে আমার বিষয়ে যে আমি বিবাহিত ,তবুও সে আমাকে এ নিয়ে কিছুই বলে নি । এদিকে সুমাইয়াও একটা ভালো চাকুরী পেয়ে গেছে, সে এখন অনেকটা ব্যস্ত থাকে । অবশ্য এতে করে আমার তেমন কোন মাথাব্যাথা নেই । গভীর রাতে যখন আমি সুমুর সাথে নিজের পুরুষত্ব দেখাই তখন সে নিশ্চুপ থাকে, হয়তো বা কান্না করে যা আমি কখনো বুঝার চেষ্টা করি না ।
এতটুকু পযন্ত গল্পটা বেশ অগোছালো ছিল, অবশ্য আমার জীবন টা হয়তো তারচেয়ে অগোছালো যার কারনে আমি বুঝতে পারিনি যে আমার সাথে কি হতে যাচ্ছে । আমি তান্নির সাথে বেশ গভীর প্রেমে আবদ্ধ হওয়ার কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম যে আমি ভুল মানুষের সাথে এতদিন প্রেম করছি, সে শুধু আমার সাথে না সে আরো অনেকের সাথেই এমন প্রেম লীলা চালিয়ে যাচ্ছে । আর লুটে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা । আমার সাথেও এমটাই হয়েছে, তান্নি তার আর আমার একটা গভীর মোমেন্টের ছবি দেখিয়ে আমায় ব্লেকমেইল করতে লাগলো । সে বলতে লাগলো এই সব ছবি সে ভাইরাল করে দেবে এমন কি আমার পরিবারের কাছেও নাকি এসব ছবি সে পাঠাবে বলে আমায় হুমকি দিতে থাকে । আমি তাকে বেশ টাকা দিয়ে ছিলাম আমার এ ভুল কাজের জন্য । কিন্তু সে আস্তে আস্তে টাকার পরিমান টা বাড়াতে লাগলো আর আমি ধীরে ধীরে চাপে পরে যেতে লাগলাম ।
অপর দিকে খেয়াল করতে লাগলাম আমি আস্তে আস্তে আমার নামের চেয়ে বেশি সুমাইয়া মেম এর জামাই বলে বেশি পরিচিতি এবং সম্মান পেতে লাগলাম ।আমি এতদিন তান্নির প্রেম এ এতই পাগল ছিলাম যে সে কি জব করে সেটাই কখনো জানতে চাই নি । তারপর জানতে পারলাম সে এই এলাকার স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা । বেশ ভড়কে গেলাম ,অবশ্য বিয়ের আগে বাবা বলেছিল মেয়ে নাকি বেশ শিক্ষিত আর ট্যেলেন্টেড ।এ ক দিনে সুমু এলাকার সকলের পছন্দের মেয়ে হয়ে গেল যা আমাকে আরো ভাবিয়ে তুলছিল । কিন্তু মেয়েটা কত সাধারন ভাবে ঘরের সব কাজ করে, আমার প্রতিটা কথা মানে ।আমি আমার অফিস শেষ করে যখন বাসায় যাচ্ছি তখন এক রিকসাওয়ালা চাচা আমায় দেখে বেশ লম্বা একটা সালাম দিয়ে বললো
- স্যার রিকসায় উঠেন আফনারে বাসায় নামায়া দিয়া আসি ।
- আপনি আমার বাসা চিনেন ?
- কি কন স্যার, আপনি সুমাইয়া মেডাম এর জামাই হোন এটা তো হগ্গলেই জানি । আর মেডাম রে তো প্রতিদিন আমরাই স্কুলে নামাই দিই তো চিনমু না ।
- ওহ আচ্ছা আচ্ছা ।
- স্যার ,মেম কিন্তু অনেক বালা মানুষ। আমার পোলাডারে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিছে,প্রতিমাসে স্কুলের খরচ ও মেডাম ই দিয়া দেয় ।আমাগো মতো আরো অনেক গরীব পরিবারের ছেলে মেয়েগো মেডাম স্কুলে ভর্তি করায়া দিছে ।
- তাই নাকি, বেশ ভালো তো তাহলে ।
- মেডামের মনটা অনেক বালা স্যার, মেডাম দেখতেও খুব সুন্দর । কত সুন্দর কইরা মেডাম কথা বলে ।
- আচ্ছা আমাকে এখানে রেখে দেন চাচা ।
আমি রিকসাওয়ালা কে ভাড়া দিতে চাইলে সে কিছুতেই ভাড়া গ্রহন করলো না ।হেটে হেটে সামনের দিকে যাচ্ছি আর আনমনে হাটছি । কখনো বা কোন বৃদ্ধ বা কোন পিচ্চি ছেলের লম্বা সালামে বাস্তবে ফিরে যাচ্ছি । হঠাৎ করেই নিজের উপর কেমন ঘৃণা কাজ করতে লাগলো ।দোকান থেকে একটা সিগারেট নিয়ে ধরালাম হঠাৎ করেই আমার বন্ধু রাজুর সাথে দেখা । তার সাথে বসে গল্প করতে লাগলাম, সে অবশ্য আমার সবটা জানে । তান্নির কথাও সে জানে।তাকে আমি আমার সব কথা খুলে বললাম,সে আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো
- ইমু, আমি তোকে প্রথমেই বলেছিলাম তুই ভুল পথে যাচ্ছিস । তুই যেই সুন্দরীর খোঁজ করছিলি সেটা তোর বাসায় রাখা আছে । কিন্তু তুই দৌড়েছিলি মরিচীকার পেছনে ।
- মানে ?
- তুই হয়তো ইমু জানিস না সুমাইয়া তোকে পচন্ড ভালোবাসে, যার জন্য সে এই বিয়েতে রাজি হয়েছে ।
- সে রাজি হয়েছে মানে ?
- তুই নিউজ কম পড়িস তাই না ? সুমাইয়া হচ্ছে সেই মেয়ে যে সবচেয়ে বেশি নাম্বার পেয়েছে HSC তে, এমন কি তার নাম ও পেপারে এসেছিল । সে স্কলারশীপ পেয়েছিল । তুই হয়তো জানিস না যে সে ফিজিক্স এ এত জিনিয়াস ছিল যে বাংলাদেশ শিক্ষার্বোড তাকে পুরষ্কিত করেছে । সে চাইলে এখনো বাহিরের দেশে গিয়ে নিজের লাইফ গড়তে পারবে ।
- আমি রুমে দেখেছিলাম কিছু ফিজিক্সের বই ।
- শোন তুই তাকে পছন্দ করে বিয়ে করার মতো যোগত্যা তোর হয় নি ।মনে আছে তুই কলেজ লাইফ থেকে লেখালিখি করতি ?বাউন্ডুলের গল্পের বই নামে তোর একটা পেইজ ছিল?বিভিন্ন গ্রুপে তুই গল্প লিখতি ?
- হ্যা মনে আছে
- প্রথমত সে তোর গল্পের ফ্যান ছিল যার কারনে তোকে ভালোবেসে ফেলেছে । এবং সে তোর বাবার বন্ধুর মেয়ে হয়। তাই তোর বাবা সুমাইয়ার সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছে । যখন সুমাইয়া জানতে পারলো তুই সেই পাগল যাকে সে এতদিন ধরে পছন্দ করে আসছে তখন ই সে বিয়েতে রাজী হয়েছে ।
- তুই এসব কি করে জানলি ?
- সুমাইয়া ভাবীর বান্দবী হচ্ছে আমার ছোট বোন । বিয়ের কয়েকদিন পরেই আমার বোন আমায় এইসব বলেছে ।
- তুই এসব আমায় আগে বলতে পারতি ।
- তুই সেই সুজুকটা আমায় দেস নি ইমু ।
তারপর আমি দ্রুত বাসার দিকে রওনা দিলাম । এর মধ্যে তান্নি ফোন দিয়ে বললো সে নাকি সুমুর মোবাইলে আমাদের সেই সব ছবি পাঠিয়ে দিয়েছে । এটা শোনার পর থেকে আমার মাথা কেমন হ্যাং খেয়ে গেল, আমি চিন্তা করছি যে বাসায় কি উওর দিবো । আবার এটাও চিন্তা করছি আমি এতদিন কেন সুমুকে তার নিজের লাইফ নিয়ে কিছুই জিজ্ঞাস করিনি ,করলে হয়তো আমার অনেক ভুল চিন্তা ভাবনা গুলো কেটে যেত ।আমি দেখতাম তাকে প্রায়স পড়াশোনা করতে,কখনো কখনো সে র্ভাসিটিতেও যেত কিন্তু আমি তাকে নিয়ে কোন প্রকার মাথা ঘামাইনি ।
রাত্র ৯ টা বেজে গেছে আমি বাসার পাশে ঘুরাফেরা করলেও বাসায় যাবার সাহস হচ্ছে না । সুমু কি বাবা মাকে এগুলো দেখিয়েছে ? এসব নানান চিন্তা করতে করতে দড়জায় কাড়া নাড়লাম । একটু পর সুমু দড়জা খুলে দিল। আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম যে ঘরে কোন প্রকার ঝামেলা শুরু হয়েছে কিনা ! কিন্তু তেমন কিছুই হলো না । সে আমাকে রাত্রের খাবার সুন্দর মতো র্স্রাফ করতে লাগলো । আমিও চুপচাপ খাওয়া শেষে রুমে গিয়ে বসে পড়লাম । আর যখন সুমু সব কাজ শেষ করে রুমে আসলো তখন তাকে দেখে বললাম
- তুমার কি কিছু বলার আছে আমাকে ?
- নাহ!
- তুমার মোবাইলে কোন ছবি বা ভিডিও এসেছিল ?
- হুম আমি দেখেছি, অবশ্য আপনাকে অনেক হ্যাপি দেখাচ্ছিল সেই মোমেন্টে।যা হয়তো আমি আপনাকে কখনো দিতে পারিনি ।
- আসলে সে আমায় ব্লেকমেইল করছিল এসব ছবি দিয়ে, আর আমি বুঝতে পেরেছে যে আমি ভুল মানুষের পেছনে এতদিন সময় নষ্ট করেছি ।
- হ্যা সেটাও আমি জানি, মেয়েটা এখন থানায় আছে। সে এমন কাজ আরো অনেকের সাথেই করেছিল,মূলত তার কাজ ই ছিল এটা ।
- থানায় মানে ?
- আমি আমার মতো চেষ্টা করে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছি । রাজু ভাইয়া আমাকে ফোন করে বলেছিল বিষয় টা ।
- ভুল হয়ে গেছে আমার ।
- সমস্যা নেই,নতুন আরেকজন খোঁজে বের করুন ।
- তুমার কি কষ্ট লাগে নি এসব দেখে ?
এই কথাটা বলে মনে হচ্ছে ভুল করে ফেললাম ।কথাটা বলার সাথে সাথে সুমুর চোখ দিয়ে অম্বু প্রবাহিত হতে লাগলো ।সে আমার সামনে থেকে মুখে হাত চেপে দৌড়ে গিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকলো । সুমুর সেই কান্নাটা আমার জীবন অনেকটাই পাল্টে দিয়েছিল । সেদিন সারা রাত্র আমি বেলকনিতে সিগারেট ফুকেছি,নিজেকে প্রশ্ন করেছি বার বার “ আসলেই কি এটা আমি “? কিন্তু আমি উওর পাইনি ।তারপরের দিন থেকে আমি বুঝতে পারলাম সুমু আমায় প্রচুর ইগনোর শুরু করে দিয়েছে । অবশ্য করার ই কথা নিজের স্বামিকে অন্য একটা মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখলে কেমন টা লাগবে ?নিজেকে নিজের কাছে প্রচুর ছোট মনে হতে লাগলো। আমি সুমুর সাথে বেশ অনেকবার কথা বলতে চেয়েছি এ বিষয়ে কিন্তু সে এড়িয়ে গিয়েছে।কখনো গভীর রাতে তার চিবুক র্স্পশ করতেই সে কেঁপে উঠতো হয়তো বা ঘেন্নায় ।আমি তখন আলতো করে উঠে যেতাম তার পাশ থেকে ,হয়তো তখন সে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতো ।
এমন করে প্রায় মাস চলে গেল ,এর মধ্যে আমি প্রচুর এলোমেলো হয়ে গিয়েছি । এর মধ্যে আমি প্রচুর গল্প লিখেছি,জানিনা সে গল্পগুলো পড়েছে কি না । নিজের ভুলের জন্য বারবার নিজের কাছে হেরে গিয়েছি । এখন প্রতিরাতে সুমু যখন তাহাজ্জুদের নামাজ শেষে মোনাজাত শুরু করে তখন সেই মোনাজাতে তার চাপা কান্না আর র্দীঘশ্বাস আমার বুকে এসে লাগে । ফজরে তার কোরআন তিলাওয়াতের সুড় টা আমাকে আরো বেশি অপরাধী করে তোলে । আমি এই মেয়ের সাথে এমনটা করেছি !!! ভাবতেই নিজের প্রতি নিজের ঘেন্না কাজ করে ।সেদিন চুমু স্কুল থেকে এসে আমার হাতে একটা খাম দিয়ে বললো
- আমার ট্রান্সফার হয়েছে,ঢাকার একটা নামকরা স্কুলে । এখন হয়তো আমাকে নিয়ে আপনার আর সমস্যা হবে না । আপনি যদি এখন বাসা থেকে অনুমতি টা নিয়ে দেন তাহলে আমি যাবো ।
- কবে জয়েন করার কথা তুমার ?
- সামনের ১ তারিখে । আপনি চাইলে মা-বাবাকে ও আমার সাথে দিয়ে দিতে পারেন,আমি ওনাদের ভালোকরে দেখাশুনা করবো । আর আপনার ও এখানে একলা বাসায় বেশ সুবিধা হবে ।
- সুমু আমি কি এতটাই খারাপ তাই না ??এতই যদি আমার সুবিধা বুজ তাহলে চলে যাচ্ছো কেন ?
- আমি আপনাকে কখনো ই খারাপ মানুষ মনে করিনি,কেননা আপনার ভেতর থাকা লেখকটা এতটাই মধুর যে আমি সেই ভাঙ্গা লিখা নিয়ে একাই সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবো । আপনি চেয়েছেন তাই আমি চলে যাচ্ছি ।
- আমার ভুল হয়ে গেছে সুমু,মাফ করে দাও । আমি তোমায় খুব খারাপ ভাবে ভালোবেসে ফেলেছি, আমি শুধুই তোমায় চাই ।
সে ঠিক আগের মতো দৌড়ে ওয়াসরুমে ঢুকলো,কিন্তু আজ আমি এর একটা শেষ দেখ নেবো ।আমার আজ কথা বলতেই হবে তার সাথে । আমি ওয়াসরুমের দড়জার সামনে গিয়ে বললাম
- সুমু বের হও,তোমার সাথে আমার কথা আছে ।
- প্লিজ ইমু, আপনি এখন আমার সামনে থেকে কিছুক্ষনের জন্য চলে যান । আমি যতবার আপনার দিকে তাকাই ঠিক ততবার ওই নগ্ন ছবিটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে ।
- সুমু আমি যদি এখন চলে যাই কসম করে বলছি আর জীবনেও আমার দেখা দিবো না। এমনকি আমার মৃত দেহ পযন্ত তুমি দেখতে পারবে না ।
তারপর সে দ্রুত বের হয়ে আমার গালে বেশ জোরে ২ টা চড় বসালো, আমি তার অশ্রুময় চোখে তাকিয়ে হেসে দিলাম । কতটা পাপি আমি যে এই মেয়েটাকে কাদিয়েছি !!!!!!!
- বলেন কি বলবেন,আমি আজ সব শুনবো।আর হ্যা আমি যা বলবো তার সঠিক উওর দিতে হবে ।
- আচ্ছা দেব ।আসলে সুমু আমি কোন মুখে তোমার কাছে মাফ চাইবো তা আমি জানি না।তবুও বলছি মাফ করে দিও পারলে আমায় । আর হ্যা আমি তোমাকে যাবার অনুমতি দিলাম । আমি চাই না জোর করে এক খারাপ মানুষের সাথে তোমায় আটকে রাখতে । তুমি চাইলে যেতে পারো ।আসলে সুমু আমাদের সমাজটা সুন্দরের পূজারী,আমার বুঝ হবার পর থেকেই আমি চারদিকে সুন্দরের প্রাধান্য টা সবথেকে বেশি পেয়েছি,। আমি দেখেছি সবাইকে বাহ্যিক সুন্দরের উপর মরিয়া হতে। আমি দেখেছি সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটা কিছু না পারলেও সে সবার কাছে চোখের মনি । আমাকে সমাজ সবসময় বাহ্যিক সুন্দরের প্রতি ভালোবাসাটা শিখিয়েছে ।হয়তো আমার বাবা মা আমার ভালো টা বুজতে পেরে তোমাকে নিয়ে এসেছে আমার জন্য ।কিন্তু আমি তুমায় সম্মান দিতে পারিনি।কি করে দেবো বলো? আমার চারপাশের মানুষগুলো আমাকে এমন করেই তৈরি করে নিয়েছে । কিন্তু যেদিন থেকে আমি আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছি সেদিন থেকে এখনও পযন্ত প্রতিটা দিন আমি কতবার মরেছি নিজের কাছে তা বলা মুসকিল ।তুমি জানো নিজের সুন্দর ফেইসটা আয়নাতে দেখতে ঘেন্না লাগে,প্রশ্ন জাগে এটাই কি আমি ?? সুমু তুমি এমন একটা মেয়ে যে আমার জীবনের প্রতিটা ভুল চুপ করে থেকেও আমায় ধরিয়ে দিয়েছো। কোন শাষন না করে, না বকে আমায় খারাপ স্বভাবটা ঠিক করে দিয়েছো । তুমি তো টিচার তাই না ?? তাহলে ছোটবেলায় ভুল করলে টিচার যেভাবে মেরে ভুল ধরিয়ে দিত তা তুমি কেন দিলেনা ?এতদিন যেতে দিয়েছি কিন্তু সব কিছু বুজেও থেকে গেছ আর এখন যখন নিজের করে রাখতে চাচ্ছি তখন ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছো ??
- আমায় আপনি বাধ্য করেছেন চলে যেতে ।
বলেই যে আবারো কান্না শুরু করে দিল ।
- কান্না করবে না একদম। তুমার কান্নাটা এখন আমার সহ্য হয় না, তুমার চোখের পানি আমাকে আরো অপরাধী করে তোলে ।
- একটা প্রশ্ন করি ?
- হুম বলো
- কয়বার বিলিয়ে দিয়েছিলেন সেই মেয়েটাকে যা শুধু একান্তই আমার ছিল ?
- ৩ দিন একসাথে হয়েছিলাম ।
- সে তো খাট কাঁপাতে পেরেছে তার রুপে তাই না ?ঠিক যেমনটা আপনার গল্পে আপনি চেয়েছিলেন ?
- আমি চোখের সামনে পানি রেখে মরুভূমিতে পানি খোঁজেছি এতদিন ।আমি শুধুমাত্র মরিচীকার পেছনে দৌড়িয়েছি ।
- কেন ভালোবাসি বলছেন আমাকে ? আমি তো আপনার মনের রানীর মতো সুন্দর নই ।
- আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি সুমু ।
- আপনি জানেন আমি কতটা ভালোবাসি আপনাকে ?আপনার কোন আইডিয়া আছে ?একটাবার আমায় আদর করে র্স্পশ করেছেন বিয়ের পর থেকে ?
- আমায় পারলে ক্ষমা করে দিও প্লিজ । আমার এটুকুই বলার ছিল,আমি উঠলাম ।
- কোথাই যাবেন এ রাতে ?
- জানিনা কিন্তু তোমার খারাপ লাগার কারন আর হতে চাই না ।
- খুব বেশি বুঝেন তাই না ?
এটা বলে সে আবারো একটা থাপ্পড় মেরে আমায় জড়িয়ে ধরলো । এই প্রথম আমার মনে হলো আমার জীবনের র্পূণতা আমি পেয়ে গেছি । আমার মনে হলো আমার আটকে থাকা র্দীঘশ্বাস টা সতেজ নিশ্বাসে পরিণত হতে লাগলো ।আমি সুমুর গালে,কপালে অজস্র চুমু খেতে লাগলাম ।হঠাৎ করে সে আমায় বাধা দিয়ে বললো
- যান ওযু করে আসেন ।
- মাফ করেছো তো ?
- আমার সাথে প্রতিদিন যদি নামাজে দাড়ান তাহলে মাফ করে দেব ।
আমি একফালি হাসি দিয়ে ওযু সেড়ে সুমুর সাথে নামাজে দাড়ালাম । প্রতিটা সিজদা দেওয়ার সময় মনে হচ্ছে আমি নিজেকে আস্তে আস্তে খোঁজে পাচ্ছি । তারপর সেদিনকার রাত্রটা আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত্র ছিল,আমি সুমুর ঠোটে আলতো করে চুমু খেয়ে বলেছিলাম “ আজকের রাত্রটা মনে রেখ কেননা এ রাতে ই মহাকালের সূচনা ঘটবে “ উওরে আমার বউ অসভ্য বলে আমার নাটকা টেনে দিল ।
ভোরে সুমুর ভেজা চুলের ঝাপটায় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ভেজা চুলে মনে হচ্ছিল আমি স্বগের কোন পরী কে দেখছি । সে জোর করে আমায় ওয়াসরুমে পাঠিয়ে দিলে , আর যখন বের হলাম তখন সে আমার হাতে জায়নামাজ দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো
- যাও মসজিদে যাও ।
জীবনের শ্রেষ্ট অনুভূতিগুলো মনে হচ্ছিল আমি আস্তে আস্তে খোঁজে পাচ্ছি ।নামাজ শেষে বাসায় এসে সুমুর কোলে শুয়ে আছি আর সে কোরআন তেলাওয়াত করছে । আমি মুগ্ধ হয়ে সুমুকে দেখে যাচ্ছি আর আনমনে বলে উঠছি “ মানুষ এত সুন্দর ও হয় “ । আমি আলতো করে সুমুর গালে একটা চুমু দিয়ে আবারো তার তেলাওয়াত শুনতে লাগলাম,এর মধ্যে র্সূযের আলো আমার মুখে পড়তেই সুমু র্সূযের দিকে তার পিঠ ঠেকিয়ে আমার ছায়ার ব্যবস্থা করে দিল । কখনো কখনো বা সে আমার নাকটা টেনে ধরবে বা কোথাও আলতো চিমটি কাটছে যেন ঘুমিয়ে না পড়ি ।কেননা আর এক পাতা তেলাওয়াত করার পর সে নাকি আমায় বাংলা অর্থ বুঝিয়ে দিবে ।
- তাহলে নতুন চাকুরীতে যাচ্ছো তুমি তাই না ?
- এ পাগল জামাই ছেড়ে কি যেতে পারবো ?
- কাল তো ঠিকই বলেছিলে চলে যাবে আমায় ছেড়ে !
- কালকে কিন্তু ৩ টা থাপ্পড় দিয়েছি,সকাল সকাল কি আবারো খেতে ইচ্ছে করছে ?
- আমার তো শুধু ভালোবাসা খেতে ইচ্ছে করছে আমার বউটার ।
- যাহ অসভ্য !! দিনের বেলায় একদম এমন করবে না,তাহলে খুব মারবো ।আর এখন থেকে প্রতিদিন সেই আগের মতো গল্প লিখবে ।কেমন ?
আমি তার সব কথা মেনে নিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলাম আর আনমনে আওড়াতে লাগলাম
” কী ভালো আমার লাগলো আজ এই সকালবেলায়
কেমন করে বলি?
কী নির্মল নীল এই আকাশ, কী অসহ্য সুন্দর,
যেন গুণীর কণ্ঠের অবাধ উন্মুক্ত তান
দিগন্ত থেকে দিগন্তে;
কী ভালো আমার লাগলো এই আকাশের দিকে তাকিয়ে;
চারদিক সবুজ পাহাড়ে আঁকাবাঁকা, কুয়াশায় ধোঁয়াটে,
মাঝখানে চিল্কা উঠছে ঝিলকিয়ে।
তুমি কাছে এলে, একটু বসলে, তারপর গেলে ওদিকে,
স্টেশনে গাড়ি এসে দাড়িয়েঁছে, তা-ই দেখতে।
গাড়ি চ’লে গেল!- কী ভালো তোমাকে বাসি,
কেমন করে বলি?”
0 Comments