রাতের
খাওয়া শেষ করে যখন আব্বু যে
কথাটি বলেছিল।সে কথাটি শুনার
পর আর
চোখে ঘুম আসেনি আমার।কারন
আগামীকাল
একটা ছেলের সাথে দেখা করতে
যাবো ।আর ছেলে টা
আব্বুর খুব পছন্দের।বাবা অনেক
পছন্দ করেন ছেলেটাকে ।প্রতি টা
দিন
কিংবা রাত শুধু সেই ছেলেটাকে
নিয়েই আব্বুর গল্প।
খুব বিরক্ত লাগে।তাই বাবা যখন
ছেলেটার কথা বলেন তখন আমি নিজের
রুমে চলে যাই ।বিচানায়
শুয়ে শুয়ে ছেলেটার কথা ভাবছি
ছেলেটা দেখতে কেমন হবে?কতটা
স্মার্ট,
কিউট,কতটা লম্বা ইত্যাদি ইত্যাদি
ভাবতে ভাবতে রাত পেরিয়ে ভুর
হয়ে গেল।আম্মুর বকা খেয়ে ফ্রেশ
হতে গেলাম । বাবা বললেন মিমি
ওহহহ আমার ডাক নাম মিমি ।
- দেখ মিমি আজকে বোরকা পড়ে
নিশাদের সাথে দেখা করতে যাবে।
ছেলেটার নাম নিশাদ।
- আর অবশ্যই সাঁজো-গুঁজো কম
করবে।
অযথা বেশি কথা বলবেনা।আরো
অনেক কথা ।
আমি সেইসব মাথায় না নিয়ে খুব
বেশি সাঁজো-গুঁজো করে এবং নীল
একটা ড্রেস পড়ে নিলাম।এবং বার
বার আয়নার সামনে গিয়ে দেখতে
লাগলাম কেমন লাগছে আমাকে ।
অবশ্য নিজেই নিজের প্রশংসা করা
আমার মোটেও আমার পছন্দ না।
কাজের বোয়া ,মানে আমি যাকে
সেই
ছোট বেলা থেকে দেখে এসেছি ও
খুব ভালোবাসি,তার নাম রাহিমা।
আমি
ওনাকে ফুপি বলে ডাকি। রাহিমা
ফুপিকে ডাক দিলাম । তিনি এসে
আমার
দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে কাছে
এসে কানে কানে বললেন ...
- একেবারে রাজ রানি লাগছে ।
- আচ্ছা ফুপি ?এই কথাটা কানে
কানে বললে কেন ?
- কারন যাতে দেয়ালটা শুনতে
না পায়।তাহলে আমার টুকিটার
নজর লেগে যাবে ।
- ফুপি কথাতে অনেকক্ষন হাসলাম
,কারন ফুপি আমাকে সবসময় এই
টুকি নামেই ডাকেন।অবশ্য আমার
খুব ভাল লাগে।তিনি আমাকে খুব
ভালোবাসেন।
-
আব্বুর কথা না শুনে মনটা একটু
খারাপ হয়ে গেল ,আব্বু বলেছিল
বোরকা পড়ে যেতে।মনে মনে খুব
বেশি রাগ হচ্ছিল। বোরকা পড়ে
যখন যাব ,তাহলে মুখ দেখবে কি
করে।আর মুখও যখন দেখবে না,
তাহলে দেখা করার দরকারটা কি।
হঠাত্ করেই আমার মাথায় একটা
বুদ্ধি এলো।
ছেলেটা যদি আমাকে বলে আপনি
দেখতে
খুব ভাল,তাহলে আমি তাকে বলব
,যদি আমি বোরকা পড়ে আসতাম
তাহলে
ত আপনি মুখও দেখতে পারতেন
না।তাই বোরকা পড়ে আসিনি।হি
হি হিহিহিহি .... ছেলেটাকে একটু
বকা
দেয়া যাবে । আব্বুর সাথে করে
বের হলাম।আব্বু একটু রাগ করে
বললেন ...বোরকা পড়িনি কেন ।
বললাম ভাল লাগছেনা।বাবা আর
কিছু
বললেন না।আমি কানে ইয়ারফোন
লাগিয়ে
গান শুনতে লাগলাম।আব্বু কাকে
ফোন দিয়ে কথা বলতে লাগলেন।
আমি সেদিকে লক্ষ না রেখে গান
শুনছি।আব্বু একটা কফি শপের
সামনে গাড়ি থামালেন ও আমাকে
নামিয়ে দিয়ে বললেন কফি শপের
ডান দিকে একটা পান্জাবি পড়া
ছেলেটাই হল নিশাদ।কালার হল
সাদা।
এখন রাগটা আরো বেরে এলো ।
আজকে নীল পান্জাবি পড়লেই হত
,ধ্যাত মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
আব্বুকে টাটা বলে কফিশপে ডুকে
ডানে
তাকালাম।দেখলাম কফিশপ এর ডানের
দিকে একটা ছেলে সাদা একটা
পান্জাবি এবং কালো পেন্ট পড়া একটা
ছেলে সামনের দিকে মুখ করে দাড়িয়ে
আছে।মাথায় আবার
টুপি
আছে তাও আবার সাদা।আমি
পেছন থেকে বললাম ...
- আজকের দিনে নীল কালারের
পান্জাবি পড়লে কি হত ?
- মনে হল ছেলেটা মুঁচকি হাসছে।
তারপর বলল ....
- আসসালামু আলাইকুম।আপনার
কি সালাম দেবার তাওফিক নেই।
- কিছু অবাক হলাম ........কারন
উওর টা আমি এভাবে আশা করি
নি । কিছুটা সময় নিয়ে সালামের
উওর
দিলাম।অবাক করা বিষয় ছেলেটা
এখনো আমার দিকে তাকায় নি ।
আমিও ছেলেটাকে এখনো দেখতে
পাইনি।কথার সুর টা অনেক ভাল
লাগছে।
তারপর ছলেটা বলল ....
- আসলে আমার প্রিয় সব কিছুর
রং হল সাদা।
- আমি কিছু বলতে পারছিনা ।
ছেলেটা বলল .....
- বসুন ...
- আমি ধীর পায়ে গিয়ে বসলাম।
ছেলেটার দিকে তাকাতে পারছিনা
কেন জানি।
- আমার নাম সাইদ মুকসিত আঃ
নিশাদ। আপনার ?
- আমি ভয়ে ভয়ে বললাম ....
মাইশা রুবাইয়া জান্নাত মিমি ।
- আলহামদুলিল্লাহ।
- এইবার আমি ছেলেটার দিকে
মুখ তুলে তাকিয়ে দেখলাম ২৯
থেকে ৩১ বছরের যুবক।আব্বুর
ওপর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ।
কারন আমি একজন ডাক্তার হয়ে
এই ছেলেকে বিয়ে করব। চুপচাপ
বসে থাকলাম মন খারাপ করে ।
ছেলেটা বলতে শুরু করল ....
- অবাক হচ্ছেন নিশ্চই আরো ত
বেশি রাগ আসছে আপনার বাবার
ওপর।এটা তেমন কিছুনা ।আপনি
হয়ত আমার বয়স নিয়ে চিন্তিত ।
আমার
বয়স হচ্ছে ৩৩বছর। অক্টোবর
মাসের ২৭তারিখ আমার বয়স
হবে ৩৪বছর ।
- তাহলে ত আপনার বিয়ের বয়স
পার হয়ে গেছে । তাহলে আব্বুকে
বিয়ের পস্তাব দিলেন কেন ?
- আপনাকে আমি চিনিনা কিংবা
আপনার বাবার মেয়ে আছে কিনা তাও
জানিনা।আর তিনি নিজের থেকে পূর্বে
বিয়ের পস্তাব দিয়েছেন।
- আপনার ত বিয়ের বয়স পার
হয়ে গেছে ।
- হয়ত বা।
- আমি যদি আব্বুকে গিয়ে বলি
আপনাকে আমার পছন্দ হয়নি ।
তাহলে ....
- সত্য কথা বলতে ত কোনো
মানা নেই।
আর সত্যটা হলো আপনাকেও
আমার পছন্দ হয়নি ।
- যখন ছেলেটা এই কথাটা বলল
তখন মনে খুব কষ্ট পেলাম।আমি
দেখতেও খারাপ না,তাও একজন
সিনিয়র ডাক্তার ।
- আমাকে মনে হয় আপনি এখনও
দেখেননি ?
- একটা গজল শুনেছিলেন হয়ত...
"বাইরের সুন্দর সুন্দর নয়"
"সুন্দর সে ত মনে",
চেহারা দেখতে যার ভালো ,শুধু
সেই মানুষটা কি সুন্দর ?
- না !মন যার পবিএ,সেই প্রকৃত
সুন্দর।আমাকে আপনার কেনো
পছন্দ হয়নি ?
- শুকরিয়া।যখন আপনার বাবা
বলেছিলেন
আপনি
বোরকা পরে আসছেন না,তখন
থেকেই আপনি আমার অপছন্দ
হয়ে গেছেন।আমি কেন আপনার
দিকে তাকাইনি জানেন,কারন এই
জীবনে
চলার পথে আলহামদুলিল্লাহ মনে
হয়ত ইচ্ছা করে কোনো মেয়ের
দিকে তাকাইনি।নিজেকে যতটা
পর্দায় রাখার চেষ্টা করেছি ।
- বোরকা না পড়াতেই আমাকে
পছন্দ করেননি?আপনি কি না
তাকিয়ে,না দেখে কাউকে বিয়ে
করবেন ?
- পর্দাই নারীর সুন্দর্য।তাই শুধু
বোরকা
পড়লেই যে পর্দা হয়ে যাবে তা
কিন্তু না।পর্দা করারও কিছু নিয়ম
রয়েছে এবং পূর্নাঙ্গ পর্দা করা হলে
আপনাকে পছন্দ করতাম । যখন
আপনার বাবা এই কথাটা বললেন
তখন থেকেই
আপনি অপছন্দ। আর আমি জানি
নিজে
কতটা ভাল কিংবা কতটা খারাপ।
এই ৩৩ বছরের মধ্যে ২৩টা বছর শুধু
আল্লাহর দরবারে তাহাজ্জুদ পড়ে
একজন নেককার স্ত্রী কে চেয়েছি।
আর আমি জানি এই চাওয়া টা
মিথ্যা হবার না ।আমি যেরকম
সেরকম যদি কাউকে পাই তাহলে
কিছু প্রয়োজন নেই।আমি জান্নাত
চাই ,জাহান্নাম না ।
- ছেলেটার
চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। অজান্তে
আমার চোখে পানি চলে আসল ।
সত্যিই ত,জান্নাতে যাওয়া এতটা
সহজ নয় ।
- হঠাত্ করে ছেলেটার মোবাইটায়
ফোন আসল।ছেলেটা ফোন রিসিব
করল । ফোনের অপর থেকে শুনা
গেল একজন মহিলার কথা । হয়ত
ছেলেটার মা হবেন হয়ত । শুনতে
পেলাম মহিলার চশমাটা পড়ে গি
য়ে কাচ ভেঙ্গে গেছে ,যার কারনে
তিনি কোরআন পাঠ করতে কষ্ট
হচ্ছে।ছেলেটা আমার কাছে থেকে
বিদায় নিয়ে চলে গেল । আমাকে
কোনো কথা বলার সুযোগ দিলনা।
-
সেদিন সন্ধার পূর্বে বাসায় গিয়ে
দরজা লাগিয়ে অনেক কাঁদলাম ।
কেন জানি ছেলেটার কথাগুলো
মনকে কেড়ে নিয়েছে।মাগরীবের
আযান হচ্ছে।তারাতারি একটা
কালো বোরকা পড়ে সালাত পড়ে
আল্লাহর দরবারে অনেক কেঁদেছি
,অনেক।সে রাতে আমি কিছু খাই
নি।সারা রাত কেঁদেছি তওবা করে
ক্ষমা চেয়েছি।সকাল বেলা আমার
রুমে মা খাবার নিয়ে এসেছিলেন ।
মায়ের পা ধরে অনেকক্ষন কেঁদেছি
,কারন আমি মায়ের কোনো কাজে
সাহায্য করতাম না।মা'ও সে দিন
কেঁদেছিলেন । আব্বুর কাছে ক্ষমা
চেয়েছি।আমি এই
প্রথম কোনো ছেলের সাথে কথা
বলেছি।আমি কখনও কোনো বয়
এর সাথে
কথা বলিনি।সেদিন আব্বুকে বলে
কয়েকটা কালো বোরকা এনেছি ।
ইসলামিক ৭৯ টা বই আব্বু কে
বলেছি কিনে
দিতে।কিছুদিনের জন্য চাকরিটা
ছেড়ে দিয়েছি।প্রায় চার মাস ৯টা
দিনে বইগুলো পড়া সমাপ্ত করি ।
তারপর প্রতিটাক্ষন কেঁদেছি।হঠাত্
একদিন একটা স্বপ্ন দেখে ঘুমটা
ভেঙ্গে গেল।স্বপ্নে দেখলাম ছেলেটা
কাকে যেন বিয়ে করে ফেলেছেন।
আর ছেলেটা আমাকে বলছেন ,
"আপনি ভালো কিছু করে যান,
এর প্রতিদান কেউ দিক ,বা না
দিক !
মহান আল্লাহ ঠিকই দিবেন।"
এই
কথাটি শুনার পর গলাটা শুকিয়ে
গিয়েছিল।এই কয়েকটা মাসে আমি
রান্না করা থেকে সব কাজ শিখে
ফেলেছি।এখন আর আম্মুকে রান্না
করতে দেই না।
সকালের নাস্তা তৈরি করে টেবিলে
রেখে,আব্বুকে ডাক দিলাম।আমি
আব্বুর পাশে দাঁড়িয়ে আছি।হঠাত্
বাবার
ফোন এলো।আব্বু একটু আড়ালে
গিয়ে কথা বলছেন।
ফোনে কথা বলা সমাপ্ত করে খেয়ে
,অফিষে চলে গেলেন।রাতের বেলা
ইশার
সালাত আদায় করে রান্না করতে
গেলাম।কলিং বেলটা বেঁজে উঠল।
আব্বু গিয়ে দরজা খুললেন। একটু
পর আম্মু আমাকে ডাকলেন।আমি
সেখানে
গিয়ে দেখলাম একজন পুরুষ এবং
একজন বোরকা পরণিত মহিলা ,
সেখানে বসে আছেন।আমার গলটা
শুকিয়ে যাচ্ছে।আব্বু বললেন যাও
মা
সালাম করো।আমি সালাম করার
পর
সেই মহিলা আমার কপালে একটা
চুমো
খেলেন।তারপর আম্মু বললেন ....
ওনারা নিশাদের বাবা-মা।আর
ওনারা তোমাকে দেখতে এসেছেন।
চোখে পানি চলে এলো।মহিলা ও
মায়ের সাথে রান্না ঘরে চলে এসে
রান্না করছি
আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায়
করছি।
শুধু সেই মহিলা আমার মুখ দেখে
ছিলেন।এর ২মাস পরে আমাদের
বিয়ে হয়ে যায়।মনে মনে ভেবেছি
আজ রাতে আপনাকে অনেক বকা
দিব।
.
আমার
স্বামী যখন কক্ষে...প্রবেশ করলেন।
তখন কেমন যেনো..একটা সৌরভ
ভেষে আসছিল।....আমি পায়ে ধরে
সালাম করলাম.........আমার স্বামি
আমার কপালে একটা চুমো....দিয়ে
বললেন.......আপনার ত খুব ইচ্ছা
আমাকে বকবেন।বকতে.মানা নেই
,কিন্তু বকার বিষয়টা পূর্বে......বলে
দিবেন।সেইদিন আমি..আমার প্রিয়
তম স্বামীর দিকে যখন.....তাকিয়ে
ছিলাম,তখন মনে হচ্ছিল...আমার
দেখা প্রথম একজন পুরুষ.....যাকে
আকাশের চাঁদের চাইতেও.....বেশি
সুন্দর লাগছে।এবার আমার স্বামী
আমার চোখের দিকে.......তাকিয়ে
বললেন ......
.
.
. '" ভাল লাগে দেখতে তোমার
...ওই মুখ,কারন তোমি একজন
পর্দাশীল নারী .....
.
0 Comments