মিতুর এবরশনের কাজ টি করা হয়েছে খুব গোপনে। বাবা- মা আর মিতু ছাড়া ঘটনা টি কেউ জানেনা। বাচ্চাটির বয়স হয়েছিল পাঁচ মাস। বছর দেড়েক আগে ক্লাস নাইন পড়ুয়া মিতু পাশের এলাকার করিম শেখের ছেলে রাসেল শেখের প্রেমে পড়েছিল। রাসেল তখন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।বয়সের দিক থেকে দুজনের কেউই পরিপক্ব নয়। দিনের পর দিন দুজন মিলে ফোনালাপ চালিয়ে যাচ্ছিল। একটি রাত কথা না হলে দুজনের যেন ঘুম আসতো না। রাতের পর রাত জেগে জেগে কথা বলার দরুন দুজনের পরীক্ষার ফলাফল দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছিল। মিতুর বাবা-মা মেয়ের প্রেমের বিষয়টি বুঝতে পেরে গিয়ে, মেয়ে কে চোখে চোখে রাখলেও, রাসেল মিতু বাবা-মা'র চোখ কে ফাঁকি দিয়ে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার রাসেলের বন্ধু পলাশদের ফ্ল্যাটে যেয়ে দেখা করত। পলাশের বাবা-মা দুজনই চাকরিজীবী হওয়ায় বাড়িটা দিনের বেলা থাকত একদম ফাঁকা। পলাশ রাসেলের খুব ভাল বন্ধু হওয়ায় কখনো না করতনা। মিতুর তখন ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। এক সকালে খবর এলো মিতুর দাদু ভীষণ অসুস্থ। বাঁচে কি মরে তার ঠিক নেই। মিতুর বাবা-মা মেয়ে কে একা বাসায় রেখে যেতে না চাইলেও পরীক্ষার কারণে শেষ পর্যন্ত একা রেখে যেতে বাধ্য হয়েছিল। সেই সুযোগ হাতছাড়া করেনি রাসেল। মিতু প্রথমে কিছুতেই রাজী হচ্ছিল না, কেউ দেখে ফেলে যদি বাসায় এসে বলে দেয় তো বাবা তাকে মেরেই ফেলবে, কিন্তু রাসেল কলের পর কল দিয়ে যাচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত সবকিছু ভুলে গিয়ে দরজা খুলে দিয়েছিল মিতু। মাস তিনেক পর থেকে মিতুর পেটের আকার অস্বাভাবিক রকমের বড় হতে শুরু করেছে, বিষয় টি মিতুর বাবা-মা'র চোখ এড়িয়ে যায়নি। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানা গেছে মিতু মাস তিনেকের অন্তঃসত্ত্বা। বিষয়টি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ইকবাল সাহেব (মিতুর বাবা)। এতো চোখে চোখে রাখার পরও এ কি করে সম্ভব? কয়েক যায়গায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফলাফল একই আসায় শেষ পর্যন্ত তিনি বিশ্বাস করতে বাধ্য হলেন। একদিন রাসেলকে বাসায় ডেকে নিয়ে এসে দু তিনটা চড় মেরে জিজ্ঞাসা করলেন- মিতুকে তুমি বিয়ে করবে? রাসেল চুপচাপ আসামীর মতন দাঁড়িয়ে ছিল। বার বার জিজ্ঞেস করার পর মিতুর সাথের সব সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল রাসেল। সমাজের একজন সন্মানী ব্যক্তি ইকবাল সাহেব। তার মেয়ে বিয়ের আগেই কনসিভ করেছে জানলে সমাজে মুখ দেখাবেন কি করে? শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে খুবই গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে বাড়িতেই মিতুর এবরশন হয়ে গেল। পরের দিন সকালে প্রায় প্রত্যেকটি সংবাদ পত্রের প্রথম পৃষ্ঠার হেডলাইনে প্রকাশিত হল "সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ডাস্টবিনে ক্ষত-বিক্ষত নবজাতকের লাশ"। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে থাকা বাচ্চাটি মেয়ে ছিল। ছোট্ট শরীরটা সবে মাত্র পরিপক্ব হতে শুরু করেছিল। পুরো শরীরে ক্ষত আর রক্তের ছড়াছড়ি নিয়ে মেয়েটি সারারাত পরে ছিল ডাস্টবিনে। তার উজ্জ্বল-দীপ্ত, নিষ্পাপ মুখটিতে শুধু একটি প্রশ্নই বিরাজ করছিল- আমাকে বাঁচতে দিলে না কেন? বিঃদ্রঃ লেখায় ব্যবহৃত নামগুলো কাল্পনিক। ভালোবাসা অপরাধ নয়, ভালোবাসাকে অপবিত্র করা অপরাধ। নবজাতক বাচ্চাগুলো নিষ্পাপ, পৃথিবীর বুকে তাদেরকে স্থান না দেয়া অপরাধ, যেই অপরাধের কোন ক্ষমা হয় না।