গতরাতে বাবার দেওয়া ৫ হাজার টাকা নিয়ে বসে আছি। মনের সাথে যুদ্ধ করছি প্রতিটা মুহূর্ত। আজ আমার প্রেমিকার বিয়ে। দীর্ঘ ৪ বছরের সম্পর্ক আমাদের। কি করব কিছুরই কূল কিনারা পাচ্ছি না। নীরা বলছে পালিয়ে যেতে। কারণ তার বাবা-মাকে এখন যত কিছুই বলুক না কেন, তারা কিছুই মানবে না। ভুল টা হয়তো বা আমারই ছিলো। নীরা অনেক আগেই বলেছিল তার মা-বাবার সাথে দেখা করার জন্য। তাদের এই হঠাৎ সিদ্ধান্তে আমি পুরোই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। নাহ!!!! আর কিছুই ভাবতে পারছি না! এখন পালিয়েই যেতে হবে! ফোনটা বের করেই নীরার নাম্বারে কল দিলাম। সাথেই সাথেই রিসিভ। হয়তো আমার অপেক্ষাই করছিলো। - নীরা!!! - হ্যাঁ! ইশান বলো? কিছু ভেবেছো? - হুম। চলো... - পালিয়ে যাবো? (খুশি হয়ে) - হ্যাঁ মহারাণী। চলেন পালিয়ে বিয়ে করি। তারপর আপনাকে বাসায় নিয়ে আসবো। আব্বা-আম্মা একটু বকা দিলেও তারা খুবই ভালো তোমাকে মেনে নিবে। - তাহলে বলো কখন, কোথায় আসতে হবে। - হ্যাঁ! বিকেল ৪ টায় ১১ নম্বর রাস্তায় থেকো। সাথে মলি আর প্রিয়াকেও এনো। - আচ্ছা ঠিক আছে। - রাখি এখন। সাবধানে এসো। ফোন কেটে দিয়ে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছি। সবে বাজে সকাল ১১ টা। আরোও অনেক সময় বাকি। চোখটা লেগে এসেছিলো। হঠাৎ আজানের শব্দে ঘুম ভাঙলো। গোসল করেই চলে গেলাম মসজিদে। নামাজ শেষে ১ম কাজ হলো আমিন আর জাকারিয়াকে সব খুলে বলা। গলির চায়ের দোকানে বসে আছি ৩ জন। আমি, আমিন আর জাকারিয়া। - দোস্ত ভাবলাম তোদের ভাবিকে নিয়ে পালিয়েই যাই। কি বলস? - আমরা তো আগে থেকেই বলতাসিলাম (আমিন) - হুম। এখন বল কই কি যামু। (জাকারিয়া) - তোদের ভাবিকে বলসিলাম ১১ নম্বর রাস্তায় থাকতে মলি আর প্রিয়াকে নিয়ে। জাকারিয়া, মলি হবি আমার সাক্ষি আর আমিন, প্রিয়া হবি নীরার সাক্ষি। (আমি) - টাকা পয়সা কিছু লাগবো?? (আমিন) - আরে নাহ! কালকে আব্বা ৫ হাজার টাকা দিসিলো ওইগুলাই মাইরা দিমু। - হুম তাহলে আমাদের উপরে ছেড়ে দে। । কাজি অফিসে বসে আছি, পাশে নীরা। ভালো মতই বিয়েটা শেষ হলো। কাজি ১৫০০, ফুলের মালা ৫০০, অন্যান্য ৩০০০। এখন বাকি কাজ হলো বাড়ি যাওয়া। কিন্তু সন্ধ্যা হতে বেশ কিছু সময় বাকি। ভাবলাম ৮ টার দিয়েই রওনা দিবো, এখন গেলে পাড়া-প্রতিবেশিদের একটা ভয় থাকে। । ঘরের পরিবেশ একদম থমথমে... আব্বা :- ইশানের মা!! মেয়েকে তার রুমে নিয়ে যাও। আম্মা :- জ্বী! আব্বা :- ইশান!!! আমি :- জ্বী আব্বা। (ভয় পেয়ে) আব্বা :- তুই আমার রুমে আয়। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি আমি। সামনে আব্বা। আমার কাঁধে হাত রেখে আব্বা বললো - " দেখ বাপ! বিয়ে করেছিস মেয়ের বাড়ির খেলাফে তাতে আমার কিছু যায় আসে না কারণ এখন সে আমার বাড়ির বউ। ওই বাসায় তোদের না মানলেও কোনো সমস্যা নেই, কারণ বউমার আসল ঠিকানা হচ্ছে এইটা।" (আব্বার কথা শুনে বোকা বনে গেলুম!) " তুই ওর বাসায় কিছু জানাস নি কিন্তু বউমা আমাকে আগেই সব বলেছে। তাই তো গত রাতে তোর টেবিলের উপরে টাকা গুলি রেখে এসেছি। তোর মা আর আমিও এভাবেই পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছি এবং তোর দাদা আমাদের মেনে নিয়েছিলো, ঠিক এখন তোদের যেভাবে আমি মেনে নিয়েছি। দেখবি ভবিষ্যৎ -এ যখন এই সব মনে পড়বে তখন ভিতরে কেমন একটা অজানা সুখ কাজ করবে। এখন বউমা'র কাছে যা। রাত তো অনেক হলো।" (অজানা কারণে সেদিন আব্বার পা ছুঁয়ে ২ ফোটা পানি গড়িয়ে পরেছিল)