Horror Story:
মিথ্যা সাক্ষী:
1বন্ধুরা দুইটা মৃত্যু বুঝলাম তবে গাছের মৃত্যু মানে কি??চলুন শুনে আসি আজকের গল্পটা.
অন্তপুরি গ্রামের পশ্চিম দিকে কিছুদিন ধরে মানুষ আতংকে.দিনের বেলায় যেমন তেমন.রাতের বেলায় মানুষ ভয়ে পাগল হয়ে যায়.
সেদিনের ঘটনাটা সবার মনে কেমন জানি আতংক সৃষ্টি করেছে.
আমরা ছোট কালে সবাই আম চুরি করি তাই না?ছেলে হোক মেয়ে হোক আম চুরি তো করেছেন সবাই??তাহলে শুনে আসি আম চুরি থেকে কি ঘটলো??
ইমনও নয়ন দুই ভাই.জমজ তারা দুজন.জন্মের পর থেকে দুষ্টুমির শেষ নেই.বয়স ১০ এ পড়েছে দুজনেই.
সে কি ভয়ংকর ঘটনা ঘটলো??রাতের বেলায় দুভাই প্লান করেছে আজ মাননীয় জজ মীর্জা সাহেবের বাগানে আম চুরি করবে.
রাতের আধারে আম চুরি করতে যায় দুজনেই.হঠাৎ বৃষ্টি নেমেছে.তারা আরও খুশি হয়ে যায় ভালো ভাবে আম চুরি করা যাবে তাই.
মীর্জা সাহেবের বাগানের পাশে যেতে যেতে রাত ১০টা পার হলো..ইমন গাছের উপরে উঠেছে আর নয়ন নিচে.
ইমন আম ছিঁড়তে লাগলো.নয়ন পাহাড়া দিচ্ছে.ইমন গাছ থেকে নামবে নামবে করে নয়ন অপেক্ষা করছে.তবে ইমন নামছেই না..
নয়ন বলতে লাগলো ভাই নাম এইবার.আর নিস না.ধড়া পড়ে যাবো.আই এইবার.কার ইমন কই?সাড়া শব্দও নেই.
নয়ন বললো ভাই তুই খা এতো আম,আমি যাচ্ছি চলে এইবলে নয়ন ইমনকে রেখে চলে যায়.
বাড়ীতে গিয়ে নয়ন অনেক অপেক্ষা করলো কিন্তু ইমন আসলো না.নয়ন ঘুমিয়ে পড়ে.সকালে গ্রামবাসীর চিৎকার চেচামেচি শুরু হয়ে গেছে.
ইমনের লাশ বাগানে পড়ে আছে সাথে পড়ে আছে আম গাছ.সবাই মনে করেছে গাছ ভেঙ্গে পড়ে মরেছে.তবে ইমনের শরীরে অন্যরকম চিহ্ন সব.হাতের রগ গুলো কাটাকাটা.গ্রামবাসী দ্বিধায় পড়ে যায়.
কেমনে সম্ভব?গাছ থেকে পড়ে মরলে এরকম হবে কেন লাশের শরীর?এ যেন রহস্যময়ী মৃত্যু.
নয়ন খুব ভয় পায়..নয়ন কান্না করে গ্রামবাসীর কাছে স্বীকার করে সেই আম চুরির কথা এবং বাকী ঘটনা.
গ্রামবাসী মীর্জাবাড়ির মানুষদের সন্দেহ করছেন.তবে সামান্য আমের জন্য মীর্জা সাহেব বা তাঁর পরিবার এমনটা করতে পারেন না.মীর্জা সাহেব একজন জজ.
মীর্জা সাহেব বলে দিয়েছেন যদি সন্দেহ লাগে আপনারা যা ইচ্ছে করতে পারেন.কি মিসকিল??কে হতে পারে ইমনের খুনি??
ইমনের এমন খুন কেউ ধারণা করতে পারছে না.হলোটা কি?তবে ঐ দিনের পর থেকে মীর্জা বাড়ীর বাগানটিতে চিৎকার চেচামেচি শুরু হয়.
মীর্জা সাহেবের ছেলে মীর্জা আবির.ইমনের ঘটনার পর বাগানে যাবে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে.
বউকে বলেছে আজ আম বাগানে যাবো.বউ বললো এটা কেমন কথা??ইমনের ঘটনা ভুলে গেছো নাকি??আবির সাহেব বললো সেজন্য তো যাচ্ছি.
গ্রামের অনেকে বলেছে রাতে ওখানে শব্দ শুনা যায়.কে করে এই শব্দ দেখতে হবে আমার..
বউকে বললো তুমি ঘুমাও.আমি যাবো আর আসবো।এই বলে চলে যায় আবির সাহেব..বউ না ঘুমিয়ে অপেক্ষা করছে.বউয়ের কেমন জানি ভয় করছে.
অপেক্ষা করতে করতে ঘুম চলে আসলো আবিরের বউয়ের.
আবির বাগানে যেতেই শরীর ভারী হয়ে গেলো.বৃষ্টি আসলো.খুব ভারী বৃষ্টি.কান্না শুনতে পাচ্ছে আবির.দ্রুত বাগানে ডুকে বলতে শুরু করলো কে আম চুরি করতে আসছিস বের হ.
তখন একটা হাসি বের হয় পুরো আম বাগান থেকে..আবির ভয়ে কাঁপছে.বৃষ্টির দ্বারা আরও বাড়তে থাকে.আর এমন জঘন্য শব্দ আর শুনেনি আবির..
ভাঙ্গা গলায় কেউ বলছে আম চুরি করতে আসিনি..এসেছি প্রাণ চুরি করতে.মুক্তিপণ দাবি করতে এসেছি.তুদের বাগানটা অভিশপ্ত বানিয়েছি..খেলা শুরু করেছি মাত্র.
এরপর কি ঘটলো জানা নেই কারো।আবির সাহেবের মৃত্যু সেই রাতেই.সকাল বেলায় স্ত্রী ঘুম থেকে উঠেই দেখে আবির সাহেব বাড়ীতে আসেনি.
বউ কান্না করে সবাইকে ডাকলো.বাগানে গিয়ে দেখে একটা বড় আম গাছ পড়ে আছে পাশে আবিরের লাশ.
আবিরের শরীরে রক্ত নেই.রক্ত শুষে খেয়েছে..হাতের রগ টেনে টেনে বের করেছে..আহা কি ভয়ংকর মৃত্যু??
বন্ধুরা এতোক্ষণে আপনাদের তো জানা হয়ে গেলো এটি আত্মা ছিলো তাই না??তবে কার আত্মা মারলো আবির সাহেবকে??
ভাঙ্গা গলায় মুক্তিপণ দাবি করতে এসেছি বলে কি বুঝিয়েছে??এটা কি আত্মা নাকি অন্য কিছু??
2
পরের দিন সকালে আবিরের লাশ.সাথে একটি গাছও পড়ে আছে.দুজনের মৃত্যুতে দুইটি গাছ পড়ে গেলো.
একজন ১০বছরের বাচ্চার লাশ.অন্যজন বাগান মালিকের ছেলে বিবাহিত আবিরের লাশ.
গ্রামবাসী আতংকে.অন্তপুরের পশ্চিম দিকে সেই আম বাগানে রাতের বেলায়
"আমি দোষী ছিলাম না",,"আমি নির্দোষ ছিলাম"
এই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে কেউ একজন।
তবে কে এই নির্দোষ আত্মা??দুইটা প্রাণ নিলো তারপরও বলছে নির্দোষ ব্যাপারটা কি?
দুজনের মৃত্যুর পর গ্রামে পুলিশ এসেছে..মীর্জা সাহেব পুলিশকে সবকিছু জানিয়েছেন.পুলিশ একটি টিম গঠন করেন.
সেই টিমের লিডার বা নেতৃত্ব দেন এস আই সুজন.এস আই সুজন খুব রাগী মানুষ..
যেকোনো কঠিন মামলার আসামিকে ধরে সাথে সাথে ক্রসফায়ার দিয়ে দেয়.
এই বাগানে অনেক আসামিকে ক্রসফায়ার দেওয়া হয়েছে.তবে গ্রামবাসী তা জানে না.
পুলিশ অফিসারসহ বাগানে পাহাড়া দিচ্ছেন ৬জন.আবিরের মৃত্যুর ৫দিন পর এই পাহারার সিদ্ধান্ত পুলিশ অফিসারের.
রাত ১২টা ছুঁইছুঁই.অফিসার সুজন সাহেব তার সঙ্গীদের বলেছেন যখনি কোনো কঠিন পরিস্থিতি আসবে তখনি ফায়ার করবা.
৫জন পুলিশ সদস্য ঘুরাঘুরি করছে.হঠাৎ এক কনস্টেবল শুনতে পায় হাসির শব্দ..বাগানের এক কোণা থেকে আসছে শব্দটা.
ভিতরে প্রবেশ করে ঐ পুলিশ.অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু বের হলো না..অফিসার সুজন বললেন কনস্টেবল মতিন কই??
সবাই মিলে খুঁজতে লাগলো.সুজন সাহেব বলতে লাগলো বেটা আম খেতে বাগানে ডুকে পড়েছে তাই না?
তোমরা বাইরে থাকো আমি থাপ্পড় দিয়ে আনতেছি মতিনরে.এই বলে প্রবেশ করে অফিসার.
এতো বড় বাগান.অন্ধকার আর বৃষ্টিও নেমে এসেছে হঠাৎ.সুজন সাহেব ডাকতে লাগলো মতিন..ও মতিন..এখন কি আম খাওয়ার টাইম??
বের হও..আসো এইবার.আম আমার জন্যও নিয়ে আসো..যেতে যেতে বাগানের এক কোণায় পৌঁছায় অফিসার সুজন সাহেব.
দেখলো একটি গাছ পড়ে আছে.অফিসার বললো আরে বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু বাতাস নেই.গাছটা পড়ে গেলো?
যাক আম খাই কয়েকটা বলে বসে পড়ে সেখানে.হঠাৎ চোখ যায় বাগানের কর্ণারে দেয়ালে মতিন দাড়িয়ে আছে.
সাড়া শব্দও নেই.কিরে মতিন কি করছো এখানে?তোমাকে খুজতে আসলাম.এখন আম খাওয়ার সময় নয়.আসো.
কোনো কথা বলছে না মতিন.অফিসার সুজন রেগে গেলেন.আর বললেন কি হলো আসো..তারপরও মতিন কথা শুনছে না.
কিরে মতিন তো এমন অবাধ্য ছেলে নয় তাহলে আজকে এমন করছে কেন বলে সন্দেহ চলে আসলো অফিসারের.
দৌড়ে কাছে গেলো.গিয়ে দেখলো মতিনের নাক থেকে রক্ত পড়ছে..মতিনের দেহটা ঠান্ডা হয়ে গেছে.আধাঘন্টা আগেই মেরেছে মতিনকে..
অফিসার অস্ত্রটা বের করে বললো কে এমন কাজ করেছিস??বের হ..
উত্তরে কেউ একজন বললো আমি করেছি অফিসার.পরিচয় দিলে চিনতে পারবেন আমায়?
সুজন সাহেব খুব ভয় পেয়ে যায়.এমন কন্ঠ তার চাকরি জীবনে আর শুনেননি.ভয়ে বললেন কে তুমি পরিচয় দাও.হাতে অস্ত্র ধরে আছে অফিসার।
অস্ত্র হাত থেকে পড়ে যাবে এমন অবস্থা.ভয়ে কাঁপছে অফিসার.তখন ভাঙ্গা গলায় কেউ একজন বলতে লাগলো..
সয়েছি আমি অনেকদিন,,
মুক্তি মিলেনি কোনোদিন.
ক্ষমতা তোমার চাঙ্গা ছিলো,,
অস্ত্র তোমার খেলনা ছিলো.
সৎ মানুষরা অসৎ হলো,,
টাকার কাছে বিক্রি হলো.
এলো আজ আমার দিন,,
ছাড়বো না আমি কোনোদিন.
করছি আমি মুক্তির দাবি,,
আদালত আমার মৃত্যুর ঘাঁটি.
কবিতাঃলেখক নিজেই.
এমন কবিতা শুনে ভয়ে আরও কাঁপতে থাকে সুজন সাহেব.এলোমেলো বুলেট ছুঁড়তে থাকে.
তখন হাসির শব্দে বলতে লাগলো এখন কোনো পাওয়ার নেই এই যন্ত্রপাতির.ক্ষমতা এখন শুধু আমার..হাহাহা..
এই বলে সুজন সাহেবকেও মেরে দেয়.সাথে ঐ রাতে বাগানের দুটি গাছ ভেঙ্গে গেলো.
কি অদ্ভুত বিষয়.পুলিশরাও ছাড় পেলো না.চারটি গাছও ছাড় পেলো না..
গ্রামে আরও ভয়ভীতি সৃষ্টি হয়.গ্রামবাসীর কাছে সমীকরণটি অমীল.স্বপ্নের মতো সবার কাছে.যেখানে সবাইকে রক্ষা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে তাঁদের রক্ষার প্রশ্ন উঠেছে.
কই গিয়ে থামবে এই মৃত্যু??
হচ্ছেটা কি??এই আত্মার সাথে পুলিশের কি সম্পর্ক??
নিশ্চয়ই সম্পর্ক আছে,,
হয়তো সম্পর্ক আছে ইমনের সাথে,,
সম্পর্ক আছে আবিরের সাথে,,
সম্পর্ক আছে পুলিশের সাথে..
সব ই উদঘাটন হবে এই গল্পে.
পড়তে থাকুন বন্ধুরা..
এদিকে মীর্জা সাহেব স্বপ্নে দেখছে তাঁর বাগানের ৯৯টি আম গাছ ভেঙ্গে পড়েছে.বাগানের গাছ গুলোও আকুতি মিনতি করছে বাঁচতে..
ঘুম ভাঙ্গলে ভাবতে থাকেন জজ সাহেব.কি দেখছেন তিনি??
শিক্ষিত মানুষ সুতারাং জ্ঞানের কোনো কমতি নেই ওনার.যেহেতু তাঁর ছেলেসহ ৪জনের মৃত্যুতে ৪টি গাছ ভেঙ্গে পড়েছে সেহেতু ওনি ভালো ভাবেই বুঝতে পারছেন কি হতে চলছে বাগানে??
অন্তপুরির মানুষ ও মীর্জা পরিবারের জন্য কি অপেক্ষা করছে সেটা ভালো ভাবেই জানা হয়েছেন জজ সাহেবের.
তিনি ভাবতে লাগলেন কি করা যায়??কদিন পরপর মৃত্যু হলে তো জজ সাহেব বিপদে পড়বেন.নিজের ছেলের শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি তাতে এতো বিপদ সামলাবেন কেমনে??
সিন্ধান্ত নিয়েছেন এক রাতে নিজেই জাবেন বাগানে.দেখবেন কি হয়??যদিও বেঁচে ফিরবেন তার কোনো গ্যারান্টি নেই তারপরও যাবেন..
স্ত্রীকে বললেন চাকুরী জীবনের আজ ২৫বছর.এমনটা কখনো হয়নি.স্ত্রী বলতে লাগলেন হয়তো কোনো পাপের শাস্তি পাচ্ছো তুমি..
জজ সাহেব বললেন হয়তো.সেদিন রাতে স্ত্রী ঘুমিয়েছেন.সে ফাঁকে বের হলেন মীর্জা সাহেব(জজ সাহেব).
বেরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন সময় ১ঃ৫০ মিনিট.বের হয়ে দেখলেন একটা ছেলে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছে..
অন্ধকার চারপাশ.চেহেরাটা দেখা যাচ্ছে না.জজ সাহেব দূর থেকে প্রশ্ন করলেন "কে ওখানে"??এতো রাতে কি করছো ওখানে??
ছেলেটি কোনো উত্তর দিলো না.আরেকটু কাছে গিয়ে বললেন কি হলো কথা শুনছো না?
তখন ছেলেটা উত্তর দিলো আমি আমি.জজ সাহেব বললেন আমি মানে??ছেলেটি বললো আমি মানুষ.মা খুব অসুস্থ মাকে দেখতে গেছিলাম.
জজ সাহেব বললেন মাকে দেখতে গেছিলা মানে?তুমি থাকো কই?ছেলেটি বললো চিরস্থায়ী কারাগারে.এই বলে ছেলেটি চলতে থাকে.
জজ সাহেব পিছু নিয়েছেন.ছেলেটা আগে আগে জজ সাহেব পিছে পিছে.দূরত্বটা অল্প
জজ সাহেব অনেক প্রশ্ন করতে লাগলেন.বললেন তুমি কোন কারাগারে থাকো??আমি তোমাকে হেল্প করবো.বলো তুমি.আমি একজন জজ.তোমাকে বের করবো আমি.
ছেলেটি বললো আগুন লেগে পুড়ে গেছে সব.এখন পানি দিয়ে আর লাভ নেই..এরকম উদ্ভুত কথা বলতে বলতে আম বাগানের কাছাকাছি চলে যায় ছেলেটি.
জজ সাহেবও সামান্য দূরে ছেলেটির থেকে.ছেলেটি আম বাগানে ঢুকতে যাচ্ছে এমন সময় জজ সাহেব বললো যেও না ওখানে..
ওখানে বিপদ..সামান্য আমের জন্য প্রাণ হারাবে তুমি.ছেলেটি বাগানের গেইট বরাবর গিয়ে একটি হাসি দেয়.সাথে সাথে বৃষ্টি নেমে আসে..ছেলেটি বাগানে ঢুকে পড়ে.
তাহলে বলুন তো ছেলেটি কে??
জজ সাহেবের সাথে ছেলেটির কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে??
জজ সাহেব আজ প্রাণে বেঁচে ফিরতে পারবেন কি??
সব কিছু জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন
জজ সাহেব বাগানে ঢুকলেন.বৃষ্টির আওয়াজে কান বন্ধ হয়ে যাবে এমন অবস্থা..আকাশ খুব ডাকাডাকি করছে..
বাগানে ঢুকে জজ সাহেব চিৎকার দিয়ে বললেন এই ছেলে কই তুমি?বের হয়ে আসো.আম আমি তোমাকে খাওয়াবো.
আমের জন্য প্রাণ হারাইয়ো না.বের হও বলছি..তখনি শুরু হলো হা হাহা হাহাহাহাহা হাহাহাহাহা শব্দ.
বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল হঠাৎ.আওয়াজ দিয়ে বললো কেউ একজন "সাহেব.. স্বাগতম আপনাকে"...আসুন..দেখে যান আমার কারাগারটা.
জজ সাহেব ভয়ে মাটিতে বসে পড়েন.তবে ওনি লক্ষ্য করলেন যে আওয়াজটি ওই ছেলেটার.তাই সামান্য সাহসও পাচ্ছেন.
জজ সাহেবকে প্রশ্ন করলো সাহেব ভয় পাচ্ছেন বুঝি??বিচারকার্য্যে কখনো ভয় পেয়েছেন কি??ওও হাহাহাহাহাহা ওহ হাহহাহা(হাসির আওয়াজে)
জজ সাহেব বললেন বাবা কে তুমি??সামনে আসো..ভাঙ্গা গলায় বলতে লাগলো স্যার আমি সামনে আসলে আপনার বিপদ.আইনকে আমি সম্মান করি..
তবে আইনের অপব্যবহারকারীদের সাথে আমি পার্টি করি..মরণ পার্টি.আপনি এখন যোগদান করবেন কি??হাহহাহাহাহাহা
হঠাৎ জজ সাহেব লক্ষ্য করলো একটি আম গাছের অর্ধেক ভেঙ্গে যাচ্ছে.তখনি আওয়াজ আসলো স্যার এটা সবার শেষে আবার পুরোটা ভাঙ্গবো..
কি আজব কথা তাই না বন্ধুরা??৪টা মৃত্যুতে চারটি গাছ একদম ভেঙ্গে পড়েছিলো কিন্তু এখনও জজ সাহেব বেঁচে আছেন আর গাছটা অর্ধেক ভাঙ্গা..
সবার শেষে আবার ভাঙ্গবো মানে কি বুঝিয়েছে আত্মা??
চলুন এতো না ভেবে গল্পে প্রবেশ করি আবার..
জজ সাহেব ভয়ে মাটিতে গড়াগড়ি করছেন.তিনি ভেবেছিল এই বাগানে আসামিদের ক্রসফায়ার দেওয়া হয় তাই বুঝি কেউ একজন সবাইকে খুন করছে.
তিনি নিজের চোখে দেখতে এসেছিলেন ব্যাপারটা.তবে আজ ভিন্ন কিছুর দেখা পেলেন তিনি.
তিনি ভেবে নিয়েছেন আজ তাঁর শেষ দিন.হঠাৎ জজ সাহেবের পিছন দিক থেকে কেউ একজন জজ সাহেবকে গলা ধরে মাটি থেকে তুলে ফেলেছে.
জজ সাহেবের শরীরটা হাওয়ার উপরে ভাসছে..জজ সাহেবের শরীর থেকে কাপড় ছিড়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে.শরীর থেকে রক্ত পড়ছে.শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে.
জজ সাহেব আকুতি জানাচ্ছেন বাঁচতে.প্লিজ আমাকে মেরো না.কি চাও বলো.উত্তরে আত্মা বলছে যা চাই তা আপনি দিতে পারবেন না..
জজ সাহেব খুব বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন.জজ সাহেব নিজের মৃত্যুটা খুব কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছেন.
হঠাৎ একটা আম উড়ে এসে স্বজোরে জজ সাহেবকে আঘাত করে.জজ সাহেব অজ্ঞান হয়ে যায়.সকাল হলো.
বন্ধুরা এতোক্ষণে ভাবছেন জজ সাহেবকে আত্মা মেরে ফেলেছে??আরে না মারেনি.এতো গভীরভাবে ভাববেন না.
সকালে জজ সাহেবকে অজ্ঞান অবস্থায় বাসায় আনা হয়.প্রায় ৪ঘন্টা পর জ্ঞান আসে জজ সাহেবের তবে কিছুই মনে নেই জজ সাহেবের.
সবাই প্রশ্ন করতে লাগলো কি হয়েছে??কেন ওখানে গেলেন??
জজ সাহেব বলছেন কি হয়েছে তোমরা এতো প্রশ্ন করছো কেন??সবাই অবাক হয়ে গেছে.কিছু মনে নেই জজ সাহেবের??
সবাই বললো আপনাকে আম বাগান থেকে সকালে অজ্ঞান অবস্থায় এনেছি.আপনার সারা শরীরে রক্তের দাগ.তবে বাকী ঘটনা আপনার জানার কথা.
কিন্তু জজ সাহেব বলছেন কিছুই মনে নেই তাঁর.তিনি বলছেন আমি বাড়ি থেকে বের হই আম বাগানে যেতে.তবে কেমনে গেলাম বা কি হলো তা মনে পড়ছে না..
শুধু মনে আছে একটা ছেলের সাথে পথে দেখা হয়েছিল.সে কই গেলো তা মনে নেই.সে অনেক কথা আমাকে বলেছে তাও মনে নেই.
সবাই বললো তাহলে রেস্ট করেন আপনি.বেঁচে ফিরেছেন এটাই অনেক সৌভাগ্য..
বন্ধুরা কি আজব তাই না?পথে একটি ছেলের সাথে দেখা হওয়ার পর কত কথা হলো,,বাগানে আত্মার আক্রমণ তবে কিছুই মনে নেই জজ সাহেবের??
এ যেন রুপকথার গল্পতে প্রবেশ করেছে জজ সাহেব..
রাতে ঘুম নেই জজ সাহেবের.ঘুমালে দেখে আম গাছ গুলো ভেঙ্গে পড়ছে.কবর তৈরি হচ্ছে অনেকগুলো..
জজ মীর্জা সাহেবের স্বপ্ন কতটুকু বাস্তবে রুপ ধারণ করতে পারে??যাক পড়তে থাকুন.
এর কদিন পর গ্রামে একদিন ডাকাত এসেছে.এলাকাবাসী জানতে পেরেছে তাই সবাই একত্রে ডাকাত তাড়ানোর জন্য সজাগ হয়েছে.
ডাকাত গুলো মানুষের অবস্থান বুঝতে পেরে আম বাগানে অবস্থান নেয়.গ্রামবাসীরা জানতে পারেন সেটা.
গ্রামবাসীর কারও সাহস নেই সেই আম বাগানে যাওয়ার.মীর্জা সাহেব বলেছেন কেউ ভিতরে যাবা না.
বাগানের চারপাশে সকাল পর্যন্ত পাহারারত থাকো.সকালে ধরবো ওদেরকে.কিন্তু সকাল পর্যন্ত থাকতে পারবে তো গ্রামবাসী ঐ জায়গায়??
গ্রামবাসী আম গাছ ভাঙ্গার শব্দ পাচ্ছে.বৃষ্টিও শুরু হয় সেই সময়.গ্রামবাসী সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করলো.
ফজরের আযান পর্যন্ত বৃষ্টি হয়.ঘন্টা খানিক বা ৪০ মিনিট পরপর গাছ ভাঙ্গার শব্দ হয়.সকালে একি কান্ড?
৬জন ডাকাতের মাঝে একজনও বেঁচে নেই.সাথে ৬টি গাছও পড়ে আছে সেখানে.এটা কেমনে সম্ভব??
৬জনের লাশ একই জায়গায়.আম গাছ গুলোও একই জায়গায় রাখা হয়েছে.কি উদ্ভুত সব ঘটনা ঘটছে??
আত্মা যেমন গ্রামের মানুষদের হত্যা করছে ঠিক তেমনি বাচিয়েও নিলো আজ ডাকাতের হাত থেকে..
তবে বাগানে মৃত্যুর সংখ্যা ১০জন পূর্ণ হলো.সাথে ১০টি আম গাছও একদম পড়ে গেছে.শুধু বেঁচে ফিরেছেন জজ সাহেব সাথে একটি গাছও অর্ধেক ভাঙ্গা অবস্থায় রয়েছে.
3
বাগানে মৃত্যুর সংখ্যা ১০জন পূর্ণ হলো.সাথে ১০টি আম গাছও একদম পড়ে গেছে.শুধু বেঁচে ফিরেছেন জজ সাহেব সাথে একটি গাছও অর্ধেক ভাঙ্গা অবস্থায় রয়েছে.
৬জন ডাকাতের চেহেরা গুলো বোঝা যাচ্ছে না.এমন ভাবে মেরেছে তা দেখলে একটি স্বজ্ঞান সম্পূর্ণ মানুষ হার্টএট্যাক করবে.
১০টি প্রাণ গেলো বাগানে..জজ সাহেব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন.ভেবে পাচ্ছেন না কি করবেন??
গ্রামের সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় ডাক দেওয়া হলো.সবাই উপস্থিত.মাগরিব বাদে আলোচনা শুরু..
জজ সাহেব বলেছেন আমি জানিনা আমার এই বাগান এতোটা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে কেন??
ঐ বাগানে অপরাধীদের ক্রসফায়ার বা ফাঁসি দেওয়া হতো.তবে এই অলৌকিক ঘটনা ঘটবে কে জানতো??
আমি একজন জজ.আমার কাজ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আদেশ দেওয়া.
এই অপরাধীকে কেমনে শাস্তি দিব আমি??কোনো ক্ষমতা নেই আজ আমার.ক্ষমা করবেন আমাকে সবাই.আপনাদের পাশে থাকতে পারছি না..
কিন্তু বাঁচার চেষ্টা সবার করতে হবে.সবার জন্য বিপদ.আপনারা সাবধানে থাকবেন.কদিন বাগানের দিকে যাবেন না.
তখন সবাই বললো জজ সাহেব এটা একটা ভৌতিক ব্যাপার.আমরা কি কোনো তান্ত্রিক দ্বারা চেষ্টা করতে পারিনা??
জজ সাহেব বললেন তাই হোক.ডাকা হোক তান্ত্রিক.তবে পাওয়া যাবে কই??সবাই খুজতে লাগলো তান্ত্রিক..
অন্তপুরি গ্রাম পেরিয়ে ৭টি গ্রাম পার হলে পূর্ব দিকে একটি গ্রাম রয়েছে.ওখানে একজন জ্বীন হুজুর বসবাস করেন.কারণে অকারণে মানুষের অনেক উপকার করে থাকেন তিনি..
তিনি জ্বীনদের সাথে কথা বলতে পারেন তাই ওনাকে জ্বীন হুজুর বলা হয়..অনেক ক্ষমতা তাঁর.
জজ সাহেবকে গ্রামবাসী ওনার খবর দেয়.জজ সাহেব নিজেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন..
পরের দিন সকালে জজ সাহেব বের হলেন ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে.যেতে যেতে ২গ্রাম পেরিয়ে গেলেন.ঘোড়া ক্লান্ত হয়ে গেছে.
থামলেন একটি শূন্য বাড়ীর সামনে.পাশে কোনো ঘরবাড়ি নেই.ভাঙ্গা ঘর..
জজ সাহেব পানি পান করতে ওই বাসায় ডুকতে ইচ্ছুক হলেন.যদিও জজ সাহেবের সাথে ২জন পুলিশ সদস্য রয়েছে.
জজ সাহেব বলেছেন তোমরা ঘোড়ার কাছেই থাকো আমি একটু পানির সন্ধান করি.
বাড়িতে গিয়ে বললেন কেউ আছেন??দয়া করে কেউ থাকলে বের হোন..একটু পানির দরকার..
ভিতর থেকে একটা বৃদ্ধা মহিলার কন্ঠে কেউ বলছেন ভিতরে আসো বাবা..যাওয়ার ক্ষমতা নেই আমার..
জজ সাহেব ভিতরে ডুকে অবাক হয়ে যায়.একজন বৃদ্ধা মহিলা বয়স কম হলে ৮০বছর হবে.একা একটি বিছানায় শুয়ে আছে..
মহিলাটি বললো কে বাবা তুমি?কি চাও?তখন বললো আমি অন্তপুর থেকে এসেছি.পানির জন্য আপনার ওখানে নেমে গেলাম.
মহিলাটি বললো পাশে একটি কলসি আছে ওখান থেকে খাও..
জজ সাহেব খেলেন.তারপর বললেন শুকরিয়া.জজ সাহেব প্রশ্ন করতে লাগলো ঘরে আর কাউকে দেখছি না??কেউ নেই??
তখন মহিলাটি বললেন দুঃখের কথা কি বলবো বাবা??কিছুদিন আগে ছেলেটিকে পুলিশ নিয়ে গেলো এরপর থেকে আমি একা..
জজ সাহেব অধিক আগ্রহে বললেন মা'জি একটু বলবেন পুলিশ কেন নিয়ে গেলো?এখন কই??
মহিলা বললেন জানি না বাবা এখন কই??গ্রামের সরদার সাহেবের ছেলে একটি মেয়েকে মেরে ফেলে.এই ঘটনাটি আমার ছেলের উপর চাপিয়ে দেয়.
বাবাজি আমরা গরীব মানুষ.পারিনি ছেলেকে বের করতে.কই নিয়ে গেলো জানিনা.হয়তো আর পাবো না ছেলেকে ফিরে.
বৃদ্ধা মহিলাটি আরও বললো আমার হাতে সময় নেই.আমি আর বাঁচবো না.বাবাজি তুমি আমার ছেলেকে যদি পুলিশ ছেড়ে দেয় তাহলে বলবা কবরটা জিয়ারত করতে.মানুষের মতো মানুষ হতে.
জজ সাহেব কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন..
গভীর কান্না.জজ সাহেব তাঁর চাকরি জীবনে কখনো বোঝেননি অপরাধীদের পরিবারের কষ্টটা..
আজ নিজ চোখে দেখছেন তিনি.চাকরি জীবনে শুধু রায় দিয়েছেন ফাঁসির.রায় দিয়েছেন ক্রসফায়ারের..রায় দিয়েছেন যাবত আজীবন কারাদণ্ডের.
রায় দিয়ে বাসায় এসে ঘুমিয়েছেন.আজ বুঝতে পেরেছেন আসলে জিবন কি??
একজন অপরাধ করে আইনের কাছে আটকে যায়.তবে তার পরিবার কি পরিমাণ আঘাত সহ্য করে তা আজ দেখলেন..আজ জজ সাহেব খুব অসহায়..
জজ সাহেব বলেছেন মাজি আপনি কি আমার সাথে যাবেন??বৃদ্ধা মহিলা বললেন না বাবা.শেষ নিশ্বাসটি এখানে ত্যাগ করবো.
জজ সাহেব বললেন বেশ তাই হোক.আপনার ছেলকে আমি বের করবো কথা দিলাম..এই বলে জজ সাহেব বের হয়ে যান.
জজ সাহেব ফির চলতে থাকে জ্বীন হুজুরের সন্ধানে..একের পর এক গ্রাম পেরিয়ে যাচ্ছেন.
মনে সেই বৃদ্ধা মহিলার কথা নাড়া দিচ্ছেন.ছেলেকে বের করবেন বলে বৃদ্ধা মহিলাকে কথা দিয়েছেন..তবে বের করাই লাগবে...
চিন্তা করছেন জ্বীন হুজুর কি সাহায্য করবেন??চিন্তা করতে লাগলো গ্রামবাসী কি মুক্তি পাবেন??
সবাই মুক্তিপণ দাবি করতে মরিয়া,,কেমন জীবন আজ কেমন হয়ে গেলো সবার???
জজ সাহেব মনে গভীর কষ্ট নিয়ে চলতে থাকেন জ্বীন হুজুরের কাছে..জজ সাহেবের মনে হাজার প্রশ্ন..
শেষ পর্যন্ত পারবেন কি সমাধান করতে??পারবেন কি বৃদ্ধা মহিলাকে সাহায্য করতে??
এভাবে পেরিয়ে গেলেন ৬টা গ্রাম.বাকী একটা মাত্র গ্রাম.এই গ্রামের পেরোলে মিলবে জ্বীন হুজুরের সন্ধান.
রাত হয়ে গেলো সেখানে.জজ সাহেব ক্লান্ত.মনে হাল্কা খুশি কারণ আগামীকাল হয়তো সফলতার দেখা পাবেন.
ভাবতে ভাবতে চলে গেলেন গভীর ঘুমে..ঘুমে স্বপ্ন দেখতে লাগলেন ওনার মৃত ছেলে আবিরকে.যে বাগানে প্রাণ হারিয়েছে.ছেলে বলছেন বাবা তোমার কর্মকান্ডের জন্য আজ আমি অকালে হারিয়ে গেছি.
বাবা আমাকে যে মেরেছে তার কোনো দোষ নেই.এটা আমার নিয়তি.পরের ছেলেকে তোমরা যেভাবে মেরে ফেলো সেভাবে এখন উপলব্ধি করো নিজের ছেলেকে হারিয়ে..
কি হয়ে গেলো বাবা এসব??খুব মিস করছি সবাইকে..হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গে জজ সাহেবের..
চিৎকার দিয়ে কান্না করতে লাগলেন জজ..আমার ছেলে আমার ছেলে বলে কান্না করছে..দুই পুলিশ সদস্য বললো স্যার কি হয়েছে আপনার??
ঘুমানোর আগে তো খুব হাসিমুখ দেখলাম.হঠাৎ এমন করছেন কেনো??
জজ সাহেব চোখে পানি ফেলে বলতে লাগলেন এইসব তোমাদেরকে বোঝাতে পারবো না.বুকটা ছিড়ে যাচ্ছে আজ..
সেদিন আত্মা মেরে দিলেই হয়তো শান্তি পেতাম.জানি আত্মা আমাকে তিলে তিলে কষ্ট দিতে বাচিয়ে রেখেছে সেদিন.
এই ঘটনার শেষটা যেন আমার মৃত্যু দিয়ে হয়..
রাত পেরিয়ে সকাল হলো..আবার চলতে চলতে পৌঁছে গেলেন জ্বীন হুজুরের গ্রামে.এই গ্রামের মানুষ গুলো কতই সুখী দেখেই বোঝা যাচ্ছে.
জজ সাহেব একজনকে ডেকে বললেন ভাই জ্বীন হুজুর কই থাকেন??মানুষটি বললো আসুন বলে নিয়ে যায় হুজুরের কাছে.
জজ সাহেব ভিতরে ডুকে বললো কেউ আছেন?আমি অনেক দূর থেকে এসেছি হুজুর আপনার সন্ধানে.
প্লিজ একটু দেখা দিন.ভিতরে ঢুকতে দরজা বন্ধ হয়ে গেলো.অন্ধকারে সামান্য সামান্য আলো জ্বলছে.অবশেষে দেখা মিললো হুজুরের.বসে আছেন একটি জায়গায়..
ধ্যান ধরেছেন হুজুর.একটু পর হুজুর বললেন কি চাস??কেন এসেছিস এখানে??
জজ সাহেব বললেন সব ঘটনা..তখন হুজুর বললো ঠিক আছে আমি তুদের সাহায্য করবো তবে এখান থেকে সম্ভব না..
তুই তোর গাঁয়ে ফিরে যা.আমি সময় মতো পৌঁছে যাবো..জজ সাহেব খুব খুশি.হুজুর যেতে রাজি হয়েছেন.
খুশি মনে ৭গ্রাম পেরিয়ে পৌঁছে গেলেন নিজের গ্রাম অন্তপুরিতে..গ্রামবাসী চেয়ে আছেন ওনার অপেক্ষায়.
ততো দিনে মৃত্যু হয়েছে বাগানে অনেকের..জজ সাহেব অপেক্ষায় রইলেন জ্বীন হুজুরের..
কখন আসবেন??কিভাবে বাঁচাবেন??পারবেন কি বাঁচাতে??প্রশ্ন যেন গভীর সমুদ্রে পরিনত হয়েছে..
দিন পেরিয়ে রাত হলো.আজ অন্যরকম অন্তপুরিতে মানুষ বসবাস করছেন..চারিদিকে চিৎকার..কান্নাটা পুরো গ্রাম জুড়ে.
সারারাত কান্না.বাগানের চারপাশ কান্নাতে ভারী হয়ে গেছে..গ্রামটা কান্নার আওয়াজে দূষিত হয়ে গেছে.
কোনো উত্তর নেই জজ সাহেব আর গ্রামবাসীর.আছে শুধু প্রশ্ন.কোনোমতে সকাল হলো..
জজ সাহেব চারিদিকে খবর দিয়ে রেখেছে বৃদ্ধা মহিলার ছেলেকে খুঁজার.সব কারাগারে খবর দিয়েছেন..তবে নিজের দায়িত্বরত কারাগারে খবর দেননি.
৭দিন পার হলো..৭দিন পর্যন্ত কারো মৃত্যু নেই তবে কান্নাটা রাতের বেলায় গভীর হয়.বোঝা যাচ্ছে না ব্যাপারটা.
৭দিন পর খবর এলো বৃদ্ধা মহিলাটি মৃত্যু বরণ করেছেন.
জজ সাহেব পারলেন না বৃদ্ধার ছেলেকে বের করে দিবে বলে দেয়া কথা রাখতে.জজ সাহেব ভেঙ্গে পড়েছেন খুবই..এদিকে জ্বীন হুজুরও এসে পড়েছেন অন্তপুরিতে..
4
জজ সাহেব বৃদ্ধা মহিলার ছেলের খবর পাচ্ছেন না.এদিকে বৃদ্ধা মহিলাও মৃত্যু বরণ করেছেন বলে খবর পেয়েছেন.
জ্বীন হুজুরও চলে এসেছেন অন্তপুরিতে..
মানুষ চেয়ে আছেন জ্বীন হুজুর আত্মার হাতে থেকে সবাইকে মুক্তি পাইয়ে দিবেন বলে.
জজ সাহেব চেয়ে আছেন বৃদ্ধা মহিলাকে দেওয়া কথা রাখতে ওনার ছেলেকে ফিরিয়ে দিবেন বলে.কিন্তু খবর পাচ্ছেন না সামান্য একটি ভুলের কারণে??
কি ভুল সেটা?সামান্য ভুলের কারণে একজন জজ হয়েও পাচ্ছেন না কারাগারে নিয়ে যাওয়া একটি ছেলের খবর সেটা কি মেনে নেওয়া যায়.
এদিকে আত্মা ১সপ্তাহ ধরে কাঁদছেন।হুজুর রাতের বেলায় সেখানে গেলেন.যাওয়ার সময় জ্বীন শক্তি দ্বারা নিজেকে সুরক্ষণ করে গেলেন.
এখন আত্মা হুজুরকে আক্রমণ করতে পারবেন না.হুজুর বাগানে প্রবেশ করা মাত্র বৃষ্টি নেমে আসে..
বাতাস বইছে...চেচামেচি শুরু হয়ে গেছে..রাগান্বিত শব্দে কেউ একজন বলছে চলে যান এখান থেকে..
হুজুর যেহেতু জ্বীন শক্তি নিয়ে সেখানে গেছেন সেহেতু আত্মা কিছুই করতে পারছেন না হুজুরকে.
তখন আত্মা আত্মসমর্পণ করে বলে-
আমাকে আমার কাজ করতে দিন..হুজুর তখন বললো চিনে ফেলেছো তাহলে??
আত্মা বললো না চেনার কি আছে??
তখন হুজুর বললেন তুমি আমাকে বলো কি চাও তুমি??আত্মা বললো মুক্তি চাই..প্রাণের বদলে প্রাণ চাই.সব মানুষ মেরে ফেলতে চাই.
হুজুর রেগে গিয়ে বললেন তাতে তোমার লাভ কি??আত্মা উল্টো রেগে বললো আমাকে মেরে ফেলেছে তাতে তাদের লাভ কি??
হুজুর বললেন তুমি আমাকে বলো কি হয়েছে তোমার সাথে??অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হবে.নয়তো তোমাকে আমি বন্দি করবো..
তখন আত্মা বললো হুজুর অন্তপুরি পেরিয়ে ২গ্রাম পার হলে আমার গ্রাম.বাড়িতে বৃদ্ধা মা ছিলো.
হঠাৎ একদিন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম দেখলাম একটা মেয়েকে এলাকার সরদার সাহেবের ছেলে মেরে ফেলে দিচ্ছে রাস্তার পাশে.
দৌড়ে গিয়ে তাকে বললাম কি করলি তুই এটা.আমি গ্রামবাসীকে বলে দিবো সব.তখন সেখানে মারামারি হয় আমার সাথে.
একপর্যায়ে জ্ঞান হারায় সেখানে.২ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরলো তখন লাশ দেখে ভয়ে চলে আসি বাসায়.মাকে সব বলি রাতে.
পরের দিন সকালে পুলিশ এসে আমাকে খুনি বানিয়ে নিয়ে যায়.এর পর আমাকে এই অন্তপুরির কারাগারে আনা হয়..
আমার প্রথম শিকার ছোট ইমনের বাবা টাকা খেয়ে স্বাক্ষী দেয় আমি খুনি বলে..তাই ইমনকে মারি তার বাবাকে শিক্ষা দিতে।
এরপর জজ মীর্জা সাহেবের বিচার কার্য্যে আমাকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়।
আমাকে ফাঁসির জন্য এই আম বাগানে আনা হয়.পুলিশ সুজন সাহেব সহ ৬জন আমাকে এখানে আনেন.
ফাঁসির আগে বলেছি হাজার বার আমি অপরাধী নয়..তখন সুজন সাহেব বলেন জানি তুই অপরাধী নয় তবে টাকার কাছে তুই অপরাধী..
টাকা পেয়েছি অনেক.সুতরাং তুই অপরাধী..তখন বললাম স্যার আমাকে মৃত্যুর আগে অসুস্থ মাকে দেখতে দিন..
সুজন সাহেব বললেন সম্ভব না.এই বলে আমাকে অনেক মারধর করে শেষ পর্যন্ত এখানে ফাঁসি দেয়..তো বন্ধুরা এতক্ষণে জানা হলো কি বৃদ্ধা মহিলাটা কে ছিলো??জিনি জজ সাহেবের সাথে দেখা করার পর মারা গেলেন?তিনি ছিলেন আত্মা ছেলোটির মা।
আত্মা তারপর বললো হুজুর আমি মৃত্যুর সময় আল্লাহর কাছে চেয়েছিলাম মৃত্যুর পর হলেও যেন এই জানোয়ার গুলোর শাস্তি হয়..
তখন আত্মা হয়ে উঠি এই বাগানে..একের পর এক মানুষ মারতে থাকি প্রতিশোধের নেশায়।
সাথে একটা একটা গাছও ভেঙ্গে ফেলি কারণ লাশের সংখ্যা হিসাব রাখতে গাছ গুলো ভাঙ্গি.ভেবে ছিলাম ৯৯টা খুন করবো তারপর আত্মাটা শান্তি পাবে.
জজ সাহেবকে মারিনি কারণ শেষ পর্যন্ত মৃত্যু গুলো দেখাতে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম..
আত্মা হওয়ার পর রোজ মাকে দেখতে যেতাম.১সপ্তাহ হলো মা মারা গেলো.
বাকী কিছু রইলো না আমার..কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি।এসব শুনে হুজুরের চোখ থেকে পানি পড়ছে.হুজুর বললেন এখন তুমি মানুষ মেরে কি শান্তি পাচ্ছো??
আত্মা বললো না পাচ্ছি না তবে আমি মুক্তি চাই..তখন হুজুর বললেন ঠিক আছে মুক্তি মিলবে তোমার..
জজ সাহেবকে হুজুর পুরো ঘটনা খোলে বললেন তখন জজ সাহেব কান্না করে বললেন বৃদ্ধা মহিলার ছেলেটি তাহলে এই আত্মা??
নিয়তি বড় অদ্ভুদ..আমি বৃদ্ধা মহিলাকে দেখেছি..কথা দিয়ে ছিলাম ছেলেকে ফিরিয়ে দিবো, পারলাম না.আইন আজ নিজের কাছে ঘৃণিত হয়ে গেলো।
হুজুর আপনি বলুন কি করলে সবাই মুক্তি পাবো??আত্মাকে কেমনে মুক্তি দিবো??তখন হুজুর বললেন ছেলেটির গ্রামের সেই সরদার সাহেবের ছেলেকে ফাঁসি দেওয়া হোক এই গ্রামে..
২দিন পর সরদার সাহেবের ছেলেকে সেই আম বাগানে ফাঁসি দেওয়া হয় প্রকাশ্যে.
এর পর ৭গ্রামে ঘোষিত করা হয় সেই আত্মা ছেলেটি খুনি নয়.সে একজন সৎ ছেলে..আইনি মর্যদা দেওয়া হয় তাকে..
অবশেষে জজ সাহেব চাকরি থেকে অব্যাহতি নেয়..
আত্মাও খুশি মনে মুক্তি পাই.মুক্তিপন গল্পে একজনের দোষ চাপাতে গিয়ে কতজন দোষি হলো.অনেক নিষ্পাপ প্রাণ গেলো..
অবশেষে মুক্তি মিললো আত্মার,,,
মুক্তি মিললো জজ সাহেবের,,,
মুক্তি মিললো অন্তপুরির মানুষদের..
শাস্তি পেলো পুলিশ অফিসার..
শাস্তি পেলো সরদার সাহেবের ছেলে.
মরতে হলে আবির সাহেবকেও।মরতে হলো
১০বছরের ছোট বাচ্চাকে শুধু মাত্র বাবার মিথ্যা সাক্ষীতে।
অবশেষে অন্তপুরির মানুষের মাঝে ফিরে এলো সুখ শান্তি..
(সমাপ্ত)
0 Comments