- রুদ্র, কালকে নাকি আমাকে দেখতে আসবে । - হ‍্যা, তো কি হয়েছে ? - কি হয়েছে মানে ? আমাকে বিয়ের জন্য দেখতে আসবে । - দেখতে তো আসবেই । এতো বড় হয়েছো । অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী । বিয়ের বয়স হয়েছে না ? - তুমি কি পাগল হয়ে গেছো ? যদি কালকে আমাকে পছন্দ করে ফেলে ? - পছন্দ করে ফেলে মানে ? তোমাকে পছন্দ করতেই হবে । এতো সুন্দর একটা মেয়ে তুমি । একশোবার পছন্দ করবে । - এসবের মানে কি ? আমার বিয়ে হয়ে যাবে আর তোমার কি হবে ? আমাকে ছাড়া তুমি থাকতে পারবে ? - খুব পারবো । না পারার কি আছে ? - আরেকবার বলতো কি বললে ? ভালো করে শুনতে পাইনি । - তুমি বাসায় চলে যাও । সন্ধ্যা সাতটা বাজে । কালকে তোমাকে দেখতে আসবে । এতো রাত পর্যন্ত বাইরে থাকলে এলাকার মানুষ খারাপ কথা রটিয়ে সম্পর্ক নষ্ট করে দিবে । - রুদ্র !! আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না । - মেঘ , এগুলো শুধু কথার কথা । তুমি আমাকে ছাড়া ঠিকই থাকতে পারবে । একসময় আমকে ভুলেও যাবে । - না পারবো না । চলো আমরা পালিয়ে বিয়ে করে ফেলি । - স‍্যরি মেঘ । আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না । - কেন বিয়ে করতে পারবে না ? - বিয়ে করলে তোমাকে খাওয়বো কি ? সংসারের খরচ,পড়ালেখার খরচ কে দিবে ? - সেটা পরে দেখা যাবে নে । একবার বিয়ে করে ফেললে তখন আর কেউ কিছু বলতে পারবে না । - তোমার পরিবারের অমতে আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না । স‍্যরি মেঘ । - তাহলে এখন কি হবে ?? আমাদের দেখা স্বপ্ন গুলোর কি হবে ?? এতো সহজেই সব ভেঙে যেতে দিবো ? - ওগুলো মিথ্যা স্বপ্ন মনে করে ভুলে যাও । মনে করো একটা স্বপ্ন দেখছিলা । হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে গেছে । - যতটা সহজে বললে তত সহজে ভুলে যেতে পারবে ? - পারতে হবে । তাছাড়া আর কিছু করার নেই । মেঘ ডুকরে কেদে ওঠে । রুদ্র এমন করবে এটা ও কখনো ভাবে নি । ছেলেটা কতোই না ভালো বাসতো ওকে । সত‍্যিই কি এখন কিছুই করার নেই ?? গত দুইদিন কোথাও বের হই নি । কি জানি কখন মেঘের সাথে দেখা হয়ে যায় । মেঘের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । পাত্রপক্ষ মেঘকে দেখেই পছন্দ করে নিয়েছে !! পাত্র আমেরিকায় সেটেলড । দেখতে সুদর্শন, ভালো জব করে, নাম রাতুল । আদনানকে দিয়ে বিয়ের কার্ড পাঠিয়ে দিয়েছে মেঘ । আদনান অনেক বারণ করছিলো কিন্তু আমি তো যাবোই । প্রেমের শেষটা দেখে আসি নিজের চোখে !! বিয়ে পড়ানোর আমি একেবারে সামনের দিকে চেয়ারে বসে ছিলাম । অনেক কষ্টে দাতে দাত চেপে সব দেখছিলাম । কবুল বলার সময় মেঘ আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল তাই আমি ওখান থেকে ওঠে চলে এলাম ! আমার আর কিছুই রইলো না এই পৃথিবীতে । ছোট বেলায় বাবা মা কে হারিয়ে যে কষ্ট আমার মধ‍্যে ছিল সেটা মেঘের আসার পর অনেকটা কমে যায় । কিন্তু এখন আমি সম্পূর্ণ একা হয়ে গেলাম । আর এখন একা হলেই বা কি ?? আমি তো নিজেই মেঘকে ফিরিয়ে দিয়েছি আমার এই অল্প সময়ের অভিশপ্ত জীবন থেকে । আমার হাতে সময় অনেক কম । এক মাস আগে আমি জানতে পারি আমার লিউকেমিয়া হয়েছে । তখন থেকেই বারবার চেষ্টা করেছি মেঘকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন‍্য !! কিন্তু ওর প্রতি মায়াটা এতো তীব্র ছিল যে কিছুতেই ওকে দূরে সরাতে পারছিলাম না !! সেদিন বিয়ের কথা না ওঠলে কিভাবে যে কি করতাম একমাত্র আল্লাহ জানে । চাইলে মেঘকে বিয়ে করতে পারতাম, কিন্তু আর হয়তো একমাসও সময় নেই হাতে । এই অল্প সময়ের জন্য ওকে আমার জীবনে জড়িয়ে ওর জীবনটা কিভাবে নষ্ট করতাম ?? মেঘের বিয়ে হয়ে গেছে, সবার চাপে শেষ পর্যন্ত কবুল বলেছিল । যাক আলহামদুলিল্লাহ । বিয়েটা তো হয়েছে । আজকে ওর ফ্লাইট । ওর স্বামী ওকে নিয়ে আমেরিকা চলে যাবে । ভালোই হবে, আর কখনো দেখা হবে না । দেখা হলেই পুরনো কথা মনে পড়বে যা আমি চাইনা । ওর পরিবারের সবাই ওকে বিদায় দিতে এসেছে । আমি দূর থেকে ওকে দেখছি । ওর চোখ দুটো হয়তো আমাকে খুজছে । কিন্তু আমি ওর সামনেই যেতে চাইনা । কিছুক্ষণ পরেই বিমান ছাড়বে । মেঘ চলে যাবে অনেক দূরে । আর দেখা হবে না কখনোই । এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তা ধরে হাটছি । রাত ৮টা ৩১ এ বিমানটা টেক অফ করলো । আমি বিমানের দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে বললাম, "ভালো থেকো মেঘ" ।